বিচারাধীন অবস্থায় দীর্ঘদিন জেলে থাকতে থাকতে এক ধরনের দার্শনিক উপলব্ধিতে পৌঁছে গিয়েছেন মদন মিত্র। ‘‘আসলে মানবজীবনটাই তো একটা জেলখানা। এক জায়গায় ছিলাম। আবার অন্য এক জায়গায় যাচ্ছি,’’ রবিবার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে আলিপুর জেলে ফিরে যাওয়ার মুখে বলেছেন তিনি।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এসএসকেএম প্রায় ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর কাছে। এই দফায় মাস দুয়েক ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে রবিবার জেলে ফিরে গেলেন তিনি। যাওয়ার আগে ইঙ্গিত দিলেন, তিনি এখন আর প্রভাবশালী নন। তাই নতুন উদ্যমে জামিন পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
দার্শনিকতা অবশ্য প্রাক্তন মন্ত্রীর কারাবাসের যন্ত্রণা ঢাকতে পারছে না। এ দিন এসএসকেএম থেকে বেরোনোর মুখে মদনবাবু বলেন, ‘‘সারদা কাণ্ড আমার রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। ১৮ মাস জেলে আছি। রোজ ২৫-৩০ রকমের ওষুধ খেতে হয়। শারীরিক ভাবে আর পেরে উঠছি না। পরবর্তী শুনানিতে জামিনের আবেদন করব।’’ তার পরেই একটু লঘু সুরে ফিরে যান তিনি। বলেন, ‘‘আমি এখন আর প্রভাবশালী নই। এক জন প্রাক্তন। আগে জানলে প্রসেনজিৎকে (সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘প্রাক্তন’-এর নায়ক) বলতাম, ওর জায়গায় আমি ‘প্রাক্তন’-এ অভিনয় করব। ও যেন আমাকে (ভূমিকাটা) ছেড়ে দেয়!’’
এ দিন জেলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মদনবাবুকে। তখনই প্রাক্তন মন্ত্রী জানান, নারদ স্টিং অপারেশন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্তের নির্দেশ তিনি সমর্থন করেন। বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ঠিক। যখন তদন্ত হচ্ছিল না, তখন অনেকে সরব হয়েছিলেন। আবার মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে তাঁরাই মুখ খুলছেন। এই দ্বিচারিতা কেন?’’ নারদ স্টিং অপারেশনের মূল হোতা ম্যাথু স্যামুয়েলসকে কটাক্ষ করে মদনবাবুর মন্তব্য, ‘‘স্টিং অপারেশন নিয়ে সরকারের তরফে যখনই কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখনই পাল্টা মন্তব্য করছেন উনি। ম্যাথু কি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি?’’
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন মদনবাবু। তার পরে একাধিক বার জেল থেকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএমে যেতে হয়েছে তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে তাঁর অবস্থান নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির তো কটাক্ষ করছিলই। এমনকী বিষয়টি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলেছে সিবিআই-ও। গত নভেম্বরে জেলে যাওযার পরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের মন্দির ওয়ার্ডই কার্যত হয়ে উঠেছিল এই প্রাক্তন মন্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা। ২১ এপ্রিল তাঁর কেন্দ্র কামারহাটিতে ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে যাওয়ার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন মদনবাবু। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগে। তখন থেকে ওই হাসপাতালেই ছিলেন তিনি।
এসএসকেএমের খবর, মদনবাবু এখন আগের থেকে অনেকটাই ভাল আছেন। মাঝেমধ্যে ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে যাওয়া ছা়ড়া তাঁর মানসিক উদ্বেগ থেকে শুরু করে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। চিকিৎসকদের মতে, তাঁকে হাসপাতালে রাখার দরকার নেই। যেখান থেকে তিনি হাসপাতালে আসেন, তাঁকে সেই জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতেই পারে। জেলে তাঁকে ২৪ ঘণ্টা কড়া নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ দিন বেলা ১টা নাগাদ মদনবাবুকে কড়া নিরাপত্তায় এসএসকেএম থেকে আলিপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। জেল সূত্রের খবর, মদনবাবুকে ফের পাঠানো হয়েছে সেই মন্দির ওয়ার্ডেই। জেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘কড়া নজরদারিতেই প্রাক্তন মন্ত্রীকে মন্দির ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েক জন কারারক্ষী ছাড়া বাকি বন্দি ও রক্ষীদের ওই ওয়ার্ডে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy