Advertisement
১৪ জুন ২০২৪

ফ্লেক্স কম, জোর এ বার দেওয়ালেই

হঠাৎ রংচঙে হোর্ডিং, ফ্লেক্সের বদলে দেওয়াল লেখায় ঝোঁক কেন?

কথার-লড়াই: বান্দোয়ান থেকে বরাবাজার যাওয়ার পথে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

কথার-লড়াই: বান্দোয়ান থেকে বরাবাজার যাওয়ার পথে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৪
Share: Save:

হোর্ডিং, ফ্লেক্স, ব্যানার কমিয়ে এ বার পুরুলিয়ায় লোকসভা ভোটের প্রচারে দেওয়াল লেখাতেই জোর দিচ্ছে তৃণমূল। নেতৃত্বের দাবি, দেওয়াল লেখায় মানুষের মনে প্রচারের ছাপ বেশি পড়ে। পরিবেশবান্ধব প্রচারের জন্য দেওয়াল লেখাতেই সায় দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, ‘‘দেওয়াল লেখা ছাড়া ভোটের মেজাজই আসে না। এ বার তাই দলনেত্রীর নির্দেশ, দেওয়াল লেখায় বেশি করে কর্মীদের নামতে হবে।’’

হঠাৎ রংচঙে হোর্ডিং, ফ্লেক্সের বদলে দেওয়াল লেখায় ঝোঁক কেন? শান্তিরামবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘অনেকক্ষণ ধরে দেওয়াল লেখা চলে। তা দেখতে এলাকার লোকজন ভিড় করেন। তাঁদের সঙ্গে কর্মীদের নানা রকম আলোচনাও হয়। এতে যেমন দলের প্রচার হয়, তেমনই জনসংযোগও চলে। কিন্তু, ফ্লেক্স-ব্যানার অল্প সময়ে টাঙিয়ে দিলে তা হয় না।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, ফ্লেক্স-ব্যানার টাঙাতে অল্প কর্মী লাগে। দু’-একজনেই হয়ে যায়। কিন্তু, দেওয়াল লেখার কাজে অনেক কর্মীর প্রয়োজন। কর্মীরা একসঙ্গে দলের জন্য কাজে নামলে তা সঙ্ঘবদ্ধ রূপ নেয়। তার প্রভাব দলের সংগঠনেও পড়ে। দল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কর্মিসভায় নেতৃত্ব ফ্লেক্স-ব্যানারের থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে দেওয়াল লেখায়।

কী বলছে বাকি দলগুলি?

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আমরা বরাবরই দেওয়াল লেখায় জোর দিই। সেই সঙ্গে বাড়ি বাড়ি প্রচারেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাকি দুই বড় দল কংগ্রেস ও বিজেপি দেওয়াল লেখার সঙ্গে হোর্ডিং-ফ্লেক্সেও জোর দিচ্ছে। কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন দেওয়াল লেখাতেই জোর দিয়েছি। তবে, ক’দিন পরে অন্য দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে ফ্লেক্স, হোর্ডিং টাঙাতে হবেই।’’ একই সুর বিজেপি জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীরও। তিনি বলেন, ‘‘দেওয়াল লেখা ও ফ্লেক্স-হোর্ডিং এক সঙ্গেই চলবে। যে ভাবে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, সেটাই আমরা করব।’’

গত বিধানসভা ভোট থেকে এক বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটেও দেখা গিয়েছে, পাড়ার মোড়ে বা বড় রাস্তার ধারে দলনেত্রীর ছবি সম্বলিত ফ্লেক্স-ব্যানার টাঙাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল নেত্রীর হাতজোড় করা ছবির নীচে প্রার্থীর ছবি। সঙ্গে তাঁকে ভোট দেওয়ার আবেদন।

এ বার পুরুলিয়ায় লোকসভা ভোটের প্রচারের গোড়ার পর্বে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ফ্লেক্স, হোর্ডিং তুলনায় কম। বরং রঙের কৌটো আর তুলি হাতে নিয়ে দেওয়াল লিখছেন কর্মীরা। বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, পাড়া থেকে পুরুলিয়া শহর— সর্বত্রই এক ছবি। কর্মীদের পাশাপাশি নেতারাও কোথাও কোথাও দেওয়াল লিখছেন।

জেলা তৃণমূলের বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি তথা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও দেওয়াল লিখতে পছন্দ করেন। নিজের এলাকা পুঞ্চা থেকে এ বার প্রচার শুরু করেছেন দেওয়াল লেখা দিয়েই। সুজয়বাবুর কথায়, ‘‘কোথাও দু’-এক জন কর্মী গিয়ে ফ্লেক্স টাঙিয়ে দিয়ে চলে এল। তাতে প্রার্থীর প্রচার হয়তো হয়, কিন্তু পাড়ায় দাঁড়িয়ে এলাকার ছেলেরা দেওয়াল লিখলে, তার প্রভাব অনেক বেশি পড়ে। কেউ কোনও প্রশ্ন করলে দলের কর্মীরা তার জবাব দেওয়ার সুযোগ পান। কারও কোন অভিযোগ থাকলেও কথাবার্তার মাধ্যমেই হয়তো সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়ে যায়।’’ তিনি জানান, দেওয়াল লেখার অনেক উপাদানও এলাকার লোকেদের কাছ থেকে পাওয়া যায়।

কী বলছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা? পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডুড়কু গ্রামের বাসিন্দা শিবরাম কালিন্দী দীর্ঘদিন তৃণমূলের দেওয়াল লিখে যাচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটে জিতে তিনি বর্তমানে পুরুলিয়া ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘দেওয়াল লেখার আনন্দই আলাদা। এ বারও নেমে পড়েছি।’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের দুমদুমি গ্রামের কর্মী শ্রীকান্ত গড়াই বলেন, ‘‘ভোটের পরে ব্যানার, হোর্ডিং ছিঁড়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। খারাপ লাগে। দেওয়াল লেখায় সে ভয় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE