আলিপুরদুয়ারে অমিত শাহ। শুক্রবার। ছবি: নারায়ণ দে
রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচার চেনা ছকেই শুরু করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ব্যবহার করলেন ‘তোষণে’র তাস। বক্তৃতায় উঠে এল ইমাম ভাতা, মাদ্রাসার বাজেটের প্রসঙ্গ। বালাকোটে বিমান হানার প্রসঙ্গ তুলে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
দাড়িভিট-কাণ্ড এবং অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ তুলে শুক্রবার শাহের বক্তব্য, ‘‘ইমামদের যত খুশি ভাতা দিন, অসুবিধা নেই। কিন্তু পূজারীকেও তো দিতে হবে! মাদ্রাসা শিক্ষায় চার হাজার কোটি টাকা দিলে আপত্তি নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় তার চেয়ে কম দেওয়া হচ্ছে।’’ অসম লাগোয়া আলিপুরদুয়ারে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, ‘‘আমরা এনআরসি এনে বাংলা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বার করে দেব।’’ যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘ওঁর নতুন কিছু বলার নেই! ভেদাভেদের রাজনীতি করে পশ্চিমবঙ্গে যে দাঁত ফোটানো যাবে না, তা ওঁরা এখনও বুঝতে পারছেন না!’’
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী জন বার্লার সমর্থনে প্যারেড গ্রাউন্ডে শাহের জনসভায় উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েনি। বিরোধীরা তো বটেই, দলের একাংশেরও বক্তব্য, গত তিন বছরে রাজ্যে এসে শাহ যা বলেছিলেন, এ দিনের সভায় প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। এমনকি, আলিপুরদুয়ারের মতো কেন্দ্রে চা-বাগানের প্রসঙ্গ শোনা যায়নি তাঁর মুখে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিরোধীরা নরেন্দ্র মোদী-শাহকে যে গণতন্ত্রের অস্ত্রে আক্রমণ করেন, শাহ এ দিন সেই অস্ত্রই বেছে নিয়েছিলেন বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গে এসে শাহের মন্তব্য, ‘‘বাংলায় এটা গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষার ভোট।’’ শাহের বক্তব্যের নির্যাস— মমতা-জমানায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গণতন্ত্রের সঙ্কট, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা, উন্নয়নের অভাব, দুর্নীতিগ্রস্তদের জুলুম এবং গোষ্ঠী-তোষণের রাজনীতিতে ‘অতিষ্ঠ’। তাঁদের ‘ত্রাতা’ হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাই বাংলা থেকে তাঁর ঝুলিতে ২৩টি পদ্মফুল দিয়ে ফের মোদী সরকার গড়া দরকার।
শাহ ফের অভিযোগ করেন, ‘‘এখানে আগে চৈতন্যদেবের কীর্তন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেত। এখন সেখানে বোমার আওয়াজ। এখানে তৃণমূল তোলাবাজি ট্যাক্স আছে। সবেতেই তৃণমূলকে ট্যাক্স দিতে হয়।’’ পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ তুলে শাহের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতে বাংলার মানুষ মমতাদিদির বিরুদ্ধে ছিলেন বলে তাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ৮০ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর হঁশিয়ারি, ‘‘কর্মীদের খুন করে বিজেপিকে আটকানো যাবে না। যত গুন্ডা নামাতে চান, নামান!’’
তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক তোষণের অভিযোগ বরাবরই তুলে এসেছে বিজেপি। শাহ পুলওয়ামা-কাণ্ড এবং বালাকোটে ভারতের হানার কথা তুলে এ দিন মমতাকে কটাক্ষ করেন শাহ। বলেন, ‘‘মমতাদিদি রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ পাকিস্তানে ঢুকে ভারত জঙ্গিদের মেরেছে। কেন? কারণ সেই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি।’’
আলিপুরদুয়ারে দাঁড়িয়ে গোর্খাদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘গোর্খাল্যান্ডের গোর্খা ভাইয়েরা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। তাঁদের উপর অত্যাচার করেছে তৃণমূল সরকার।’’ তবে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, শাহ ‘গোর্খাল্যান্ড’ বলে ফেলেছেন মুখ ফস্কেই।
বক্তৃতার শেষ পর্বে বিরোধী জোটের সমালোচনা করতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকেও কটাক্ষ করেন শাহ। রাহুলের গলা নকল করে তিনি বলেন, ‘‘রাহুলবাবাও বলছেন, মোদীজি বলুন, আপনি পাঁচ বছরে কী করেছেন? আমরা আপনাকে হিসাব দেব না। হিসাব দেব বাংলার মানুষকে। ইউপিএ জমানায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়েছিল। আর মোদী জমানায় এ রাজ্য পেয়েছে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ কোটি।’’
শাহের সভা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবুর কটাক্ষ, ‘‘ইতিহাস, ভূগোল কিছুই ওরা জানে না। ওরা আর ফিরবেও না ক্ষমতায়। ফলে, এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের মানুষ বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিজেপি একটি ভোটও পাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy