মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
২০১১ সালের অনেক আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন শব্দে তাঁর দলের মূল স্লোগান বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই স্লোগান ছিল ‘মা-মাটি-মানুষ’। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে সেই স্লোগানকেই কি এ বার সর্বভারতীয় রূপ দিতে চাইলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা?
শুক্রবার কালিম্পংয়ে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জয় হিন্দ, জয় বন্দে মাতরম, জয় বাংলা, জয় দার্জিলিং, জয় কালিম্পং, জয় কার্শিয়াং, জয় মিরিক, জয় হামারা মাদার, হামারা আম্মা, মা, মিট্টি অউর ইনসান।’’ এর আগে মা-মাটি-মানুষের হিন্দি অনুবাদ সে ভাবে শোনা যায়নি। শুক্রবার তা-ও বলে দিলেন মমতা।
মূলত পাহাড়ের অবাংলাভাষী মানুষদের কথা মাথায় রেখেই কি ‘মা-মিট্টি-ইনসান’ বললেন মমতা? অনেকের মতে, সেটা একটা দিক বটেই, তবে একই সঙ্গে আসন্ন লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে দলের স্লোগানকে সর্বভারতীয় রূপ দিয়ে রাখলেন তিনি।
মা-মাটি-মানুষ তৃণমূলের দলীয় স্লোগান হলেও, অনেক সরকারি কর্মসূচিতেও মমতা তা উল্লেখ করেন সরকারের মনোভাব এবং অভিমুখ বোঝানোর জন্য। মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডারই হোক বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিবারের মহিলাদের মাথায় রাখা— সব ক্ষেত্রেই তাঁর এই অভিমুখ স্পষ্ট বলে মনে করেন অনেকেই।
২০১১ সালে বামফ্রন্টকে সরিয়ে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলেছিলেন, সাধারণ শব্দকে অসাধারণ জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিল তৃণমূল। অতীতে ‘মা-মাটি-মানুষ’ নামে ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি যাত্রাপালা ছিল। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে এই তিন শব্দ যে বাংলার রাজনীতিতে অন্য অভিঘাত তৈরি করে দিতে পেরেছিল, তা ঘরোয়া আলোচনায় মানেন সিপিএম নেতারাও। ৩৪ বছরের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর দলীয় পর্যালোচনাতেও এই তিন শব্দের অভিঘাতের কথা উল্লেখ করেছিল সিপিএম। অনেকের বক্তব্য, সেই স্লোগান গ্রামবাংলার প্রান্তিক মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের আন্দোলিত করতে পেরেছিল। তার পর থেকে যে কোনও সভাতেই মমতা মা-মাটি-মানুষ উল্লেখ করেন। ভোটে জেতার পর ধন্যবাদও জানান মা-মাটি-মানুষকে। এ বার সেই স্লোগানকেই সর্বভারতীয় রূপ দিলেন মমতা।
মহিলাদের লক্ষ্য রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের ছাপ ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে দেশের নানা রাজ্যে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের বিজেপির ক্ষমতায় ফিরে আসার পিছনে যে ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্প বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তা আসলে বাংলার লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পেরই অনুরূপ। তৃণমূল নেতাদের অনেকে মনে করছেন, এবার ‘মা-মিট্টি-ইনসান’ও পৌঁছে যাবে রাজ্যে রাজ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy