Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় লিঙ্গ বলে স্বীকৃতি নেই, ভোট দিয়ে কী হবে!

দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সামাজিক ও অার্থিক ভেদাভেদ ছাপিয়ে প্রতিনিধি বেছে নেন মানুষ। কিন্তু নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বাইরে বাস করা আমজনতা এই গণতন্ত্রের অধিকারকে কী চোখে দেখেন?

লেখক: লোক আদালতের সদস্য বিচারক, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী

লেখক: লোক আদালতের সদস্য বিচারক, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী

জয়িতা মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

আমাদের নিয়ে কখনওই কেউ ভাবে না। তাই আমার চোখে ভোট মানে রাজনৈতিক শক্তি দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এক সময় ভোট দেওয়া নিয়ে উৎসাহ ছিল। বছর পাঁচেক আগেই ভোটার তালিকায় প্রথম নাম ওঠে। পেয়েছিলাম ভোটার কার্ডও। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম ভোট দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। অথচ ভোট দিতে গিয়ে দেখলাম আলাদা কোনও লাইন নেই তৃতীয় লিঙ্গের। আমাকে মেয়েদের লাইনে দাঁড়াতে বলা হল। নিজের অধিকারের জন্য ভোট দিতে যাওয়া। তাই ভোট না দিয়েই ফিরেছিলাম ঘরে।

কলকাতাতেই ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই একটু অন্য রকম ছিলাম বলে পরিবারের লোকেরা সব সময়ই ছেলেদের মতো ‘স্বাভাবিক’ থাকতে বলতেন। ২০০৯ সালে বাড়ি ছেড়ে প্রথম উত্তরবঙ্গে আসি। মাস দুয়েক শিলিগুড়িতে বন্ধুর কাছে, পরে ইসলামপুরে ছিলাম। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় হোটেল পাইনি। রাত কেটেছে খোলা আকাশের নীচে, কখনও বাসস্ট্যান্ডে, কখনও আলুয়াবাড়ি স্টেশনে। পেট চালাতে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তিও করতাম, অনুষ্ঠান বাড়িতে গানও গেয়েছি।

এর পরেই আলিপুরদুয়ারে হিজরেদের আবাসনে কিছু দিন কাটে। দূরশিক্ষায় ইতিহাসে পড়ে স্নাতক হই। সম্পূর্ণ সঙ্গীহীন অবস্থায় অবলম্বন হলেন যাঁরা, ইচ্ছা ছিল সমাজের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত সেই মানুষদের জন্য কিছু করার। বিদেশি লগ্নির সুবাদে ‘নতুন আলো’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে এইচআইভি প্রচারের কাজ শুরু করি। ২০১৮ সালে জেলায় প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তুলি। সমাজ কর্মী হিসাবে ২০১৭ সাল থেকে একাধিক বার সদস্য বিচারক হিসেবে লোক আদালতে বসার সুযোগ পেয়েছি। ৮ মার্চ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সম্মান দেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে আক্ষেপ, আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লড়াই করলেও রাষ্ট্র এখনও আমাদের কথা সে ভাবে ভাবে না। আমাদের সংস্থার তরফেই যৌনপল্লির বাসিন্দাদের জন্য ভোটার কার্ড তৈরি করানো হলেও এখনও আমাদের সংস্থারই দু’শোর সদস্যের অনেকে রূপান্তরকামী হিসেবে ভোটের কার্ড পাননি। তৃতীয় লিঙ্গ মানুষের জন্য স্কুল কলেজে বাসস্ট্যান্ডে কোথাও শৌচালয় পর্যন্ত নেই। আমাদের উন্নয়নে কোনও সরকারি সহযোগিতা করা হয় না। নির্বাচনের আগে দেখি সব দলই বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়েই আলোচনায় বসে। অথচ তাঁরা তো আমাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন না! জানতেও চান না আমাদের কী দাবি রয়েছে। ভোট দিয়ে কী হবে, সেই প্রশ্নটা তাই তাড়া করে বেড়ায়। ২০১৪ সালে সুপ্রিমকোর্ট রায় দেওয়ার পরেও আমাদের অধিকারের কথা ভাবা হচ্ছে না। অধিকার রক্ষা হলে তবেই ভোট দেওয়ার উৎসাহ জাগবে।

অনুলিখন: অভিজিৎ পাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE