Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

আমার থেকে ভয়ঙ্কর কেউ হবে না, তোমাদের ঔদ্ধত্য খর্ব করবই: মমতা

বিজেপির তরফে অবশ্য গোটা ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়েছে।

বিদ্যাসাগরের ভাঙা মূর্তি হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বিদ্যাসাগরের ভাঙা মূর্তি হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

‘‘ওরা বাংলার হেরিটেজ, বাংলার মনীষীর গায়ে হাত দিয়েছে। আমার থেকে ভয়ঙ্কর কেউ হবে না। তোমাদের ঔদ্ধত্য খর্ব করবই।’’

বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের কথা জেনে বিজেপির উদ্দেশে এই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া। মূর্তি ভাঙার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজে বাঙালি মনীষীর প্রতি এই ‘অবমাননা’র কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মমতা বললেন, ‘‘আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বে মঙ্গলবার শহিদ মিনার থেকে উত্তর কলকাতাগামী মিছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে তৃণমূল ও বিজেপির ছাত্রদলের মধ্যে মুখোমুখি সংঘাত বাধে। তার পরই তা বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত ছড়ায় এবং মিছিলকারীরা কলেজে ঢুকে এলোপাথাড়ি ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। চুরমার করে দেওয়া হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তিও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মুখ্যমন্ত্রী তখন দক্ষিণ কলকাতায় নির্বাচনী সভা করছিলেন। বেহালার মঞ্চ থেকেই এ সম্পর্কে মুখ খোলেন তিনি। বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগর কলেজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এত বড় লজ্জা কলকাতায় কখনও হয়নি। বিজেপি জেনে রাখ, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব নেব।’’ ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিদ্যাসাগর কলেজে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু বলেন, ‘‘লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল। রাজনীতি কোথায় চলে গেল! এরা নাকি দেশপ্রেমী! আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এরা রাজ্যকে শ্মশানে পরিণত করতে চায়।’’ রাতে কলেজে যান মুখ্যমন্ত্রী নিজেও।

ইটের আঘাতে জখম টিএমসিপি নেতা অভিষেক মিশ্র। —নিজস্ব চিত্র

বিজেপির তরফে অবশ্য গোটা ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা ভিতরে ঢোকেনি। কলেজের সব দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। মাঝে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। তৃণমূল কিছু গুন্ডা পোষে। তারাই এ সব করে বিজেপির নামে দোষ চাপাচ্ছে।’’ কংগ্রেস এবং সিপিএমও দু’পক্ষের প্ররোচনার কথা তুলেছে। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মিছিলে ঢিল ছুড়ে প্ররোচনা দিয়ে বিজেপিকে নিজের চরিত্র ফের পরিস্ফুট করার সুযোগ দেওয়া হল। কলকাতায় যে গুন্ডামি হল সেই পাপের দায় তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’দলকেই নিতে হবে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘দু’পক্ষের প্ররোচনা ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।’’ অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার জন্য কমিশনের সক্রিয়তা দাবি করেছে সিপিএম।

সত্তরের দশকে কলেজ স্কোয়ারে মস্তকহীন বিদ্যাসাগর-মূর্তি। ফাইল চিত্র

অমিত শাহ নিজে অবশ্য মূর্তি ভাঙা নিয়ে কিছু বলেননি। বরং তাঁর রোড শো-এর দু’জায়গায় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ভাবতেই পারছি না, বাংলায় গণতন্ত্র কী ভাবে চলছে। আমাদের রোড শো-এর দু’জায়গায় হামলা হয়েছে। বিবেকানন্দের বাড়িতে যেতে পারিনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন চোখ বন্ধ করে বসে আছে। বাংলায় যা ঘটছে তাতে নজর দিচ্ছে না। সংস্থার সম্মান বাঁচাতে হলে সপ্তম দফার আগে সব দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে হবে।’’ রাতে টুইট-বার্তায় ‘দিদির বিদায়ের সময় এসে গিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দিল্লিতেও সুর চড়ায় বিজেপি। অমিতের রোড শো-তে হাঙ্গামা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘সমর্থকদের উস্কানি দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার করার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হোক।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে মমতা সরকারকে বরখাস্তের দাবি তুলেছেন যোগী আদিত্যনাথ।

ধ্বংস-সেনা: ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই একাধিক জায়গায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে লেিননের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণ ত্রিপুরায় বিলোনিয়ায় লেনিনের একটি পাঁচ ফুট লম্বা ফাইবার গ্লাসের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়। যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। —ফাইল চিত্র

বস্তুত বিজেপি বনাম মমতার দ্বৈরথ সার্বিক ভাবেই এ দিন আরও তীব্র হয়েছে। একটি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে মমতাকে আক্রমণ শানান নরেন্দ্র মোদী। প্রচার মঞ্চ থেকে মমতাও হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘তোমার ভাগ্য ভাল, আমি এখনও ঠান্ডা আছি। দিল্লিতে তোমার ঘর দখল করতে পারি। বিজেপি অফিস নিতে আমার এক সেকেন্ড লাগে। কিন্তু আমি ছুঁই না।’’ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘আজ পুলিশ কেন ওখানে ওঁদের অনুমতি দিয়েছিল মিছিল করতে? কাল ওখানে আমার মিছিল করার কথা। আজ যে মিছিল হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। লজ্জা করে না, গুন্ডামি করতে এসেছ! গুন্ডামি করলে গুন্ডা, ষন্ডা সব বলব। নির্বাচনের নামে গুন্ডামি বরদাস্ত করব না।’’ এর পরেই দলীয় কর্মীদের শান্ত থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘উত্তেজিত হবেন না। রেগে যাবেন না। গণতান্ত্রিক ভাবে বদলা চাই।’’ বিদ্যাসাগরের ছবি নিয়ে মিছিল করার কথাও বলেন তিনি। রাতেই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেন তিনি। সেখানে বিদ্যাসাগরের ছবি ব্যবহার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ধ্বংস: শুধু লেনিন-মূর্তি নয়, ত্রিপুরার বিশালগড়ে সম্প্রতি ভাঙা হয়েছিল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মূর্তিও। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা হয় অম্বেডকরের মূর্তিতেও। —ফাইল চিত্র

বিশিষ্ট জনেদের একাংশ আজ, বুধবার মিছিল করতে পারেন বলে খবর। বুধবার সকালে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশ থেকে হেদুয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করবে সিপিএমও। থাকবেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বিমান বসুরা। ও দিকে দিল্লিতে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসবে বিজেপিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE