Advertisement
E-Paper

ডাল-ফুল-মাছ-হাঁস, মমতার মুখে অন্য চাষ

ফি বছর গতানুগতিক ভাবে ধান, আলুর চাষ করার অভ্যাস ছেড়ে চাষিদের অন্য পথে হাঁটায় উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে জোর দিতে বললেন বিকল্প চাষে। আলু-ধানের বিকল্পে শুধু সব্জি নয়, ফুল-ফল, মাছ চাষ এবং পোলট্রির (হাঁস) ব্যবসায় উন্নতি করে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর পরামর্শও দিলেন। সঙ্গে আশ্বাস, ‘‘সরকার সাহায্য করবে।’’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২২
সাধনপুরে মাটি উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

সাধনপুরে মাটি উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

ফি বছর গতানুগতিক ভাবে ধান, আলুর চাষ করার অভ্যাস ছেড়ে চাষিদের অন্য পথে হাঁটায় উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে জোর দিতে বললেন বিকল্প চাষে। আলু-ধানের বিকল্পে শুধু সব্জি নয়, ফুল-ফল, মাছ চাষ এবং পোলট্রির (হাঁস) ব্যবসায় উন্নতি করে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর পরামর্শও দিলেন। সঙ্গে আশ্বাস, ‘‘সরকার সাহায্য করবে।’’

রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বর্ধমানের ‘মাটিতীর্থে’ সোমবার মাটি উৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের দাবি, শুরু থেকেই ‘মাটিতীর্থ’কে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীর কেন্দ্র হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা ছিল। এ দিন সেই ‘মাটিতীর্থে’র স্থায়ী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে চাষ সংক্রান্ত নানা বিষয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে মাটির গুণ দেখে ফুল চাষ, ডাল চাষের মতো বিকল্প চাষের দিশা দেখানো যেতেই পারে।’’

আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মাটিতীর্থে এক ছাতার তলায় সব্জি খেত, মাছ চাষের জলাশয়, ফল চাষের জমি রয়েছে। সঙ্গে থাকছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি প্রশিক্ষণ, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত নির্দেশ, পরামর্শ লিখে রেখেছি। অক্ষরে-অক্ষরে তা পালন করা হবে।’’

শুধু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে নয়, বিভিন্ন ধরনের চাষ কী ভাবে হয়, ‘মাটিতীর্থে’ বছরভর তার ‘জীবন্ত প্রদর্শনী’ চালু রাখার পরামর্শও মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে দিয়েছেন। সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘তেমন প্রদর্শনী হলে বোলপুরমুখী পর্যটকদের কাছে ‘ট্যুরিস্ট স্পট’ হতে পারে মাটিতীর্থ।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজ্যে প্রতিদিন দু’কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। সেখানে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডিম। হাঁসের পোলট্রি গড়ে বাকি ডিমের ঘাটতি পূরণ করার কথা এ দিন বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাঁস-খামার করলে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন। রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির ও প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘জেলায় হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কোয়েল চাষের কথাও বলা হচ্ছে।’’

মৎস্য দফতরের দাবি, এ রাজ্যে বছরে ১৬ লক্ষ টন মাছ উৎপাদন হয়। বর্ধমানের বাৎসরিক উৎপাদন দেড় লক্ষ টন। অথচ, জেলাতেই বাৎসরিক চাহিদা থাকে ২.২ লক্ষ টনের। আর রাজ্যে চাহিদা ২২-২৪ লক্ষ টন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যে বহু জলাশয় রয়েছে। সেখানে মাছ চাষ করে রোজগার বাড়ানো যেতে পারে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আমাদের প্রচুর মাছ আনতে হয়। তা কমাতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাছ চাষে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মাটি সম্মান’ পুরস্কার পাওয়া আরামবাগের শ্যামাপদ পাত্রের দাবি, ‘‘উনি আমাকে আরও বেশি করে মাছ চাষ করতে বলেছেন। বলেছেন, ‘এমন করে চাষ করুন, যাতে অন্য রাজ্য থেকে মাছ আনা কমাতে পারি’।’’

বর্ধমানে ডাল-শস্য, সর্ষে, ভুট্টা, ব্রকোলি, মাশরুম পেঁয়াজ ও অল্প পরিমাণে গম চাষ হয়। কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের দাবি, কম ঝুঁকিতে বেশি লাভ করা যায় এ রকম অনেক বিকল্প চাষেই। জেলা কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, চাষিদের বুঝিয়ে বিকল্প চাষে উৎসাহী করায় জোর দেবেন তাঁরা।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর সব পরামর্শের পিছনেই রাজ্যের বেহাল শিল্প পরিস্থিতির ছবি দেখছেন বিরোধীরা। ‘কৃষকসভা’র জেলা সভাপতি তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের কথায়, ‘‘হাঁস, মাছ চাষের কথা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তখনই বলতে হয়, যখন রাজ্যে উন্নতির অন্য জায়গা থাকে না।’’

Mamata Banerjee Alternative Cultivation Farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy