সাঁওতালি নাচের তালে। বাঁকুড়ার খাতড়ার সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
মঙ্গলবার জাতিসত্তার প্রসঙ্গে বার্তা দিয়েছিলেন কুড়মিদের। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝালেন তিনি আদিবাসীদের প্রতি কতটা দরদি। বুধবার বাঁকুড়ার খাতড়ার খড়বনার সভায় নানা প্রতিশ্রুতির সঙ্গে তিনি আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি নিজের টান কতটা, সেই বার্তাও দিতে চাইলেন। মঞ্চে ধামসা বাজিয়ে সাঁওতালি নাচে পা মেলালেন। জানান, সাঁওতালি ভাষা শিখতে চান।
জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন জঙ্গলমহলের কুড়মিরা। আদিবাসীরা আবার তার বিরুদ্ধে। জঙ্গলমহলে কুড়মি ও আদিবাসী জনসংখ্যা ভালই। ফলে, দু’দিন ধরে ভারসাম্যের বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় তিনি বলেন, “কুড়মিদের একাংশ আদিবাসী।” এ দিন বাঁকুড়াতেও এক বার সে কথা বলেন। তবে বক্তব্যের বেশিরভাগটা জুড়েই ছিল ‘আদিবাসী ভাই-বোনেরা’।
মঞ্চে ওঠার আগে মমতা সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফের স্রষ্টা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর মূর্তিতে ফুল দেন। সাঁওতালিতে সম্ভাষণ করে জানান, তাঁর সরকার আদিবাসীদের সব উৎসব পালন করে। বিরসা মুন্ডা ও রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আদিবাসীদের উপরে অত্যাচার হলেও এ রাজ্যে আদিবাসীদের জমি দখল ঠেকাতে আইন করা হয়েছে। মমতা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছি, আদিবাসী এবং কুড়মি সমাজের অনেকে, যাঁরা আদিবাসী আছেন, তাঁরা প্রকৃতির পূজারি। ওঁদের সারি ও সারনা ধর্মকে অবিলম্বে স্বীকৃতি না দিলে আন্দোলন গড়ে তুলব।” তাঁর মতে, আদিবাসীদের ধর্মের একটা কোড আছে। সব ধর্মের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কেন্দ্র সব নিয়ম ভেঙে বলছে, ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ করতে হবে!
কুড়মিদের নিয়ে ভৌগোলিক সমীক্ষার কথা এ দিন ফের জানান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে যোগ করেন, “আদিবাসী ভাই-বোনদের যেন জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে কোনও অভিযোগ না থাকে, তা-ও দেখতে বলেছি।” বিশেষ সমবায় ‘ল্যাম্পস’-এর মাধ্যমে জঙ্গলজাত দ্রব্য বিক্রি করেন জঙ্গলমহলের বহু বাসিন্দা। কিন্তু কিছু ল্যাম্পসের মেয়াদ ফুরোনোয় সমস্যা হচ্ছে। বিডিওর সঙ্গে আরও চার-পাঁচ জনকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, “আমি অলচিকি ভালবাসি। কবিতাও লিখেছি। ভাল বলতে পারি না। আপনাদের কাছে ভুল বলতে বলতে ভাষাটা শেখা হয়ে যাবে।” সভার শেষে ধামসা বাজান, মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডিকে নিয়ে আদিবাসী মহিলাদের হাত ধরে নাচেনও তিনি। নৃত্যশিল্পীদের অবশ্য আক্ষেপ, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের গ্রাম গঙ্গাজলঘাটির সুয়াবাসার রাস্তার কথা জানানোর সুযোগ পেলেন না।
আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঁকুড়া জেলা গডেৎ বিপ্লব সরেনের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী যা করলেন, তা ভোটের আগে আদিবাসীদের মন পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। যদি সত্যিই কিছু করার ইচ্ছা থাকে, তা হলে যাঁরা ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্রে সরকারি চাকরি করছে, তাদের বহিষ্কার করে প্রকৃত আদিবাসীদের সুযোগ দিন।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী কুড়মি বা মাহাতো সম্প্রদায়ের ভোটকে ব্যবহার করছেন। আমাদের সঙ্গে এই সম্প্রদায়ের আলাদা সুসম্পর্ক। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদী কুড়মি নেতাদের গ্রেফতার করেছেন। লোকসভা নির্বাচনে ভোট পাবেন না জেনে সামাজিক সম্প্রদায়কে নবান্নতে ডেকেছিলেন।” মুখ্যমন্ত্রী যে সমীক্ষা করানো এবং কুড়মি আন্দোলনকে সমর্থনের কথা বলছেন, তাকে ‘মিথ্যাচার’ বলে উল্লেখ করে শুভেন্দুর দাবি, “২০২০-র ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বলেন, কুড়মিদের ‘এসটি শংসাপত্র’ দেওয়া হোক। পরে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে ‘এনওসি’ দেন।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “আদিবাসী ও কুড়মি-সহ জঙ্গলমহলের মানুষ রাজ্য সরকারের উন্নয়নে কতটা খুশি, এ দিনের ভিড়ই তার প্রমাণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy