আকাশ থেকে বিমান নিয়ে নেমে আসার মুখে পাইলট হঠাৎ দেখতে পেলেন, রানওয়েতে এক জন হেঁটে বেড়াচ্ছেন!
ওই অবস্থায় ১৬৫ জন যাত্রীকে নিয়ে বিমানটি কলকাতার মাটি ছুঁলে শুক্রবার দুপুরে ঘটে যেতে পারত বড়সড় দুর্ঘটনা। বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় নামার পথে তখন মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ছিল স্পাইসজেটের ওই বিমান। হঠাৎ ওই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে গিয়ে পাইলট বিষয়টি জানান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটির মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে উড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে।
এই ঘটনাকে বড়সড় নিয়ম লঙ্ঘন বলে মেনে নিচ্ছে ভারতে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)। তড়িঘড়ি ঘটনাটির তদন্তে নেমে পড়েছে তারা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে প্রধান রানওয়েতে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। তা বন্ধ রেখে বিমান ওঠানামা করানো হচ্ছিল দ্বিতীয় রানওয়ে দিয়ে। রানওয়ের যে দিকে মধ্যমগ্রাম, সেই দিক দিয়ে নেমে আসছিল একের পর এক বিমান। দুপুর ১২টার পরে স্পাইসজেটের ওই বিমান চলে আসে মধ্যমগ্রামের মাথায়। রানওয়ে পরিষ্কার এবং তিনি নিশ্চিন্তে নেমে আসতে পারবেন, এটিসি-র কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়ে পাইলট বিমান নিয়ে চলে আসেন দ্বিতীয় রানওয়ের আরও কাছাকাছি। এই সময়ে বিমানের যা গতিবেগ থাকে, তাতে সাড়ে তিন কিলোমিটার পেরোতে তার এক মিনিটেরও কম সময় লাগার কথা।
ঝকঝকে আকাশ থেকে পরিষ্কার রানওয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন পাইলট। আচমকাই তিনি দেখেন, কে যেন রানওয়ে পেরিয়ে যাচ্ছেন। এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। মুখ ঘুরিয়ে গতি বাড়িয়ে আবার আকাশে উঠে যায় বিমান। এক চক্কর ঘুরে ১০ মিনিট পরে দ্বিতীয় রানওয়েতে নির্বিঘ্নে নামানো হয় বিমানটি।
কিন্তু পাইলট যদি রানওয়ের ওই ব্যক্তিকে আরও কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করতেন, যখন বিমান আরও নেমে এসেছে, তখন সেটিকে আর ফেরানো যেত না। ঘটতে পারত বড় অঘটন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, যিনি রানওয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই এস এন মুর্মু বিমানবন্দরেরই কর্মী। রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি পাখি তাড়ানোর কাজ করছিলেন। কিন্তু এ ভাবে তিনি কেন রানওয়ে পেরিয়ে গেলেন, তার সদুত্তর মেলেনি। যে রানওয়ে দিয়ে বিমান ওঠানামা করে, সেই রানওয়েতে ঢোকা যায় না, এটা বিমান পরিবহণের প্রাথমিক শর্ত। প্রশ্ন উঠেছে, এত বছর ধরে চাকরি করা বিমানবন্দদের ওই কর্মী কি সেই নিয়ম জানতেন না? নাকি জেনেশুনেই তিনি ঢুকে এসেছিলেন রানওয়েতে?
কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ঘটনার পরেই কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত ওই কর্মীকে।
প্রচণ্ড গতিতে নেমে আসা বিমানের সঙ্গে সামান্য কোনও বস্তুর ধাক্কা লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যেতে পারে বিমানে। মারা যেতে পারেন প্রত্যেক আরোহী। তাই রানওয়েতে একটি শেয়াল বা কুকুর চলে এলেও তাদের হটিয়ে দিয়ে তবেই বিমান ওঠানামা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিমান নামানোর সময়ে শেয়াল-কুকুর ঢুকে পড়ার ঘটনা কলকাতা-সহ সমস্ত বিমানবন্দরেই ঘটে থাকে। কিন্তু রানওয়েতে এ ভাবে এক জন কর্মীর ঢুকে আসার ঘটনা বিরল। তবে কি কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে খামতি ছিল? বিমানবন্দরের এক কর্তার কথায়, “এই কর্মীদের নিয়োগ করা হয় পাখিদের উপরে নজরদারি করতে। এঁদের উপরে কী করে নজরদারি করা সম্ভব? তা হলে তো প্রতিটি কর্মীর পিছনে এক জন কর্মীকে নিয়োগ করতে হয়।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রানওয়ের দু’পাশে দাঁড়িয়ে পাখি তাড়ানোর কাজ করেন এঁরা। এক সময়ে বন্দুক ব্যবহার করা হত। এখন শুধু পটকা ফাটিয়ে পাখি তাড়ানোর কাজ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বিমানবন্দরে এই কাজে নিযুক্ত ছিলেন, ঠিকাদারের অধীনে থাকা সেই কর্মীদের গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় আনা হয় কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কর্মীদের। অভিযুক্ত ওই কর্মীও ছিলেন সেই দলেই। এঁরা দীর্ঘদিন কর্তৃপক্ষের চৌকিদার ছিলেন।
জানা গিয়েছে, কলকাতায় নতুন টার্মিনাল তৈরির পরে এবং বাইরের সংস্থাদের দিয়ে কাজ শুরু করার পরে এই চৌকিদারেরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েন। বসে বসে বেতন নেওয়ার পরিবর্তে তাঁদের দিয়ে কিছু করানোর প্রস্তাব তোলে ইউনিয়ন। তখনই অভিজ্ঞ পাখি-তাড়ুয়াদের সরিয়ে এঁদের এই কাজে নিযুক্ত করেন কর্তৃপক্ষ।
এক শ্রেণির কর্মীর অভিযোগ, এই চৌকিদারেরা আগে রানওয়ের পাশে কাজ করেননি। নিয়মকানুন সম্পর্কে তাঁরা সড়গড় নন। অভিযুক্ত এই কর্মীর অবসর নেওয়ার কথা বছর চারেকের মধ্যে। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy