Advertisement
E-Paper

সংখ্যালঘু অনুষ্ঠানে মমতার চাঁদমারি বিজেপিই

বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক দফতর ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সোমবার ‘প্রগতির পথে’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল কলকাতায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০৫:০৩
সংখ্যালঘুদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: সুদীপ আচার্য

সংখ্যালঘুদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: সুদীপ আচার্য

বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক দফতর ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সোমবার ‘প্রগতির পথে’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল কলকাতায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভিড়ে ঠাসা ওই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি-র প্ররোচনায় একদম পা দেবেন না। শত উস্কানিতেও না। ওরা দাঙ্গা লাগাতে চায়। তাই সকাল সন্ধ্যা ফেসবুক-টুইটারে শুধু ধর্মের নামে সুড়সুড়ি দেয়। কিন্তু আমাদের শান্তি রাখতে হবে।’’ এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে অকর্মণ্য আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘ওরা দুবেলা বিজ্ঞাপন করে আর গো-সুমারি করে। এ ছাড়া কোনও কাজ নেই।’’

আপাত ভাবে মোদী সরকার এবং বিজেপি-কে দিদির এই আক্রমণ নতুন নয়। ক’দিন আগেই দিল্লি গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে অমর্যাদা করার অভিযোগ জানিয়ে আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রকে। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এই সব আক্রমণই লোক-দেখানো। আসলে তলায় তলায় দিদি-মোদীর দোস্তিই চলছে।

সেই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতারা বলছেন, বিজেপি-কে এই আক্রমণের পিছনে কোনও দেখানেপনা নেই। তাঁদের দাবি, মোদীর দলের বিভাজনের রাজনীতির জেরে বাস্তবিকই চাপা উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে রাজ্যে। সম্প্রতি বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে এ পারের পরিস্থিতিও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ ধরে রাখার ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু মমতার আশঙ্কা, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে দেশ জুড়ে ততই উগ্র ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটতে চাইবেন মোদী-অমিত শাহরা। বাংলাও সেই রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের সংগঠন বাড়ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ভয় পাচ্ছেন। সর্বত্র বিজেপি-র ভূত দেখছেন।’’

দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের দলের সংখ্যালঘু জনভিত্তি যে অটুট, তা বিধানসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটেও সেই রসায়ন ধরে রাখতে চায় শাসক দল। তাই বিজেপি-র জুজু দেখিয়ে সংখ্যালঘু ভোট একজোট করতে চাইছেন মমতা, অভিযোগ বিরোধীদের। যার পিছনে রাজ্যের রাজনীতি ছাপিয়ে জাতীয় রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে বলেও অনেকের মত। তাঁদের বক্তব্য, আগামী দিনে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠতে চান তৃণমূল নেত্রী। যাতে পরবর্তী লোকসভা ভোটে কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পেলে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাই কলকাতায় বিজেপি-র বিরুদ্ধে তৃণমূল যতটা সরব, ততটাই সরব দিল্লিতেও। যেটা ছ’মাস আগেও ছিল না।

এ দিনই দলিত নির্যাতন এবং বিভাজনের রাজনীতির প্রশ্নে বিজেপি বিরোধিতায় সংসদে সুর চড়ান ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যে বিবিধের মধ্যেই ঐক্য রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত এবং মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছেন।’’ রাজ্যসভায় ডেরেক বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিছকই ঘটনাচক্র নয়। সরকারি সিদ্ধান্তেই ঘটছে দলিত নির্যাতনের ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা অনেকেই গিয়ে দেখেছি দলিতরা কী ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছেন। মাত্র ১৫ টাকার জন্য তাদের খুন করা হচ্ছে। হরিয়ানায় জোর করে গোবর খাওয়ানো হচ্ছে।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছেন মমতা। ভিড়ে ঠাসা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশ করতেই ছাত্রছাত্রীরা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানান তাঁকে। সেই আবহে সুলতান আহমেদ-জাভেদ খানদের পাশে নিয়ে মমতা সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর ভাবনার কথা তুলে ধরেন। রিমোটে রাজারহাটের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হস্টেলের এবং হজ-যাত্রীদের অ্যাপের উদ্বোধন করেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৬১ হাজার ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি ও পুরস্কার প্রদান ছাড়াও শিক্ষা-ঋণ দেওয়া হয়। তা ছাড়া সংখ্যালঘু উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন নিগমের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। আমি বলার আগেই কাজটা করে ফেলতে হবে।’

bjp minority cell
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy