Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘ঠিক জায়গা’য় ভোট দিন, গ্রামে প্রচারে আশাকর্মীরা

আর্সেনিক কবলিত পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে বাড়ি-বাড়ি বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের কাজ করে এক স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী। দক্ষিণ শ্রীরামপুরে এক বাড়িতে জল পৌঁছতে যান গোষ্ঠীর সদস্য রমা দেবনাথ (নাম পরিবর্তিত)।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

চৈত্রের দুপুরে প্রসূতির স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাড়িতে ঢুকেছিলেন সুমিতা দেবনাথ (নাম পরিবর্তিত)। নানা কথার পরে প্রসূতির শাশুড়ির হাতে আয়রন ট্যাবলেট তুলে দিয়ে আশাকর্মী সুমিতা বললেন, ‘‘বৌমাকে সময় মতো ওষুধ দেবেন। এখন হাসপাতাল ভাল হয়েছে। গাড়ি ভাড়া দিয়ে আর হাসপাতালে যেতে হয় না, মাতৃযান রয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘সুযোগ-সুবিধে অনেক হয়েছে। ভোটটা ঠিক জায়গায় দেবেন।’’

আর্সেনিক কবলিত পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে বাড়ি-বাড়ি বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের কাজ করে এক স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী। দক্ষিণ শ্রীরামপুরে এক বাড়িতে জল পৌঁছতে যান গোষ্ঠীর সদস্য রমা দেবনাথ (নাম পরিবর্তিত)।
জলের সমস্যা হলেই সঙ্গে-সঙ্গে জানানোর পরামর্শ দিয়ে বেরনোর মুখে গৃহকর্তাকে বলেন, ‘‘ভোট এসে গেল। এলাকায় অনেক কাজ হয়েছে। মাথায় রাখবেন মেসোমশাই।’’

গ্রামীণ এলাকায় নানা প্রয়োজন, বিপদ-আপদে মানুষজন পাশে পান এই আশাকর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের। অনেক বাড়িরই হেঁশেল অবধি যাতায়াত তাঁদের। পূর্ব বর্ধমানে ভোটের প্রচারে এই নিবিড় যোগাযোগকে অস্ত্র করছে তৃণমূল। দলের নেতাদের একাংশের মতে, মানুষের কাছে রাজনৈতিক কর্মীর থেকে এই মহিলাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাঁদের মাধ্যমে বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছনো সহজ। তাই ভোটের মাঠে নামানো হয়েছে তাঁদের। পতাকা, ব্যানার ছাড়াই কাজের ফাঁকে মেঠো ভাষায় প্রচার সারছেন ওই কর্মীরা।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এক-একটি ব্লকে আশাকর্মী রয়েছেন প্রায় দেড়শো জন। এলাকায় প্রসূতিদের দেখভালে নিযুক্ত থাকেন তাঁরা। বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দুর্গাপুর দুই লোকসভা কেন্দ্রেই এই আশাকর্মীদের একাংশের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথা প্রচার করা হচ্ছে এলাকায়। বাড়ি-বাড়ি ঘোরার ফাঁকে সুযোগ বুঝে ওই কর্মীরা শিশু থেকে প্রবীণ, লোকশিল্পী থেকে কৃষক, কার জন্য কী প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সে সব বলছেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লক তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘এলাকার বহু আশাকর্মী প্রচারে নেমেছেন। তবে ওঁরা কেউ কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রচার করছেন না।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পূর্ব বর্ধমানে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা হাজার কুড়ি। প্রাণিপালন, মুড়ি ভাজা, তাঁত বোনা-সহ নানা কাজের সূত্রে গ্রামে-গ্রামে যাতায়াত এই গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের। সম্প্রতি কালনায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর বেশ কিছু সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রতি সদস্যকে এলাকায় অন্তত দু’টি করে বাড়িতে গিয়ে রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথা জানাতে অনুরোধ করা হয়। কাজ হয়েছে তাতেই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘এলাকায় উন্নয়ন দেখে খুশি হয়ে নিজেরাই প্রচার করছেন ওঁরা।’’ সুমিতা, রমারা বলেন, ‘‘যে কাজটা ভাল হয়েছে বলে নিজেরা মনে করছি, সেটাই মানুষকে বলছি। অমুক দল বা তমুক প্রার্থীকে ভোট দিন, সে কথা তো বলছি না।’’

এ ধরনের প্রচার নিয়ে বিরোধী-তোপও রয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘ওই মহিলারা মন থেকে প্রচার করতে রাজি নন। তৃণমূল জোর করে ওঁদের প্রচারে নামাতে চাইছে।’’ বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকেরও বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের সন্ত্রাসে ওই মহিলারা নিজেরাই ভোট দিতে পারেননি। তৃণমূল ওঁদের প্রচারে ব্যবহারের চেষ্টা করলেও, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ওঁরা কোন সরকারের কাজের কথা প্রচার করছেন, ওঁরাই জানেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE