
নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সমাবেশে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বার্তা, ‘আগামী বিধানসভা ভোটে ২১৫টা আসন পেতেই হবে। অভিষেক ঠিকই বলেছে। আসন আরও বেশি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ২১৫টা আসনের কম কোনও মতেই নয়। এ বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের জামানত জব্দ করার পালা।’’
ভোটার
তালিকায় কারচুপি ধরতে জেলায় জেলায় কোর কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা।
বললেন, ‘‘ওই কমিটি ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করবে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে।’’
‘ভূতুড়ে’ ভোটার ধরতে ১০ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দেন মমতা। ‘ভূতুড়ে’ ভোটার চিহ্নিতকরণে সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে কমিটিও গড়ে দিয়েছেন। কমিটিতে রেখেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। জেলা থেকে এই কমিটির কাছে রিপোর্ট আসবে। ওই কমিটি কাজ না করলে প্রয়োজনে নিজে ‘ভূতুড়ে’ ভোটার বাছাইয়ের কাজ করবেন বলেও জানান মমতা।
মমতার দাবি, বাংলায় এজেন্সি পাঠিয়ে ভোটার তালিকায় কারচুপি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। পঞ্জাব-হরিয়ানার বহু লোকের নাম বাংলার ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। দিল্লি থেকে এ সব করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদেই এ সব করা হচ্ছে। কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা, ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘২০২৬ সালে আবার খেলা হবে। সেই কাজটা শুরু হবে ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার মধ্যে দিয়ে। জেলা সভাপতিদের বলব, বুথকর্মীদের মাঠে নামান। প্রয়োজনে নির্বাচনের কমিশনের দফতরে ধর্না দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। তা না হলে ইলেকশনের কোনও প্রয়োজন থাকবে না। ভয় পাবেন না। একটা এজেন্সিকে দিয়ে অনলাইনে এ সব করানো হয়েছে। আমি যত দূর জানতে পেরেছি, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস, কোম্পানি ইন্ডিয়া ৩৬০ নামে দু’টি এজেন্সি আছে। তারা ডেটা অপারেটদের কাছে গিয়ে নিয়েছে। কিছু বিএলআরও-কে সঙ্গে নিয়ে অনলাইনে কারসাজি করেছে। বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে, তাই একই এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলেছে। তার মানে বাংলার লোক যখন ভোট দিতে যাবে, বাইরের ভোটারের নামে চলে যাবে। মুর্শিদাবাদের ভোটারগুলিকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিয়ে আসবে। মুর্শিদাবাদের নেতারা সতর্ক থাকুন।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে। বাংলা দখলের খেলা চলছে। ভূতুড়ে ভোটার দেখে নিন, নইলে যে কোনও দিন এনআরসি, সিএএ করে আপনাকে বাদ দিয়ে দেবে। নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে কেলেঙ্কারি হচ্ছে।’’ মমতার হুঁশিয়ারি, “অনেক বিএলআরও ভাল করে কাজ করেননি। যারা এই কাজ করেছে, আমি তাদের হাতেনাতে ধরব।”
বিজেপিকে ‘গেরুয়া কমরেড’ বলে কটাক্ষ মমতার। বললেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় ক’দিন ছুটি দেয় আপনাদের সরকার? ছটপুজোয় ক’দিন ছুটি দেয়?’’
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র-দিল্লিতে ওরা বিজেপির খেলা ধরতে পারেনি। বাংলায় আমরা ধরব। যোগ্য জবাব দেব। ২০২৭ থেকে ২০২৯-এর মধ্যে বিজেপি শেষ হয়ে যাবে। বিজেপির আয়ু ২-৩ বছর।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভোট এলেই ওরা ঠিক করে, কাকে জেলে ঢোকাতে হবে, কার নামে চার্জশিট দিতে হবে, কাকে চোর বলতে হবে! লজ্জা করে না! আরজি কর মামলার এখনও সমাধান করতে পারেনি।’’
সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০০১ সালেই তৃণমূল ক্ষমতায় আসত যদি না কংগ্রেস বিশ্বাসঘাতকতা করত।’’
বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে তৃণমূলে। অধ্যাপক, শিক্ষক সংগঠনে রদবদল হয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, আগামী দিনে বেশ কিছু পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বদল হতে পারে। এই বৈঠকের জন্য সেই বিষয়টি আটকে রয়েছে বলে মত দলের একাংশের। বৈঠকে সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তার পরে মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেই রদবদল হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
বৈঠকে কী বার্তা দেবেন দলনেত্রী, তা নিয়ে দলের অন্দরে জোর জল্পনা। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট অধিবেশন হয়ে হয়েছে চলতি মাসে। আগামী বছর ভোটের আগে হবে অন্তর্বর্তী বাজেট। চলতি বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে রাজ্য সরকারের আগামী এক বছরের পথ চলার রূপরেখা প্রকাশ করা হয়েছে। বাজেটের সেই রূপরেখা দল কী ভাবে কার্যকর করবে, প্রচার করবে, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে, তা নিয়ে দলীয় নেতাদের বার্তা দিতে পারেন মমতা। কী ভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে, তা নিয়েও বার্তা দিতে পারেন তিনি।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনের সর্বস্তরে ‘ঝাঁকুনি’ দিতে চান মমতা। তৃণমূলের অন্দরের অনেকের মতে, ভোট-প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার লক্ষ্যে নেতাজি ইন্ডোরের এই বৈঠক থেকেই দলের সুর বেঁধে দিতে পারেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy