মুড়িতে জোট! (বাঁ দিক থেকে) আনিসুর রহমান, আব্দুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী এবং মনোজ চক্রবর্তী। সোমবার বিধানসভায় কংগ্রেসের ঘরে। —নিজস্ব চিত্র
মতাদর্শগত বিচ্যূতি হয়েছে কিনা তা নিয়ে দিল্লিতে যতই ময়নাতদন্ত হোক, বাস্তব হল বাংলায় তার ছিঁটেফোঁটা প্রভাবও দেখা যাচ্ছে না। ভোটে জোট ছিল। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াতেও সেই আবহ ধরে রাখল বাম-কংগ্রেস।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সোমবার বিধানসভার পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে চাঁপদানির বিধায়ক আব্দুল মান্নানের নাম চূড়ান্ত করেছে। কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়কের সংখ্যাগরিষ্ঠই মান্নানকে তাঁদের দলনেতা হিসেবে চেয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তা এ দিনের নাম ঘোষণাতেই স্পষ্ট। বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিরোধী দলনেতার পদ এ বার কংগ্রেসেরই প্রাপ্য। ওই পদে মান্নানকে নিয়ে স্বচ্ছন্দ সিপিএম। সে জন্য মান্নানের নাম ঘোষণার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন জানান বাম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী এবং আনিসুর রহমান। বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোটের নেতা হিসেবে মান্নানকে মেনে নিতে বাম শরিকরাও গররাজি নন। সে জন্যই মান্নানকে তাঁরা জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতা হিসেবে বামেদের তরফেও তাঁর নামই স্পিকারের কাছে লিখিত ভাবে প্রস্তাব করা হবে।
দলনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পরেই এই জোট-বাতাবরণের মধ্যেই বিধানসভায় নিজেদের ভূমিকা ঠিক করতে এ দিন সুজনবাবুদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেন মান্নান। আপাতত ঠিক হয়েছে, কংগ্রেস এবং বামেরা বিধানসভায় সরকারের বিরোধিতায় জোটবদ্ধ হয়েই লড়াই করবে। শুধুমাত্র কক্ষ সমন্বয়ের পথ না নিয়ে যৌথভাবে বাম-কংগ্রেস একটি শিবির হিসেবেই কাজ করতে চায়। সে ক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেসের মোট ৭৭ জন বিধায়ককে নিয়েই সামগ্রিক ভাবে বৈঠক করে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে শাসক-বিরোধিতা করা হবে। সব সময় দু’দলের সব বিধায়ক সামিল হতে না পারলে দু’তরফের পরিষদীয় নেতারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে স্থির হয়েছে। গত পাঁচ বছরে বিধানসভায় বিরোধী দল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক কক্ষ সমন্বয় হলেও এমন ঘটনার নজির নেই।
তৃণমূল বিরোধিতায় জোরদার আন্দোলনের পথ নিতে সারদা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার মুখ মান্নানকেই হাইকম্যান্ড বেছে নিয়েছে বলে কংগ্রেস নেতাদের ধারণা। অন্যদিকে সারদায় ভুক্তভোগীদের স্বার্থে পথে নামা সুজনকে বাম পরিষদীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছে সিপিএম। আলিমুদ্দিনে আজ মঙ্গলবার বাম বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষদীয় নেতা বাছা হবে। সুজনের সঙ্গে যুগলবন্দিতে মান্নানও চান, ‘‘এতদিন যে ভাবে রাস্তায় নেমেছি, সারদা নিয়ে আদালতে লড়াই করেছি, সেই লড়াই এ বার বিধানসভার মধ্যে করতে হবে। মানুষের স্বার্থে বিরোধী জোট লড়াই করবে। সরকারের অন্যায় এবং নীতিহীন কাজের বিরুদ্ধে আমরা সরব থাকব।’’
কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা হওয়ার পরে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে আজ বৈঠকে বসছেন মান্নান। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকারের পদ পাওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে দাবিও জানাতে চান তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে দ্বিতীয় বারের জন্য স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার পদে হায়দর আজিজ সফির নাম ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ স্পিকার নির্বাচন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্পিকার পদে বিমানবাবু ছাড়া দ্বিতীয় কোনও নাম জমা পড়েনি বলেই বিধানসভা সূত্রের খবর। কিন্তু ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন কবে তা এখনও স্থির হয়নি। তবে ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা, গত সাড়ে তিন দশকে ওই পদ বিরোধী কোনও দল পায়নি। পরিষদীয় মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘আমরা তো ডেপুটি স্পিকারের নাম ঘোষণা করেছি। এখন ওরা যদি চায়, চাইতেই পারে। তবে গত ত্রিশ বছরে বিধানসভায় এই পদটায় শাসক দলই রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy