Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘এনআরসি তো ঘচাং, মুন্ডু গেলে খাব কী!’

কোনও ভাবেই এ রাজ্যে তিনি যে এনআরসি লাগু হতে দেবেন না, ফের তা বুঝিয়ে কেন্দ্রকে পাল্টা ‘চাপ’ দিচ্ছেন মমতা।

মানুষকে নিয়ে এনআরসি মোকাবিলায় গণআন্দোলনের ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

মানুষকে নিয়ে এনআরসি মোকাবিলায় গণআন্দোলনের ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৮
Share: Save:

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) রুখতে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন’ করা হবে বলে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এনআরসি করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বাংলা রুখে দাঁড়াবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম হবে।’’

কোনও ভাবেই এ রাজ্যে তিনি যে এনআরসি লাগু হতে দেবেন না, ফের তা বুঝিয়ে কেন্দ্রকে পাল্টা ‘চাপ’ দিচ্ছেন মমতা। তাঁর প্রাণ থাকতে এ রাজ্যর বাসিন্দাদের তাড়ানো যাবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ‘সংহতি দিবসে’র অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মানুষকে নিয়ে এনআরসি মোকাবিলায় গণআন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অন্যান্য রাজ্যেও এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন হলে তৃণমূল তাদের পাশে দাঁড়াবে।’’

বাংলা কোনও ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে মাথা নত করবে না, হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সংবিধানে বলা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও ভেদাভেদ করা যায় না। হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেবে আর মুসলমানকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে, তা মেনে নেব না। এর জন্য ওরা আমার মৃত্যু সাব্যস্ত করলেও আমি প্রস্তুত।’’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসি— একই মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও এ দেশের মানুষকে অবৈধ যদি বলা হয়, তা হলে এতদিন ধরে যে সরকারগুলি দেশ চালিয়েছে তারাও কি ভুয়ো? এত বছর ধরে যাঁরা ভোটে জিতেছেন, কেউই কি দেশের নাগরিক নন? অম্বেডকর, নেহরু, অটলজি, মনমোহন সিংহ কি অনুপ্রবেশকারী?’’ বুঝিয়ে দেন, সংখ্যাগুরুর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়াই যে কোনও দেশের একতার রক্ষাকবচ।

অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কেন বাংলায় এনআরসি চালু করার জন্য বিজেপি সরকার প্রতিদিন হুঙ্কার দিচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে মমতার পাল্টা জবাব, ‘‘অনুপ্রবেশকারী কি শুধু বাংলায় রয়েছে? অসমে, ত্রিপুরায় নেই? খালি বলছে বাঙালিদের তাড়াব। বাংলা থেকে কাউকেই তাড়াতে দেব না।’’ কেন্দ্র আগামী ২০ বছর ধরে এই এনআরসি কর্মসূচি করবে বলে যে ঘোষণা করেছে, সে প্রসঙ্গে মমতার পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘আগে দু’তিন বছর তো সামলাও। তার পরে ২০ বছরের কথা ভাববে!’’

বরং দেশের ঐক্য অক্ষুণ্ণ রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা প্রস্তাব দেন, ‘‘ধর্ম, বর্ণের ভেদ না করে দেশের একশো ভাগ মানুষের জন্য নাগরিকত্বের ঘোষণা করুন, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে সমর্থন জানাব।’’

মানুষকে সতর্ক করতে মমতা বোঝান, কেন্দ্র প্রথমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে মুন্ডু কাটতে চাইছে। তাঁর কথায়, ‘‘মুন্ডু না থাকলে খাব কী? আর এনআরসি তো ঘচাং..। তাই তৈরি থাকুন, এর প্রতিবাদে যতদূর যাওয়া সম্ভব, আমাদের যেতে হবে।’’

আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলের কর্মীদের এখন থেকেই বুথে বুথে মিটিং, মিছিল করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সব আন্দোলনে বাংলাই পথ দেখায়। এই লড়াইতেও আমরাই পথ দেখাব। কেউ ভয় পেলে পাক, আমরা লড়ব। জিতব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE