E-Paper

স্মৃতি ছুঁয়েই পুজোর আয়োজনে বৃদ্ধাশ্রম

নীলিমা জানান, স্বামী অনিল দাস হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার আবাসনে ছিল সুখের সংসার। এক দশক আগে স্বামী মারা গিয়েছেন।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৬
রূপনারায়ণপুরের বৃদ্ধাশ্রমে পুজোর আয়োজন। ছবি: পাপন চৌধুরী।

রূপনারায়ণপুরের বৃদ্ধাশ্রমে পুজোর আয়োজন। ছবি: পাপন চৌধুরী।

কত হইচই। কত প্রস্তুতি। সে সব দিন অতীত।

কথাগুলো বলতে বলতেই কিছুটা ফুঁপিয়ে উঠলেন নীলিমা দাস। তার পরে আবার হাত লাগালেন পুজোর কাজে।

পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনির রূপনারায়ণপুরে দাতব্য বৃদ্ধাশ্রমে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করার ফাঁকে নীলিমার মতো ২৬ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মুখে ঘুরেফিরে এল তাঁদের বাড়ির পুজোর কথা। আলপনা দেওয়া, পুজোর নৈবেদ্য সাজানোর ফাঁকেই চলল স্মৃতি রোমন্থন।

নীলিমা জানান, স্বামী অনিল দাস হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার আবাসনে ছিল সুখের সংসার। এক দশক আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমার আর কেউ নেই। এখন এই বৃদ্ধাশ্রমই আমার বাড়ি। আবাসনের পুজোর স্মৃতি ঝালিয়ে নিচ্ছি এখানের পুজোয়।” কেব্‌লসেরই প্রাক্তন কর্মী ছিলেন কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। জয়ন্তের মৃত্যুর পরে দুই ছেলের সংসারে থাকতেন কৃষ্ণা। পরে ঠাঁই হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে। তাঁর কথায়, “আবাসনে লক্ষ্মীপুজোর দিন কত হইচই, আনন্দ হত। আত্মীয়স্বজন আসতেন। সকলেই ভাল আছেন। আমরাই বা কেন পুজোর দিন মনমরা থাকব?”

মনমরা থাকতে চান না চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার প্রাক্তন কর্মী অপু রায়চৌধুরীও। জানালেন, কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় চোখের দৃষ্টি হারান। তাঁর চাকরি পান স্ত্রী। ধরে আসা গলায় অপু বলেন, “এর পরেই পরিস্থিতিটা কেমন যেন পাল্টে গেল। ঘর-সংসার ছেড়ে এখানে এলাম। মা-বাবার সংসারে লক্ষ্মীপুজোর দিনটা বড্ড মনে পড়ে। যত দিন ক্ষমতা ছিল, নিজের সংসারেও তা করেছি। এ বার সেই অনুভূতিটাই যেন ফিরে পেলাম।”

স্মৃতি-সত্তা-বর্তমানের এমন আখর সাজিয়েই শনিবার লক্ষ্মীপুজো করলেন এই আবাসিকেরা। শুক্রবার তাঁরা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে পুজো করার কথা জানান তাঁরা। কর্তৃপক্ষ না করেননি। এ দিন কর্তৃপক্ষের তরফে পুজো আয়োজনের তত্ত্বাবধান করেন সুভাষ মহাজন। তিনি জানান, আবাসিকদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। রাতে পুজো শেষ বিশেষ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়।

গত চার বছর ধরে রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্তান কেব্‌লস আবাসন কলোনিতে চলেছে এই বৃদ্ধাশ্রমটি। বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে প্রথম বারের লক্ষ্মীপুজোয় মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে-শুনতে আবাসিকদের অনেকের চোখই ঝাপসা হয়ে এল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy