Advertisement
E-Paper

যাদবপুর-কাণ্ডে তপ্ত রাজনীতি পথে বাম, পাল্টা সরব তৃণমূল, হুঙ্কার বিজেপির

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র অনুষ্ঠান ঘিরে ধুন্ধুমারের পরে এই ভাবেই উত্তপ্ত হল রাজনৈতিক বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ০৬:১০
বামেদের প্রতিবাদ মিছিল।

বামেদের প্রতিবাদ মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

তাঁর গাড়ির ধাক্কায় এক ছাত্রের আহত হওয়ার ঘটনার জেরে শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে হবে, এই দাবিতে রাজ্য জুড়ে পথে নেমে গেল বামেরা। পক্ষান্তরে, বাম ও অতি-বামের ‘বিশৃঙ্খলা’র বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি এল শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের তরফে। বাম ও তৃণমূলের এই সম্মুখ সমরের আবহে বিজেপি আবার দু’পক্ষের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’র তত্ত্ব আনছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুঙ্কার, ‘‘বাংলার মানুষ শুধু আমাদের পুলিশটা হাতে তুলে দিক। সেকু-মাকু, ওই দু’টোকেই উপড়ে ফেলে দেব! এক ঘণ্টা লাগবে!’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র অনুষ্ঠান ঘিরে ধুন্ধুমারের পরে এই ভাবেই উত্তপ্ত হল রাজনৈতিক বিতর্ক। দিনভর মিছিল, বিক্ষোভ, অবরোধে সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার রাজ্য জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই। ধর্মঘটের আহ্বান করেছে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-ও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ থেকেই। এই প্রেক্ষিতে রবিবার রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ‘দুর্ভাগ্যের, কালই একটি রাজনৈতিক সংগঠনের তরফে রাজ্য জুড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের প্রতিকূলতায় ফেলে, এমন কোনও কর্মসূচিই ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে হতে পারে না’। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সব রকমের ব্যবস্থার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক অবস্থান’ নেওয়ার পাল্টা অভিযোগে সরব হয়েছে বামেরা।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, কলতান দাশগুপ্ত-সহ বাম যুব ও ছাত্র নেতৃত্ব। মিছিল শেষে থানার সামনে সভায় পুলিশ-কর্তাদের উদ্দেশে সেলিম বলেছেন, ‘‘ওঁরা জানেন না যে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারেই পড়ে না! ছাত্রেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মন্ত্রীর গাড়ি না-ধরে ছাত্রদের ভয় দেখাচ্ছেন!’’ ধর্মঘট সফল করার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ছাত্রদের পরামর্শ দিয়েছেন সুজন। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে সংগঠনের তরফে হেল্পলাইন নাম্বার দিয়ে জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় রাস্তায় থাকবেন তাঁদের কর্মীরা।

বিক্ষোভকারীদের ধাক্কা, ঘুষি, ইটের ভয়ে তাঁর চালক ঘাবড়ে গিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তাঁর মতে, ছাত্রের আহত হওয়া কাম্য ছিল না। তবে একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘গুন্ডামি’ করতে চেয়েছিল এক দল। তিনি ছাত্রদের দাবিপত্রের জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন বলে দাবি করে ব্রাত্য বলেছেন, “ওঁরা ঘেরাও করতে চাইছিলেন, তাতে অসুবিধা ছিল না। তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের মারধর, তৃণমূলের মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর, এগুলো হতেই পারে? রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল ভাববেন না! আমরা রাজনৈতিক ভাবেই লড়তে চাই।” তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ভাঙচুরের ঘটনা সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই ঘটায়নি।

যদিও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার দায় সিপিএম এবং বাম-অতি বামের উপরেই চাপিয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, “গুন্ডাবাজি! যোগীর রাজ্যে করলে হাড়গোড় ভেঙে দিত! রাস্তায় ধাক্কা মেরে দাঁড় করিয়ে বলবে আমার সঙ্গে কথা বলুন, এটা গণতান্ত্রিক উপায়?” গাড়ির সামনে দৌড়তে গিয়ে গাড়ির কোনও ‘বাম্পার’ লেগে এক ছাত্র জখম হয়েছেন জানিয়ে তাঁর আরোগ্য-কামনাও করেছেন ফিরহাদ।

পাল্টা উত্তরপ্রদেশে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার উদাহরণ টানছে বামেরা। সিপিএম নেতা সুজনের দাবি, ‘‘ছাত্র খুনের চেষ্টায় শিক্ষামন্ত্রীর নাটকবাজি ধরা পড়ে গিয়েছে! ছাত্রদের উপরে গাড়ি চালিয়ে দিলেন? নেমে কথা বলা যেত না? লখিমপুরের মতোই জঘন্যতম ঘটনা। আর মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন? হয় সমর্থন করে পদোন্নতি দিন, তা না-হলে অপরাধ মেনে নিয়ে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করুন!’’ আহত ছাত্রকে এ দিন হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন সিপিএমের সেলিম, সৃজনেরা। পাশাপাশি, এসএফআই দাবি করেছে, যে গাড়িতে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ব্রাত্য, সেটির দূষণ-বিধি ভঙ্গ হয়েছে।

‘ক্যাম্পাসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে’র অভিযোগ তুলে নানা জায়গায় পথে নেমেছিল এসএফআই। বর্ধমানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে এসএফআই নেতা-কর্মীদের। যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল করেছে ডিএসও। ঘটনার প্রতিবাদে বারাসত থানার ভিতরে ঢুকে মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের ছাত্র ও যুব সংগঠন।

এই পরিস্থিতিতে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েও তৃণমূল-বাম ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগ তুলে আজ গোলপার্ক থেকে যাদবপুর ৮বি পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা। উলুবেড়িয়ায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন ক্ষমতায় আছেন, তত দিন ওখানে(যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) সেকু-মাকুরা আছে। ওরা দেশদ্রোহী, টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং! ভোট এলেই ওরা বলে ‘নো ভোট টু বিজেপি’।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “শিঙ্গাঙ্গনের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী সরকার। কিন্তু অধ্যাপক, শিক্ষামন্ত্রীকে নিগ্রহ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অগ্নি-সংযোগ, এই রাজনীতি আমরা সমর্থন করি না।”

Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy