Advertisement
০৩ মে ২০২৪

চাই দুধকুমারকে, দাবি তুলল মাখড়া

দাবি নতুন নয়। পদ ছেড়ে সরে যাওয়ার পরেই শোনা গিয়েছিল। জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে সামনে পেয়ে মঙ্গলবার ফের দুধকুমার মণ্ডলকে বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতির পদে ফেরানোর সেই দাবিই উঠল।

বিজেপি নেতৃত্বের সামনে কথা রাখছেন মাখড়ার মানুষ। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বিজেপি নেতৃত্বের সামনে কথা রাখছেন মাখড়ার মানুষ। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

মহেন্দ্র জেনা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৩৫
Share: Save:

দাবি নতুন নয়। পদ ছেড়ে সরে যাওয়ার পরেই শোনা গিয়েছিল। জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে সামনে পেয়ে মঙ্গলবার ফের দুধকুমার মণ্ডলকে বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতির পদে ফেরানোর সেই দাবিই উঠল। কর্মী-সমর্থকদের দাবি শুনে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের আশ্বাস, ‘‘দুধকুমার দলেই আছেন। তাঁকে ঠিক সময়ে, ঠিক পদে ফেরানো হবে।”

কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে মঙ্গলবার পাড়ুইয় থানার মাখড়া গ্রামে সভা করেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। এই মাখড়াই গত বছর অক্টোবরে বিজেপি-তৃণমূল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখেছিল। তাতে প্রাণ গিয়েছিল তিন জনের। বীরভূমে বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি ‘মাখ়়ড়াকে নন্দীগ্রাম’ করে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক এ দিন দিলেন নেতারা। কিন্তু, তাল কাটল কয়েক ঘণ্টার নোটিসে জড়ো হওয়া ভিড়ের সামনে সুভাষবাবু বক্তৃতা দিতে উঠলেই। হঠাৎই মোজাই মল্লিক নামে স্থানীয় এক বিজেপি নেতা দুধকুমারকে পদে ফেরানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘‘মাখড়া আজও বিজেপির সঙ্গে আছে। কিন্তু, দুধকুমারকে দলে ফিরিয়ে আনা হোক। আরও লক্ষ মানুষ দলে আসবে!’’

ঘটনাচক্রে লোকসভা ভোটের আগে দুধকুমারের জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পিছনে জেলা বিজেপি-র যে ক’জন নেতার নাম শোনা গিয়েছিল, তাঁদের কেউ কেউ ছিলেন এ দিনের সভায়। তাঁরা কোনও মন্তব্য না করলেও জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সিংহ, সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায় ও সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে নিয়ে সভার পর সুভাষবাবুর আশ্বাসে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের কথায় স্বস্তির সুর শোনা যায়। সভায় না থাকলেও জেলা সভাপতি অজুর্ন সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘কে কোন পদে যাবে, কোন পদে থাকবে সম্পূর্ণ রাজ্য নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল। রাজ্য যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে।’’

সুভাষবাবুর দাবি, কয়েক ঘণ্টার নোটিসে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিন শহিদ পরিবার, আক্রান্ত এবং বাসিন্দাদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের শাসক দল তৃণমূল মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তাদের জামিনের বিষয়, আদালতের কাজ কর্মের অগ্রগতির কথা জানানোর জন্যও এসেছি। অথচ, কীভাবে শয়ে শয়ে মানুষ খবর পেয়ে এসেছেন মাখড়া গ্রামে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না!’’

দিন কয়েক আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এলাকার দুই বিজেপি নেতৃত্ব হৃদয় ঘোষ ও নিমাই দাস। যাঁদের সঙ্গে নিয়েই দুধকুমার পাড়ুই থানা এলাকায় বিজেপির শক্ত জমি তৈরি করেছিলেন। জেলার রাজনৈতিকমহল মনে করে, দুধকুমার সরে যাওয়ার পরই এলাকার কর্মী-সমর্থকদের মন ভেঙে যায়। এবং, হৃদয়-নিমাইদের মতো বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-নেতাদের যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূলে যোগ দেন। দিন দু’য়েক আগে হৃদয়-নিমাইদের নিয়ে পাড়ুইয়ে সভা করে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন, পাড়ুই তথা বীরভূম থেকে বিজেপি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

তৃণমূল নেতাদের সে দাবিকে কটাক্ষ করেন এ দিন বিজেপি নেতৃত্ব। সুভাষবাবু বলেন, “বোমা, বন্দুকের সন্ত্রাস, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দল ও সংগঠন হয় না। তৃণমূল দেখুক, এ দিনের সভার স্বতঃস্ফূর্ততা। শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, শেষবার জেলা সফরে এসে মাখড়া ও সংলগ্ন এলাকাকে ‘নন্দীগ্রাম হতে দেব না’ বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পরে একাধিক সভা, সমাবেশে একই কথার ঘোষণাও শোনা গিয়েছে জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। এ দিন বিজেপি যেন সেই ঘোষণাকেই চ্যালেঞ্জ জানাল। আধ ঘণ্টার সভায় সুভায়বাবু ‘মাখড়াকে নন্দীগ্রাম’ করার ডাক দিয়ে শাসক দলের মিথ্যা মামলার জেরে জেলে বন্দী নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের জামিনের জন্য দল কতটা মরিয়া তা জানান। তিনি তালিকা ধরে ধরে কর্মী-সমর্থকদের জানান, প্রতিটি মামলা নিয়ে দলের পাশে থাকার কথা। তবে সুভাষবাবুর দাবি, “আমরা শান্তিপূর্ণ পথে, রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করে, গুলির জবাব দেব। মাখড়াই হবে নন্দীগ্রাম!”

সভায় ছিলেন পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি শেখ সামাদ, মাখড়ার বাসিন্দা নিহত শেখ তৌসিফ আলির বাবা শেখ শওকত আলি-সহ আক্রান্ত বহু পরিবারের সদস্য ও চৌমণ্ডলপুরের বিজেপি নেতা শেখ সদাইয়ের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এক সময় দুধকুমারের আহ্বানেই সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শেখ সামাদ। এ দিনের সভায় দুধকুমারকে ফেরানোর দাবি শুনে সামাদ বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম দুধকুমারকে ফেরানোর। রাজ্য নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।’’ অগস্টে সিউড়িতে দলীয় ধর্না মঞ্চে দুধকুমারের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মুখেও।

কী বলছেন দুধকুমার নিজে?

তিনি বলেন, ‘‘আমি বিজেপিতেই আছি। দল পদ দিয়ে ডাকলেই যে চলে যাব, এমন নয়। আমারও তো কিছুটা রাজি হওয়া-না হওয়ার স্বাধীনতা থাকছে। তা ছাড়া, জেলায় নেতৃত্ব বদল হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্ব রয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার। বিজেপির ভাল হোক চেয়েছিলাম, চাইব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE