E-Paper

বাঙালি ‘নিগ্রহ’, যুযুধান বাংলা, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী

রাজনৈতিক তরজা ও প্রশাসনিক তৎপরতার মধ্যেই ভাষা-বিতর্কে নিউ ইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট (‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’) উদ্ধৃত করে বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যে ‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র অভিযোগে শাণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৬:৪৩
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার অভিযোগে আবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগের সূত্রে তিনি হাতিয়ার করেছেন একটি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টও। পক্ষান্তরে, মমতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিংহ সাইনি। বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও রাজ্য প্রশাসন রোহিঙ্গা ও অনুপ্রবেশকারীদের নিবাসী শংসাপত্র (‌ডোমিসাইল সার্টিফিকেট) দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।

রাজনৈতিক তরজা ও প্রশাসনিক তৎপরতার মধ্যেই ভাষা-বিতর্কে নিউ ইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট (‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’) উদ্ধৃত করে বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যে ‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র অভিযোগে শাণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ড্‌লে শনিবার তিনি লিখেছেন, ‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচার ও উচ্ছেদের যে কথা আমরা বলছি, ওই সংস্থাটিও একই কথা বলছে।’ এর সঙ্গেই ওই সংস্থার এশিয়ার কর্তাকে উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যথেচ্ছ ভাবে ভারতের বাঙালি নাগরিকদের দেশ থেকে তাড়াচ্ছে। যে বেআইনি অনুপ্রবেশের কথা বলা হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’ সংস্থাটির রিপোর্ট উল্লেখ করে মমতা আরও বলেছেন, ‘অসম, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশার মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে এই কাজ হচ্ছে। অবিলম্বে এই সব বন্ধ হোক।’

এই প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ তুলে মমতাকে পাল্টা নিশানা করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সাইনি। সমাজমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য, ‘দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সহানুভূতি শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, তা দেশেরও স্বার্থ-বিরোধী। তোষণ ও ভোট-ব্যাঙ্কের জন্য এক জন মুখ্যমন্ত্রী দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করছেন। এটা নিন্দনীয়।’ হরিয়ানা থেকে দ্রুত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’দের বার করে দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সাইনির সংযোজন, ‘ভারতের ঐক্য, সংহতি ও সংবিধানের পরিপন্থী কোনও কাজ হরিয়ানা বা দেশের কোথাও হবে না।’ জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের মন্তব্য, ‘বাংলাভাষী পরিযায়ীদের উপরে নৃশংস অত্যাচার করার পরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ তুলে রাজ্য প্রশাসনকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। তমলুকে একটি অনুষ্ঠানে এ দিন তিনি দাবি করেছেন, “উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং কোচবিহারে জেলাশাসক, মহকুমাশাসকদের বড় সংখ্যায় নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন জানিয়ে শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, “রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের মুসলমানদের নিবাসী শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে।” শুভেন্দুর অভিযোগ সম্পর্কে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, “পরাজয়ের ভয়ে আকাশ থেকে অভিযোগ পেড়ে আনছেন উনি (শুভেন্দু)!”

সিপিএম তথা বামেরা অবশ্য এই বিষয়ে বিজেপি ও তৃণমূলকে এক পঙ্‌ক্তিতে রেখেই সরব হয়েছে। বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচারের প্রতিবাদে এ দিন তমলুকে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। সেখানে যোগ দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “বিজেপি ও আরএসএসের একমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিভাজন করা। আর এতে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। কারখানা ধ্বংস, দুর্নীতির কারণেই এই রাজ্য থেকে এত সংখ্যক মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অন্য রাজ্যে যান।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC Migrant Workers BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy