Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

রাজীবের রাজ্যে ফেরা নিয়ে জল্পনা, আইনি লড়াইয়ের ভাবনাও

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজীবকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যাওয়ার (নির্দেশিকার পরিভাষায় অ্যাটাচড) নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

রাজীব কুমার

রাজীব কুমার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

এডিজি (সিআইডি) পদ থেকে সদ্য অপসারিত আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার ভোট শেষে রাজ্যে সরকারের পদে নির্বিঘ্নে যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। জল্পনা এতটাই তীব্র যে, সম্ভাব্য আইনি লড়াইয়ের ভাবনাচিন্তাও চলছে সমান্তরাল ভাবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজীবকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যাওয়ার (নির্দেশিকার পরিভাষায় অ্যাটাচড) নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল রাজীবের। নবান্ন সূত্রের খবর, এ দিন সকালের বিমানে দিল্লি উড়ে যান রাজীব। তবে সকাল দশটার পরিবর্তে প্রায় বেলা দেড়টা নাগাদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পৌঁছন তিনি। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তিনি জানান, রাজ্য সরকারে কাছ থেকে ছাড়পত্র পেতে দেরি হওয়ায় তিনি সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তাঁর ওই যুক্তি মেনে নেয় মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘুরে ফের বঙ্গভবনে ফিরে আসেন তিনি। রাজীব কুমার দিল্লিতে চলে আসায় তাঁর দায়িত্বভার আজ আইজি সিআইডি অজয় কুমারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে রাজীব কুমারের রক্তচাপ বাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সিবিআই সারদা কাণ্ডের তদন্তের স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার যে আবেদন করেছিল, আগামিকাল সেই মামলায় রায় দেবে তারা।

সাধারণত ভোট শেষের পরে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলেই নির্বাচনের সময়ে অপসারিত অফিসারদের স্বপদে বহাল করে থাকে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজীবকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে নির্বিঘ্নে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। আধিকারিকদের একটি অংশের যুক্তি, আইএএস অফিসারদের ক্ষেত্রে ডিওপিটি (ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং) এবং আইপিএস-দের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার কন্ট্রোলিং অথরিটি) হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ ক্ষেত্রে রাজীব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যোগ দেওয়ায় তাঁকে ফিরিয়ে আনতে হলে রাজ্যকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্র নিতে হবে। ফলে অপসারিত অন্য অফিসারদের মতো স্বপদে ফিরিয়ে আনা অতটা নির্বিঘ্নে হবে না বলেই মত রাজ্যের আমলাদের একাংশের। তবে আমলাদের অন্য অংশের যুক্তি, অন্যদের মতো ভোটের পরে নির্দেশিকা জারি করে রাজীবকে নিয়োগ করতেই পারে রাজ্য। তাই তার জন্য মন্ত্রকের ছাড়পত্র নিতে হবে না। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বুধবার কমিশনের নির্দেশিকা হাতে পেয়ে ওই রাতেই পাল্টা নির্দেশিকা জারি করে রাজীবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যেতে বলেছিল রাজ্য সরকার। ভোটের পরে একই ভাবে আরেকটি নির্দেশিকা জারি করে তাঁকে রাজ্যে ফিরে আসতে বলা হতে পারে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ আমলাদের একাংশের মত ভিন্ন। তাঁদের যুক্তি, এ ভাবে কোনও অফিসারকে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায় না। কারণ, আইপিএস বা আইএএস-দের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ থাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতেই। একই মত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তারও। তাঁর মতে, কোনও অফিসারকে কেন্দ্রীয় ক্যাডারে যোগ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন হয়। পশ্চিমবঙ্গেই একাধিক আমলা দিল্লিতে ডেপুটেশনে যেতে চেয়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করে রেখেছেন। কিন্তু রাজ্য অনুমতি না দেওয়া তাঁরা যোগ দিতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে রাজীব কুমার কিন্তু ডেপুটেশনে দিল্লিতে আসেননি। কারণ নির্বাচন কমিশন কোনও অফিসারকে ডেপুটেশনে পাঠাতে পারে না। তাদের সেই ক্ষমতা নেই। রাজ্যকে এড়িয়ে কোনও অফিসারকে স্থায়ী ভাবে বদলিও করা যায় না। নির্বাচনের সময়ে কমিশন কেবল সাময়িক সময়ের জন্য বলতে পারে, আপাতত রাজ্যে ওই অফিসারের প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কমিশন নির্দেশিকায় ‘আ্যাটাচড’ কথাটি লেখার অর্থ হল, ওই অফিসার তাঁর নিজের ‘পেরেন্ট ক্যাডার’-এ (রাজীব কুমারের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) থাকবেন। তাঁর বেতন দেবে রাজ্য সরকার। কেবল তাঁর কাজের জায়গা পরিবর্তন হবে। তবে হঠাৎ করে বদলি করায় নিয়ম মেনে ছুটির আবেদন করতে পারবেন রাজীব। তার পর আদর্শ আচরণবিধির সময়সীমা শেষ হলেই পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যেতে রাজীবের সমস্যা হবে না বলে মনে করেন ওই আমলা। তা ছাড়া বিষয়টি আইনের চোখে চ্যালেঞ্জযোগ্য বলেও মনে করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কথায়, সাধারণত নির্বাচনের সময়ে কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেয় কমিশন। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ রাজীব কুমার ছিলেন সিআইডি দফতরে। যে দফতরের সঙ্গে ভোটের কাজের কোনও সরাসরি যোগাযোগ নেই। স্বরাষ্ট্র কর্তারা নিশ্চিত যে, রাজীব কুমার সিআইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজে এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবে নাক গলিয়েছিলেন। তাই তাঁকে রাজ্য থেকেই সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

একটি সূত্রের দাবি, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড-শোর দিনে দিল্লির বিজেপি নেতা তেজিন্দর পাল সিংহ বাগ্গা কলকাতায় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে একটি টুইট করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, তার পরেই ১৪ মে রাত দু’টো নাগাদ মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে হানা দেন রাজীব কুমার স্বয়ং। বাগ্গাকে সেখান থেকে আটক করে নিউ মার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানতেন না স্বয়ং কলকাতা পুলিশ কমিশনারও। রাজ্যের নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা কমিশনের কাছে রিপোর্টে জানায়, সামান্য একটি টুইটের জন্য কলকাতা পুলিশকে না জানিয়ে রাজীবের নেতৃত্বে হানা দিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ করেছে সিআইডি। যা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পরে বাগ্গাকে নিঃশর্তে ছেড়েও দেয় পুলিশ। কমিশন সূত্র বলছে, রাজীবের ওই বাড়াবাড়ি দেখেই তাঁকে দিল্লিতে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE