Advertisement
E-Paper

অধীর বধে তাঁর হারানো ‘চোখ’ই ভরসা

মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের অন্দরমহলে এই চর্চার আয়ু প্রায় দুই দশক ধরে। তিনি ডেভিড, কান্দির তিন বারের বিধায়ক অপূর্ব সরকার।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:২৩

বছর দুয়েক আগেও তিনি ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘দু’টি চোখ’!

কান্দি মহকুমা তো বটেই জেলা কংগ্রেসের খুঁটিনাটি দেখভালের প্রশ্নেও অধীরের অনুপস্থিতি অনায়াস দক্ষতায় সামলে দিতেন তিনিই।

মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের অন্দরমহলে এই চর্চার আয়ু প্রায় দুই দশক ধরে। তিনি ডেভিড, কান্দির তিন বারের বিধায়ক অপূর্ব সরকার।

তাঁর দাদা বাপি, যাঁর সাবেক নাম পার্থপ্রতিম সরকার, অধীরের বিশ্বস্তের তালিকায় তিনিও ছিলেন কাছাকাছি।

ডেভিড এবং বাপি, কান্দির বিধায়ক এবং পঞ্চয়েত সমিতির সহকারি সভাপতি— অধীরের সেই দু’টি ‘দুই চোখ’ই এখন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নয়নমণি’।

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তাই অধীরের বিরুদ্ধে ডেভিড ছাড়া কাকেই বা ভাবতে পারত তৃণমূল।

এ হেন ডেভিডের রাজনৈতিক অতীত বলছে—কান্দির এক সময়ের ‘রাজাবাবু’, তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অতীশ সিংহ ২০০৬ সালে ভোটে কংগ্রেসের ‘হাত’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কান্দি বিধানসভার দলীয় ওই প্রার্থীকে মানতে পারেননি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ‘হাত’ প্রতীকের প্রৌঢ় অতীশের বিরুদ্ধে কুঠার প্রতীকে লড়িয়ে দিয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী অপূর্ব সরকারকে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে সে বার বিধায়ক নির্বাচিত হন কান্দি পুরসভার কাউন্সিলর ডেভিড।

কিন্তু, প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে, ভাই ডেভিড এখন তিন দশকের পুরনো ‘দাদা’র বৃত্ত থেকে ছিটকে নব্য ‘দিদি’র বৃত্তে অনুপ্রবেশ করলেন কেন?

আশির দশকে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় ফেরার অধীর ডেভিডদের বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন অগুন্তিবার। তখন থেকে অধীরের সঙ্গে এসএফআই সংগঠক ডেভিডের ঘনিষ্ঠতার শুরু। অধীরের মতোই ডেভিডও ছাত্রাবস্থায় ক্লাব, খেলাধূলা, যাত্রাদল ভাড়া করার মতো সামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকতেন। বাম রাজনীতি ছেড়ে ১৯৯৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে অধীরের হয়ে প্রচারে নামেন ডেভিড। নবগ্রামের বিধায়ক অধীর চৌধুরী ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হলে কান্দি মহকুমার তিনটি বিধানসভার কংগ্রেসের হাল ধরেন ডেভিড। অধীর-রাজনীতির অলিগলি চষে বেড়ানো ডেভিড ২০১৭-এর ৮ মার্চ কংগ্রেসের ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বছর দুয়েক আগেও কান্দি মহকুমা কংগ্রেসের সংগঠন, সাংসদ ও বিধায়ক তহবিলের এলাকা উন্নয়নের কাজ ও ভোটপ্রচার-সহ যাবতীয় রাশ ধরা ছিল ডেভিড-পার্থর মুঠোয়। সেই ডেভিড কেন তাঁর দীর্ঘ দিনের ‘দাদা’র ‘হাত’ ছেড়ে দিয়ে ‘দিদি’র ‘ঘাসফুল’ তুলে নিলেন? ডেভিডের সপাট জবাব, ‘‘বিধায়ক হয়েও বিধানসভায় আমাকে বলতে দেওয়া হত না। প্রদেশ কংগ্রেসের সভায় ডাকা হত না। আমি দল ছাড়িনি। এক অদৃশ্য হাতের নির্দেশে আমাকে দল থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।’’

যা শুনে অধীর বলছেন, ‘‘দল ছেড়ে প্রলোভনে পা বাড়ালে এমন অনেক কথাই বলতে হয়!’’ আর অধীরের সাম্প্রতিক কালের সর্বক্ষণের সঙ্গী বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্থী বলছেন, ‘‘অধীর চৌধুরীর দৌলতে বিধায়ক হয়ে, কংগ্রেসের খেয়ে পরে, সম্পদের পাহাড় জমিয়ে এখন কংগ্রেসের নিন্দা করছে! আসলে খলের কখনও ছলের অভাব হয় না।’’ তাঁর দাবি, কান্দি পুরসভাকাণ্ডে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের তাড়া খাওয়া ডেভিডের আত্মমর্যাদার বোধ জাগল ১২ বছর বিধায়ক থাকার পর, এখন, ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় রক্ষা করার কায়েমি স্বার্থের কারণে ডেভিডের তৃণমূলে যোগদান।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Adhir Chowdhury Congress TMC Berhampore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy