Advertisement
০২ মে ২০২৪
বিতর্কে যাদবপুর

লুক আউট নোটিস কেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে

কোনও সন্ত্রাসবাদী নয়, নয় কোনও খুনের আসামি কিংবা প্রতারকও। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে ‘লুকআউট নোটিস!’ পুলিশ বা কোনও তদন্তকারী সংস্থা অবশ্য এই নোটিস জারি করেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগীয় প্রধান নোটিসটি দিয়েছেন।

সুপ্রিয় তরফদার ও মধুরিমা দত্ত
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৩
Share: Save:

কোনও সন্ত্রাসবাদী নয়, নয় কোনও খুনের আসামি কিংবা প্রতারকও। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে ‘লুকআউট নোটিস!’ পুলিশ বা কোনও তদন্তকারী সংস্থা অবশ্য এই নোটিস জারি করেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগীয় প্রধান নোটিসটি দিয়েছেন। ওই বিভাগেরই এক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অপরাধ, কোনও কারণ না দেখিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে অনুপস্থিত তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যাদবপুরের ফার্মাসিটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ কয়েক দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তবে অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে বিভাগীয় প্রধানকে কিছুই জানাননি। বিভাগের নোটিসবোর্ডে এর পরেই লক্ষ্মীকান্তবাবুর বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। ওই নোটিসের বিষয় হিসেবে লেখা আছে ‘লুকআউট নোটিস’। তাতে লেখা হয়েছে, ‘শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ কোনও ছুটি না নিয়ে বিভাগীয় প্রধানকে না জানিয়ে দীর্ঘদিন ক্লাসে আসছেন না। কারও কাছে ওঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকলে তা যেন বিভাগীয় প্রধানকে জানানো হয়।’

শুধু বিভাগের নোটিসবোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়াই নয়, ওই নোটিসটি পাঠানো হয়েছে লক্ষ্মীকান্ত বাবুর কাছেও। ওই শিক্ষক নোটিসের ভাষা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কুত্সা রটানোর অপপ্রচেষ্টা’ বলেই মনে করছেন। লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, ‘‘আত্মীয়ের অসুস্থতার কারণে আমি দিন তিনেকের ছুটি নিয়েছিলাম। তার মধ্যেই এমন ঘটনা।’’ ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘এ ধরনের নোটিস বিভাগীয় প্রধান জারি করতে পারেন না। উনি (বিশ্বজিৎবাবু) ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন।’’ এই ঘটনায় তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছেও।

কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে এ ভাবে কেন ছুটি নিলেন তিনি? লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, ‘‘আমার আত্মীয়ের অসুস্থতা এতটাই বেশি ছিল যে আমি কোনও খবর দিতে পারিনি। কাজে যোগ দিয়ে সবটাই জানিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে। এ ভাবে আমাকে অপমান করার কোনও প্রয়োজন কিন্তু ছিল না।’’

ফার্মাসিটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘নোটিস বোর্ডে ‘লুকআউট’ লিখে বিভাগীয় প্রধানের চিঠিটি যে ভাবে ঝুলছে, তা আমাদের শিক্ষক সমাজের কাছে যথেষ্ট মানহানিকর।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সাধারণত আদালতের নির্দেশে পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থা কোনও অপরাধীর বিরুদ্ধে এই নোটিস জারি করতে পারে। সমস্ত বন্দর এবং বিমানবন্দরে তাঁকে নিয়ে সতর্কতা জারি হয়। দেশ ছেড়ে কোথাও পালাতে গেলেই ধরা পড়ে যায় সেই অপরাধী। তাই ‘লুকআউট নোটিস’ কথাটার সঙ্গেই অপরাধীর একটা সম্পর্ক রয়েছে। লোকজন বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। এটা যথেষ্ট অপমানজনক।’’

নিজের এক জন সহকর্মীর বিরুদ্ধে এই রকম নোটিস তিনি কেন দিলেন? বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ওঁর গরহাজিরা নতুন কোনও বিষয় নয়। অনেক দিন ধরে এটি লক্ষ্য করেই আমি চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ কিন্তু চিঠির ভাষা নিয়েই তো শিক্ষকেরা প্রশ্ন তুলছেন! এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওই নির্দিষ্ট শব্দটির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ওই ভাবে বিষয়টি বলতে চাইনি।’’ কী বলছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস? তিনি জানান, নোটিসের বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

look out notice JU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE