Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডিসলেক্সিয়ায় মমতার স্পর্শ

ঈশান অবস্তির বাবা-মা ছেলের সমস্যাটা বুঝতে অনেক দেরি করেছিলেন। দিব্যা জালান করেননি। ‘তারে জমিন পর’-এর ঈশানের মতো তাই অতটা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি দিব্যার মেয়েকে।

পাশে আছি। দিব্যা জালানকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। — দেবাশিস রায়

পাশে আছি। দিব্যা জালানকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। — দেবাশিস রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

ঈশান অবস্তির বাবা-মা ছেলের সমস্যাটা বুঝতে অনেক দেরি করেছিলেন। দিব্যা জালান করেননি। ‘তারে জমিন পর’-এর ঈশানের মতো তাই অতটা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি দিব্যার মেয়েকে। ডিসলেক্সিয়া থাকা সত্ত্বেও ঠিক প্রশিক্ষণ আর সহায়তা পেয়ে দিব্যার মেয়ে এখন লেখাপড়ার জগতে চূড়ান্ত সফল।

শুক্রবার দুপুরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই কথা বলতে বলতে কান্নায় গলা বুঁজে এসেছিল ডিসলেক্সিয়া ট্রাস্ট অফ কলকাতার কর্ণধার দিব্যা জালানের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পিঠে হাত রেখে বললেন, ‘‘আপনি তো চ্যাম্পিয়ন। সঠিক সময়ে সন্তানের দিকে সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দিতে পেরেছেন। তা হলে এখন আপনার চোখে জল কেন? কান্না নয়, আপনি তো অন্যদের সামনে উদাহরণ।’’

কাকে বলে ডিসলেক্সিয়া? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটা হল অক্ষর, শব্দ বা চিহ্ন পড়তে বা বুঝতে পারার ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা। ঠিক প্রশিক্ষণে যা দূর করা সম্ভব। এই সমস্যার সঙ্গে সামগ্রিক ভাবে মেধার কোনও যোগ নেই। বিশ্বে প্রতি আট জন শিশুর মধ্যে এক জনের এই সমস্যা রয়েছে। এ দেশে বিভিন্ন রাজ্যের স্কুল বোর্ডে এখন ডিসলেক্সিয়া থাকা পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এ রাজ্যেও ২০১০ সাল থেকে পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় দেওয়া এবং লেখকের সাহায্য নেওয়ার অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁরা সবরকম ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সব স্কুলে রাতারাতি এমন শিশুদের বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা সম্ভব নয়। তাই স্কুলের পাশাপাশি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচার করার প্রস্তাব দেন তিনি। ফেসবুক, টুইটার-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন উদ্যোক্তাদের। সচেতনতা বাড়াতে সরকারের থেকে তাঁরা কেমন সাহায্য চান, সে ব্যাপারেও সবিস্তার জানাতে বলেন।

বস্তুত, ডিসলেক্সিয়া ট্রাস্ট অফ কলকাতার উদ্যোগ ‘ব্রেকিং থ্রু ডিসলেক্সিয়া’-র আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল সুরটা এ দিন বাঁধা ছিল এই তারেই— সচেতনতা। পরিবার-স্কুল-সমাজ, সব স্তরেই সমস্যাটা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকাটা জরুরি। তার সাহায্যেই বোঝা সম্ভব কোনও শিশু এই সমস্যায় ভুগছে কি না। যত দ্রুত সমস্যাটাকে চিহ্নিত করা যাবে, তত দ্রুত শিশুটি পাবে সঠিক দিশার সন্ধান। শুক্র থেকে রবি-কলকাতায় এই সম্মেলনে হাজির থাকছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন রাজ্যের নারী শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও।

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষা রূপা সান্যাল ভট্টাচার্য জানান, কিছু দিন আগে পর্যন্তও বেশির ভাগ হাই স্কুলে এই ধরনের পড়ুয়াদের তেমন দেখা মিলত না। কারণ নীচু ক্লাসেই তারা বাদ পড়ে যেত। ইদানিং ছবিটা বদলেছে। তবে এখনও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। তিনি বলেন, ‘‘ডিসলেক্সিয়ার সমস্যাটা অনুভব করে চিহ্নিত করার কাজটা কঠিন। স্কুলে বিপুল চাপের মধ্যে এক জন শিক্ষকের পক্ষে সেটা করা যথেষ্ট দুরূহ। আর তার চেয়েও বড় সমস্যা হল, বাবা-মায়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানতে চান না যে তাঁদের সন্তানের এমন কোনও সমস্যা রয়েছে।’’ তা হলে উপায়? তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যাটা বুঝে বিষয়টির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাচ্ছিল্য করে সরিয়ে রাখা চলবে না। জীবনের মূল শিক্ষা—মেনে নিতে ও মানিয়ে নিতে শেখা। ঠিক যে ভাবে ডান হাতি পড়ুয়াদের জন্য তৈরি ক্লাসরুমকে মানিয়ে নেয় বাঁ হাতি ছাত্রছাত্রীরা।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সংগঠনের কর্তাদের কাছে ডিসলেক্সিয়া সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা নতুন অভিজ্ঞতা। অনেক কিছুই জানতাম না। পরীক্ষায় যাদের ফল ভাল না হলে তারা খারাপ পড়ুয়া ভাবতাম, এখন বুঝছি তাদের অনেকের হয়তো ফল ভাল না হওয়ার অন্য কোনও কারণ রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dyslexia mamata bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE