তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে এশিয়াটিক সোসাইটির এক মহিলাকর্মী পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল ওই সংস্থার কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এখন ওই মহিলা রাজ্যপাল-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করছেন, থানায় দায়ের করা অভিযোগ তুলে নিতে তাঁকে চাপ দিচ্ছেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক।
পুলিশ জানায়, ওই মহিলা এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগার বিভাগের অস্থায়ী কর্মী। ২০১৪-র ডিসেম্বরে লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, চাকরি পাকা করার টোপ দিয়ে সংস্থার কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদক অশেষরঞ্জন মিশ্র তাঁকে একাধিক বার যৌন হয়রানি করেন। মহিলার আরও অভিযোগ, ওই সম্পাদক তাঁর মোবাইলে অশ্লীল এসএমএসও পাঠান।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ২২ জানুয়ারি অশেষবাবু আগাম জামিন নেন। মহিলা বলেন, “অশেষরঞ্জন মিশ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর অস্ত্, অবসরের পরে তাঁর চাকরির মেয়াদ বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছেন এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি আমাকে একাধিক বার ডেকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন।” অশেষবাবুর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে। এখন তিনি এক্সটেনশনে রয়েছেন, যা মঙ্গলবার আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। সোসাইটির যৌন হয়রানি নিরোধক কমিটিও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায় বলেন, “মহিলার বক্তব্য ঠিক নয়। কোনও যৌন হয়রানির অভিযোগও তিনি আমাকে জানাননি।” ওই মহিলার অবশ্য বক্তব্য, “সাধারণ সম্পাদক মিথ্যা কথা বলছেন।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ওই মহিলা এশিয়াটিক সোসাইটিতে ২০০৯ সালে অস্থায়ী চাকরি পান। ২০১২ সালে ‘লাইব্রেরি ইনফরমেশন অ্যাসিন্ট্যান্ট’ পদে আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে অনেকের পরামর্শে যোগাযোগ করেন অশেষবাবুর সঙ্গে। মহিলার অভিযোগ, “প্রথম দিন অশেষবাবু আমাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ফোন করতে বলেন। কথামতো ওঁকে ফোন করি। আমাকে নিয়মিত ফোন করতে বলেন। সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক দিন আমার অফিসেও চলে আসেন। অশ্লীল ভাষায় এসএমএস করেন।” ওই মহিলা জানান, “অশেষবাবুকে উপেক্ষা করতে থাকলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমাকে উপেক্ষা করলে চাকরি হবে না। যদিও অন্য ব্যক্তি চাকরি পান।” ঘটনার পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। লজ্জায়, অবসাদে ১৯ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি অফিসে আসেননি। এখন অফিসে এলেও আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। অশেষবাবুর বক্তব্য, “যা বলার সাধারণ সম্পাদক বলবেন। আমি কিছু মন্তব্য করব না।”
মঙ্গলবার ছিল এশিয়াটিক সোসাইটির কাউন্সিলের বৈঠক। সোসাইটি সূত্রে খবর, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের চার প্রতিনিধির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও অভিযুক্তের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। তবে স্থির হয়েছে সুপ্রিয় কোর্টের বিশাখা নির্দেশিকা অনুযায়ী কমিটি গঠন করে দু’মাসের মধ্যে এই অভিযোগ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy