Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভিড়ে টেক্কা অশোকনগরের

শুক্রবার দুপুরে অশোকনগরের হরিপুরে নির্বাচনী জনসভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অশোকনগরের হরিপুরে নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।

অশোকনগরের হরিপুরে নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০০:২৯
Share: Save:

আটত্রিশ মিনিটের ভাষণের শেষ মুহূর্তে এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভায় উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমার তো মা নেই। মায়ের মুখ দেখে বাড়ি থেকে বেরোতাম। এখন আপনারাই আমার মা, আপনারাই আমার বোন। আপনারাই আমার পরিবার।’’

মুখ্যমন্ত্রী যখন কথাগুলো বলছেন, দেখা গেল বহু মহিলাই অবাক। মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের কাছে আবেদন করলেন, ‘‘আমায় একটু আশীর্বাদ দাও।’’ হাজার হাজার মহিলা একত্রে উলুধ্বনি দিয়ে উঠলেন। যা দেখে প্রবল গরমেও ঘাম মুছতে মুছতেও মমতার মুখে স্বস্তি চোখে পড়ার মতো।

শুক্রবার দুপুরে অশোকনগরের হরিপুরে নির্বাচনী জনসভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ দূরদূরান্ত থেকে জড়ো হয়েছিলেন। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ৩টের সময়ে। বেলা ১২টা থেকে কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু করেছিলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম অশোকনগরে কোনও জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই কর্মী-সমর্থকদের আবেগ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে উৎসাহ ছিল ভরপুর। অনেককেই দেখা গেল, দলীয় প্রতীক আঁকা শাড়ি পরে সভায় এসেছেন। তরুণীদের অনেকের গালে দলীয় প্রতীক আঁকা ছিল।

মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার সভাস্থলে নামে দুপুর ৩টে ২৪ মিনিটে। তাঁর অনেক আগে থেকে উৎসাহী জনতা বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে এক পলক দেখার আশায় হেলিপ্যাডের কাছে দীর্ঘ সময় ছাতা মাথায় কর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। যা দেখে মাইক হাতে অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায়কে কয়েকবার বলতে হল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসে সভামঞ্চেই আসবেন। আপনার ছাতা বন্ধ করে মাঠে এসে বসুন।’’

ভিড়: মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

কিন্তু কে শোনেন কার কথা! আকাশে হেলিকপ্টারের চক্কর কাটতেই কয়েক হাজার মহিলা-পুরুষ ছুটে গেলেন হেলিপ্যাডের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার তর যেন আর সইছিল না। অশোকনগরের সভা তৃণমূলের কাছে জরুরি ছিল। বিজেপির এই এলাকায় বরাবরই কিছু প্রভাব আছে। সে দিক থেকে দেখলে এ দিন অশোকনগরে ভিড়ের চেহারাটা তৃণমূল শিবিরকে স্বস্তি দিচ্ছে। ভিড় দেখে দৃশ্যত খুশি হন মমতাও। সকলকে হাতজোড় করে, হাত নেড়ে স্বাগত জানান। ‘দিদি দিদি’ চিৎকারে তখন সভাস্থলে কান পাতা দায়। মমতা প্রথমেই সভায় আসা মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘গরমের পারদ চড়ছে। সে সময়ে বাড়ি কাজ ফেলে দূর দূর থেকে আপনারা এসেছেন। মা-বোনেদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনারাই আমাদের শক্তি।’’

লোকসভা ভোটের প্রচারের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা স্বরূপনগর, আমডাঙা, ভাটপাড়া, নোয়াপাড়ায় সভা করেছেন। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, এ দিন ভিড়ের নিরিখে আগের সব সভাকে টক্কর দিয়েছে অশোকনগর।

জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এ দিনের সভায় এক লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। বহু মানুষকে মাঠে জায়গা দিতে পারিনি। জেলায় মুখ্যমন্ত্রী এ বার যতগুলি সভা করেছেন, সব থেকে বেশি ভিড় হয়েছে এ দিন।’’

ভিড় হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে নেতা-কর্মীদের। স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে ঝাঁজও ছিল বেশি। আমরা বহু দিন পরে সেই পুরনো নেত্রীকে খুঁজে পেলাম।’’ নব্বই বছরের এক বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘‘আমার অনেক বয়স হল। কবে মারা যাব তার ঠিক নেই। তাই এই গরমে কষ্ট করে হলেও একবার চোখের দেখা দেখে গেলাম।’’

এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন, বারাসতের প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার, হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অশোকনগরে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরির কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘‘এর ফলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’’ সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার আকাশে মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অনেককে সে দিকেই তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE