ইকো পার্কে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
‘‘চোরের মায়ের বড় গলা’’— তাঁর বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর তোলা ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ এ ভাবেই নস্যাৎ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে ‘দুর্নীতির ঠাকুর্দা’ বলে অভিহিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার উত্তরবঙ্গের সভায় মোদীর বক্তব্য শোনার পরে তিনি বললেন, ‘‘যিনি ও সব বলছেন, তিনি নিজেই তো দুর্নীতির গুরুঠাকুর। কত বড় রাফাল-দুর্নীতি! সব বেরোচ্ছে। এত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত ভারতে জন্মায়নি! এই ব্যক্তি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভাবতে লজ্জা হয়! ওঁর মুখে জ্ঞানের বাণী শুনব না। ওঁর সেই অধিকার নেই।’’
এ দিন সকালে রাফাল সংক্রান্ত নথি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তৎপর ছিলেন মমতা। এসএমএস চালাচালি হয় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। তাঁকে জানান, এ নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে একসঙ্গে লড়াই করবেন। বিকেলে মোদীর বক্তৃতার বিশদ খবর জেনে মমতার ক্ষোভ আরও বাড়ে। গত দু’দিন ধরে ব্যস্ত ছিলেন বিশ্ববঙ্গ বণিজ্য সম্মেলন নিয়ে। দুপুরে তা শেষ হয়। এবং বিকেলে মোদীর বক্তব্যের জবাব দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
মোদীকে ‘মাডি’ (কর্দমাক্ত) বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘মাডি-সরকার ভীত, সন্ত্রস্ত। যারা ভয় পায়, তারাই তো ভয় দেখায়! বিরোধীরা একজোট হয়েছে বলে ওরা আরও ভয় পাচ্ছে। ভয় পেয়ে ভূরি ভূরি মিথ্যা বলছেন উনি। আর আমি মুখ খুলি বলে আমার বিরুদ্ধে বেশি আক্রমণ হচ্ছে। কী বলতে চায় ওরা? বিজেপি-তে গেলে সৎ আর বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই দুর্নীতিগ্রস্ত!’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মাডি আমাকে চেনেন না। আমি আপাদমস্তক মার খেয়ে, রাস্তায় লড়াই করতে করতে রাজনীতি করেছি। উনি এলেন কবে! ক’দিন রাজনীতি করছেন? ভয় দেখিয়ে আমার মাথা নোয়ানো যাবে না। সব বিরোধী দল এখন একজোট। লক্ষ্য একটাই, মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও।’’
আরও পড়ুন: আজ ‘ঠান্ডা’ শিলংয়ে প্রশ্ন রাজীবকে
সারদার মতো ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থায় গরিবদের রাখা টাকা মমতা-সরকার ফেরত দেয়নি বলে মোদীর অভিযোগের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘একেবারে মিথ্যা কথা। আমরাই বিচারবিভাগীয় কমিশন করে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছিলাম। প্রতারিতদের ৩০০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। কিন্তু এখন তো বিষয়টি সিবিআইয়ের হাতে। আদালতে বিচারাধীন। কী করে টাকা দেব?’’
দিন কয়েক আগে এই সারদা-কাণ্ডেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে আচমকা গিয়েছিল সিবিআই। তার প্রতিবাদেই ধর্মতলায় ধর্নায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত পাঁচ আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে বলে খবর। এমনকি, তাঁদের পদকও কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে কেন্দ্র ইঙ্গিত দিয়েছে। এই নির্দেশকে সরাসরি ‘ভুয়ো প্রচার’ বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন মমতা। তাঁর জবাব, ‘‘একেবারে মিথ্যা প্রচার এ সব। এমন কোনও চিঠি পাইনি। তা ছাড়া, ওই অফিসাররা রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছেন। ওঁদের বেতন আমরা দিই। কিছু করতে পারবে না কেন্দ্র। খেলা এত সোজা নয়!’’
এ দিন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি ভাষণেও রাজ্যের অফিসারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আমার অফিসারদের জন্য গর্বিত। কারণ, তাঁরা খুব পরিশ্রমী। আমরা কাজ করি। কথা কম, কাজ বেশি।’’
এই সূত্রেই কারও নাম না-করে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘আগে কাজ করুন, তার পর কথা বলুন যদি কাজ না করেন, কথা বলবেন না।’’
সারদা, নারদ, রোজভ্যালি-র মতো একের পর এক ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় রাজ্য সরকারকে মোদী যে ভাবে বিঁধেছেন, তার পাল্টা হিসেবে রাফাল-দুর্নীতিকে বড় করে তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘‘রাফালে কিছু তো ঘটেইছে। কত টাকার কী হয়েছে, জানি না। তবে কংগ্রেস যে ভাবে রাফালের বিরোধিতা করছে, তাতে ওদের কাছে কাগজ-পত্র নিশ্চয়ই আছে। এই বিষয়ে কংগ্রেসের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সঙ্গে আছি।’’
কথায় কথায় চা-বিক্রির অতীত টেনে মোদীর মানুষের সহানুভূতি টানার চেষ্টাও ব্যর্থ হবে বলে দাবি করেছেন মমতা। মোদীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘চা উনি কোনও দিনই বেচেননি, চা-ও বানাননি। উনি তো ভোটের আগে চা-ওয়ালা, ভোটের পরে রাফালওয়ালা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy