Advertisement
১৯ মে ২০২৪
নির্বাচন কমিশনের ‘গুঁতো’ আরামবাগে

সন্ত্রস্ত ভোটার বাড়ল ২০ গুণ!

ক’দিন আগেও আরামবাগে সন্ত্রস্ত ভোটারের (ভালনারেবল ভোটার) সংখ্যা থানাপিছু ছিল ১০-২০ জন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়ে সেই তালিকা এক লাফে বাড়ল প্রায় ২০ গুণ!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

পাল্টে গেল হিসেব!

ক’দিন আগেও আরামবাগে সন্ত্রস্ত ভোটারের (ভালনারেবল ভোটার) সংখ্যা থানাপিছু ছিল ১০-২০ জন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়ে সেই তালিকা এক লাফে বাড়ল প্রায় ২০ গুণ!

বুধবারই আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকার থানাগুলি (আরামবাগ, পুরশুড়া, হরিপাল, তারকেশ্বর, খানাকুল, গোঘাট এবং চন্দ্রকোনা) থেকে সংশোধিত তালিকা পাঠানো হল কমিশনে। আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় সোমবার পর্যন্ত সন্ত্রস্ত ভোটার ছিলেন ১০ জন। সংশোধিত তালিকায় তা হল ২৫০ জন। ভোট যত এগিয়ে আসবে, সব থানা এলাকাতেই ওই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিরোধীরা।

কিন্তু কেন পাল্টে গেল হিসেব?

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবারই ভোটের সময় অশান্তি করতে পারেন এমন রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং সন্ত্রস্ত ভোটারের সংখ্যা জানাতে হয় কমিশনকে। সেইমতো প্রথম দফায় ওই দুই বিভাগে থানাগুলি যে তথ্য দিয়েছিল, তাতে ভোটে অশান্তি করতে পারেন, এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংখ্যা সন্ত্রস্ত ভোটারের তুলনায় থানাপিছু বেড়ে গিয়েছিল ১০ থেকে ১৫ গুণ। এই অসামঞ্জস্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই সময় বিভিন্ন থানা ভোটে অশান্তি পাকাতে পারেন, এমন গড়ে ১০০ জন সম্ভাব্য রাজনৈতিক ব্যক্তির তালিকা দিয়েছিল। সংশোধিত তালিকায় অবশ্য সেই সংখ্যাও প্রায় চার গুণ বেড়েছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রথম দিকে অনেক মানুষ নিজেদের অসুবিধের কথা জানাচ্ছিলেন না। আমরা পুরনো রাজনৈতিক ইতিহাস এবং স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ভোটারদের চিহ্নিত করি। এখন আমরা তাঁদের কাছে যাচ্ছি। কমিশনের সেক্টর অফিসাররাও নিয়মিত তাঁদের কাছে গিয়ে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করছেন।’’ সন্ত্রস্ত ভোটারের সংখ্যা কমবে বলে দাবি ওই পুলিশকর্তার।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিরোধীরা অবশ্য ওই দাবিকে আমল দিতে রাজি নন। তাঁরা মনে করছেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে সন্ত্রস্ত ভোটারের তালিকা তত দীর্ঘ হবে। সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ইতিমধ্যে আরামবাগের পুঁইন গ্রাম, গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়া সর্বত্র রাজ্যের শাসকদলের হুমকি শুরু হয়েছে। গোঘাটে রাতের অন্ধকারে আমাদের নেতা তিলক ঘোষের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ভোট যত কাছে আসবে, এ সব তখন থেমে যাবে ভেবেছেন?” প্রায় একই অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেসেরও। বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূল গ্রামে গ্রামে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের ছেলেরা প্রতিহত করছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার দাবি, ‘‘কোথাও কোন সন্ত্রাস নেই। বিরোধীরা মিথ্যা কথা বলে এলাকা অশান্ত করতে চাইছে। যাদের সঙ্গে মানুষই নেই তাঁদের ভয় দেখিয়ে সময় নষ্ট করবে কে!’’

ভোটের সময় আরামবাগে রাজনৈতিক হিংসার ধারাবাহিকতা বেশ পুরনো, সেই বাম আমল থেকেই। এক সময়ে হুমকি, শাসানি, মারধর, ভাঙচুর এবং অস্ত্রের ঝনঝনানির যে অভিযোগ বামেদের বিরুদ্ধে উঠত, রাজ্যে পালাবদলের পরে এখন সেই অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনেও হিংসা কম হয়নি। তৃণমূলের সন্ত্রাসে এখনও তাদের অনেকে ঘছাড়া বলে সিপিএমের দাবি।

তেমন গোলমাল সামনে না-এলেও মানুষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বাজার কমিটিগুলির দাবি, মিছিল-মিটিং, বোমা ফাটানো ইত্যাদি রাজনৈতিক উন্মাদনার প্রথম কোপটি পড়ে স্থানীয় বাজার-হাটে। তাই অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি শুরু হোক। সেই বাহিনী কবে মোতায়েন হবে, তা অবশ্য এখনও জানায়নি প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE