Advertisement
E-Paper

মামলা নিয়ে বিজ্ঞাপনেও ফাঁকিবাজি?

এডিআর-এর রাজ্য শাখা পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে তিন দফা নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের ১৭ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৫

ফৌজদারি মামলা থাকলে তা ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে প্রার্থীদের। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী যদি রাজনৈতিক দলের প্রতীকে লড়েন, তবে মামলার কথা দলকেও আমজনতার সামনে আনতে হবে। তেমনই নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে এই নির্দেশ বঙ্গে কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এডিআর-এর রাজ্য শাখা পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে তিন দফা নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের ১৭ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল। তাঁদের মধ্যে সাত জন বিজেপির প্রার্থী, কংগ্রেস এবং সিপিএমের তিন জন করে আর তৃণমূলের চার জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় ফৌজদারি মামলা ছিল।

তবে এই ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে সে-ভাবে চোখে পড়েনি বলেই বিভিন্ন সূত্রের খবর। যদিও রাজনৈতিক দলগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা এই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন যথাযথ ভাবেই দিয়েছে সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের তরফে একটি বাংলা, একটি উর্দু দৈনিক এবং একটি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে একটি হিন্দি দৈনিকেও বিজ্ঞাপন দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। একটি বাংলা দৈনিক এবং উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে কংগ্রেস। ওই দলের নেতাদের দাবি, যে-হেতু প্রথম তিন দফার ভোটে বেশির ভাগ আসন ছিল উত্তরবঙ্গে, তাই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সেখানেই। বিজেপির বিজ্ঞাপন দু’টি বাংলা দৈনিক এবং একটি টিভি চ্যানেলে যাচ্ছে। সিপিএমের তরফে এই বিজ্ঞাপন তাদের দলীয় মুখপত্র এবং জেলার কাগজে দেওয়া হয়েছে।

এই ধরনের বিজ্ঞাপন ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘প্রমিনেন্ট’ সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন পরে এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের ইলেকশন ওয়াচের সংযোজক উজ্জয়িনী হালিমের মতে, ‘‘প্রমিনেন্ট শব্দটির নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না-থাকার ফাঁক গলে অনেকেই সংবাদপত্র বা চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। যা অনেক সময় জনগণের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।’’ পাশাপাশি, রাজনৈতিক দল তাদের মুখপত্রে এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিলে তাতে কমিশনের নির্দেশ কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছে বলে মত রাজ্য ইলেকশন ওয়াচের সংযোজকের।

গত ১০ অক্টোবর রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্য নির্বাচনী অফিসারদের (সিইও) কাছে পাঠানো কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় যে-সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেল সর্বাধিক প্রচারিত, সেখানেই ১২ পয়েন্ট বোল্ড অক্ষরে ফৌজদারির মামলার কথা জানাবেন প্রার্থীরা। কিন্তু সে-ভাবে আলাদা করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের মতে, এই বিজ্ঞাপনের বিষয়টি আদতে মানুষের কাছে প্রার্থীর মামলার বিষয়টি আয়না হিসেবে তুলে ধরার কাজ করত। কিন্তু যে-সব সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলে এগুলি দেওয়া হচ্ছে, তাতে নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছেই। এ ক্ষেত্রে তাঁরা হাতিয়ার করছেন, একটি সর্বভারতীয় সমীক্ষাকে। সেখানে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলি দলীয় বিজ্ঞাপনে সাধ্যমতো খরচ করছেন, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। অথচ দল বা প্রার্থীর এই ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন ক্ষেত্রে তুলনায় কম প্রচারিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তুলনামূলক কম প্রচারিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিলে সেটা অনেক কম মানুষের কাছে পৌঁছবে, আদতে প্রার্থীর ‘অপরাধে’র কথা জানবেন কম সংখ্যক মানুষ। সেটাই করছে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, নিয়ম মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে।

কমিশন সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে ভোটের পরে সব রাজনৈতিক দল যখন বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত খরচের হিসেব দেবে, তখন এই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

Politics Election Commission Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy