ফাইল চিত্র।
গ্রামে-গ্রামান্তরে, প্রান্তে-প্রত্যন্তে রাতবিরেতে রোগীদের সহায় তাঁরাই। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না-থাকলেও সেই গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকদের উপরেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় আশি শতাংশ নির্ভরশীল। একই অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় দিনে-রাতে সব সময়েই বিপদে পড়লে বাসিন্দারা সহজেই তাঁদের পেয়ে যান। সেই পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের এক্তিয়ার কত দূর পর্যন্ত, জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় কতটা কী কাজ তাঁরা করতে পারেন, সেই বিষয়ে যথাযথ পরামর্শ ও মতামত আদানপ্রদানের জন্য গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকদের নিয়ে ‘কনসর্টিয়াম’ বা মঞ্চ তৈরি করল লিভার ফাউন্ডেশন।
স্বাস্থ্যচিন্তকদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা মানেই শুধু পাশ করা চিকিৎসক ও রোগী নন। জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকদের সেই গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০০৭ সালে তাঁদের নিয়ে কাজ শুরু করে লিভার ফাউন্ডেশন। পরবর্তী সময়ে সরকারের তরফেও ওই স্বাস্থ্যসেবকদের জন্য ছ’মাস বা এক বছরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে তাঁরা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। সোনারপুরের লিভার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও এটা বাস্তব যে, চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না-থাকা এই মানুষগুলির উপরেই গ্রামবাসীরা সব থেকে বেশি নির্ভরশীল। ওই গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকদের অনেক সংগঠন রয়েছে। সেগুলো থাকুক। তবে ওই মানুষগুলিকে শিক্ষামূলক ও স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি বিষয়ে আরও ঘষেমেজে গ্রামীণ লোকস্বাস্থ্যে সুচারু ভাবে কাজে লাগানোই মূল উদ্দেশ্য।’’
তাই রাজ্যের কয়েকশো গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবককে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘কনসর্টিয়াম ফর রুরাল হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার ওয়েলফেয়ার’। লিভার ফাউন্ডেশনের সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রাথমিক চিকিৎসা ও লোকস্বাস্থ্যের আঙিনায় কাজের সুবিধা রয়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের।সেই কাজে তাঁরা যে যোগ্য, বিভিন্ন সময়ে তার প্রমাণও মিলেছে।দীর্ঘ প্রায় দু’বছরের করোনাকালে গ্রামবাসীদের পাশে থেকে সাহায্য করেছেন ওই স্বাস্থ্যসেবকেরা।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অতিমারির সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁদের কাজে লাগাতে বলেছিলেন। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের কোনও দিনই চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা নয়। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ আর পরামর্শের জোরে ওঁরা অত্যন্ত কার্যকর স্বাস্থ্যকর্মী হয়েউঠতে পারেন।’’
সোনারপুরের ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে কনসর্টিয়াম তৈরি করা হলেও সেখানকার কেউ কমিটিতে থাকবেন না। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘এটা দাবিদাওয়া জানানোর মঞ্চ হবে না। ওঁদের প্রয়োজনীয়তা, উপযোগিতা আরও বেশি মাত্রায় সমাজের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করবে আমাদের প্রতিষ্ঠান।’’ গ্রামের লোকস্বাস্থ্যে আরও বেশি মাত্রায় নিজেদের নিযুক্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে আজ, বুধবার লিভার ফাউন্ডেশনের তরফে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় যে-অক্সিজেন সুরক্ষা বলয় তৈরি হচ্ছে, তার দায়িত্বে থাকবেন ওই গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy