Advertisement
১১ জুন ২০২৪

মমতা-উদ্ধবের কথায় নয়া ইঙ্গিত

হার্দিক পটেলরা গুজরাতে কী করছেন, তা-ও নজর করেছেন। এমনকী, গুজরাতের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ডাকও দিয়েছেন মুম্বইয়ে বসেই। ফলে জোটের বলও গড়াচ্ছে।

বৈঠক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। রয়েছেন উদ্ধবের ছেলে আদিত্যও। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

বৈঠক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। রয়েছেন উদ্ধবের ছেলে আদিত্যও। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

এক জন পূর্বে তো অপর জন পশ্চিমে। সাম্প্রতিক রাজনীতির অবস্থান সেই ভৌগোলিক দূরত্ব আগেই ঘুচিয়েছে। কারণ, এখন দু’জনেরই লক্ষ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল। সেই পূর্ব ও পশ্চিমের অবশেষে দেখা হল বৃহস্পতিবার আরব সাগরের তীরে। মুম্বই সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। এবং রীতি ভেঙেই। শিবসেনার নিয়মে বৈঠকের স্বাভাবিক স্থান হওয়ার কথা ছিল বালাসাহেবের সাবেক ঠিকানা ‘মাতোশ্রী’। কিন্তু দিদির ডাকে ছেলে আদিত্যকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধব এ দিন চলে আসেন মমতার হোটেলে। যা নিয়ে দেশের রাজনীতি নয়া রসায়নের ইন্ধন পাচ্ছে।

তবে এ দিন দুপুর সওয়া দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত একান্ত আলাপের পর উদ্ধব বলেন, ‘‘অনেক কথাই হল। পুরোটাই সিরিয়াস রাজনীতির কথা হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই।’’ আপনি কি মমতার মোদী-বিরোধী লড়াইয়ে সমর্থন দেবেন? জবাব এড়িয়ে শিবসেনা প্রধান শুধু বলেন, ‘‘এই তো প্রথম সাক্ষাৎ। কথাবার্তা চলবে।’’

মমতা বলেন, ‘‘দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন আলোচনা করেন, তখন যা যা হওয়া স্বাভাবিক তা-ই হয়েছে। এনডিএ-র সবচেয়ে পুরনো শরিক হয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থে শিবসেনা যে ভাবে কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে তা প্রশংসাযোগ্য।’’

শত্রুর শত্রু পরম বন্ধু হওয়ার সূত্রেই মমতা-উদ্ধব নতুন রসায়ন এগিয়ে যাবে বলেই ধারণা অনেকের। নোটবন্দি, জিএসটি-র তাড়াহুড়ো বাস্তবায়ন, ব্যাঙ্কের সুদের হার কমানো নিয়ে মমতা প্রথম থেকেই সরব। এ সব নিয়ে একই অবস্থান শিবসেনারও। মাসখানেক আগে বিজয়া দশমীর বার্ষিক সভায় উদ্ধবও মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘নোটবন্দির সমর্থক না হলেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের কাছে অন্তত দেশপ্রেম শিখব না।’’

ঘরোয়া রাজনীতিতে শিবসেনা অবশ্য এখন কিঞ্চিৎ চাপে। ২০১৪ সালের বিধানসভায় বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে একাই লড়েছিল দল। তাতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তারা। বিধানসভায় ২৮৮টি আসনের মধ্যে ১২২টি বিজেপি পেলেও তারা পেয়েছে মাত্র ৬৩টি। ভোটের পর জোট করে ৩৯ সদস্যের মন্ত্রিসভায় শিবসেনার মাত্র ১২জন মন্ত্রী রয়েছে। মুম্বই পুরসভাতেও তাদের একক গরিষ্ঠতা কেড়ে নিয়েছে মোদীর দল। ফলে এক দিকে মহারাষ্ট্রে জমি
ধরে রাখা, অন্য দিকে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিরোধী শক্তিকেন্দ্রের ভার বাড়ানোর দ্বিমুখী নীতি নিয়েই চলছে তারা।

যদিও মমতা-উদ্ধব বৈঠকের খবর রাখা কেউ কেউ জানাচ্ছেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কোনও জোটে এখনই যেতে চান না উদ্ধব। বরং তাঁর পছন্দ বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্বের আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্র তৈরি করা। এই কারণেই মমতার হোটেলে আসতেও দ্বিধা করেননি তিনি। উদ্ধবরা মনে করেন,
মমতাই পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে একজোট করতে পারেন। সেই কাজে লেগে রয়েছেন মমতাও। মুম্বইয়ে থাকাকালীনও এনসিপি, ডিএমকে, আপ-এর মতো দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। হার্দিক পটেলরা গুজরাতে কী করছেন, তা-ও নজর করেছেন। এমনকী, গুজরাতের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ডাকও দিয়েছেন মুম্বইয়ে বসেই। ফলে জোটের বলও গড়াচ্ছে।

জোটপর্ব এগোচ্ছে প্রশাসনিক স্তরেও। মুম্বইয়ে বঙ্গভবন তৈরির জন্য শিবসেনা পরিচালিত পুরসভার থেকে জমি চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিনিময়ে কলকাতাতেও জমি দেওয়ার কথা বলেছেন। অরাজি নন উদ্ধব। বলেছেন, প্রস্তাব এলে বিবেচনা করা হবে।

এমনই বিবেচনার উপর ভর করে তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের মোদী-বিরোধী আঞ্চলিক শক্তির বলয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE