Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রথম শ্বশুরবাড়ি এলেও অনেক কিছু শিখে নিতে হয়’

শুনে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। নদিয়ার তৃণমূল সভাপতি এবং অভিভাবকতুল্য গৌরীশঙ্কর দত্তের কাছে ভেঙে পড়ে জানিয়েছিলেন, বোধহয় এই গুরুদায়িত্ব বইতে পারবেন না।

রূপালী বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

রূপালী বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

মাত্র দু’মাসে তাঁর রূপান্তর হয়েছে।

গেরস্থালি নিয়ে ব্যস্ত অল্পবয়সি গ্রামের বউ। বিয়ে হয়েছিল বছর তিনেক। দেড় বছরের ছেলে। যৌথ সংসার, ব্যস্ত রাজনীতিবিদ স্বামী। বাড়ির বাইরে একা বেরোতেন না তেমন। গলা তুলে কথা বলতেও শোনেনি কেউ। আচমকা গত সরস্বতী পুজোর আগের রাতে পৃথিবী বদলে গেল। খুন হয়ে গেলেন প্রভাবশালী স্বামী। কয়েক দিন কাটতে না কাটতেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, পঁচিশ বছরে পা রাখতে চলা রূপালী বিশ্বাস তৃণমূলের হয়ে লড়বেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে।

শুনে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। নদিয়ার তৃণমূল সভাপতি এবং অভিভাবকতুল্য গৌরীশঙ্কর দত্তের কাছে ভেঙে পড়ে জানিয়েছিলেন, বোধহয় এই গুরুদায়িত্ব বইতে পারবেন না। সেই রূপালি ভোর থেকে গভীর রাত শুধু ছুটছেন। শান্ত অথচ আত্মবিশ্বাসী গলায় বলছেন, ‘‘আমার স্বামী সত্যজিৎ বিশ্বাস মারা যাওয়ার এক মাসের মধ্যে দেখেছি বাড়িতে মানুষ আসা কমে গিয়েছে। যাঁরা ভিড় করে থাকতেন তাঁরা উধাও। এটাই সাধারণ মনস্তত্ব। আমার স্বামীর নাম ছিল, ক্ষমতা ছিল। তাই তখন তাঁদের প্রয়োজন ছিল। সেই জায়গাটা আমাকে ফেরাতে হবে।’’

সেই ভিতু মেয়েটাকে এত তাড়াতাড়ি পাল্টে দেওয়ার জোর পেলেন কী করে? ত্রহ্যস্পর্শ ছিল মারাত্মক। একে স্বামীশোক সামলানো, দ্বিতীয়ত ছেলের দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্র-পরিস্থিতির সঙ্গে মানানো। দলের ঘনিষ্ঠরা বলছিলেন, কী ভাবে প্রচারে বেরিয়ে হাত নাড়বেন, অপরিচিতের সঙ্গে কথা বলবেন—কিচ্ছু ধারণা ছিল না। থতমত খেতে হয়েছে, আড়ষ্ট হয়ে থেকেছেন, বক্তৃতায় খেই হারিয়েছেন। কিন্তু তাঁর নিজের কথায়, ‘‘সময় আর পরিস্থিতি সব কিছু শিখিয়ে নেয়।’’ যেমন তিনি সকাল ছ’টায় উঠে ছেলেকে খাইয়ে, নিজে তৈরি হয়ে হুডখোলা গাড়িতে সাতটার মধ্যে প্রচারে বেরিয়ে পড়ার ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ শিখেছেন। সাবলীল কথা বলা, মিছিলে পা মেলানো এবং প্রয়োজন পড়লে দলীয় কর্মীদের কড়া গলায় ধমক—সবকিছুই গত ৬০-৬২টা দিন তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছে। ‘‘আমি আমার স্বামীকে দেখেছি কাজ করতে, শিখে নেব। বাড়ির লোক পাশে আছে। দলের লোকেরা আছে।’’ একটুও হোঁচট না-খেয়ে রূপালী বলেন, ‘‘মেয়েরা যখন শ্বশুরবাড়ি আসে তখনও অনেক কিছু জানে না। শিখে নেয়। দিদিও যেমন আমাকে সে দিন হাতে ধরে শেখালেন, কী ভাবে শাড়িতে পিন লাগিয়ে দ্রুত হাঁটতে হয়। জীবন আমাকে সব শিখিয়ে দেবে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তিনি আর ভয় পান না। বললেন, ‘‘আমি ভাবিনি এই দায়িত্ব পাব। যখন মুখ্যমন্ত্রীর মতো মানুষ আস্থা রেখেছেন তখন আমার পিছিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। লড়তে আমাকে হবেই। ছেলেকে বড় করতে হবে। আর সত্যজিৎ চলে যাওয়ার পর যে জায়গাটা খালি হয়েছে সেটাও ভরাট করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE