Advertisement
E-Paper

যাত্রী না হোক, বালুরঘাটেই বিমানবন্দর গড়বেন মমতা

উঠল বাই, তো বিমানবন্দর চাই! অন্ডাল, কোচবিহারের পরে এ বার চাই বালুরঘাট। চাই মানে চাই-ই। কোচবিহার, অন্ডাল লাভজনক ভাবে চলতে পারে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করার বালাই নেই। দুর্গাপুর, হলদিয়া, শান্তিনিকেতনে চালু হওয়া হেলিকপ্টার পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা নেই। বালুরঘাটে নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০৩:৪৪
বালুরঘাটের মাহিনগরে বিমানবন্দরের মাটি পরীক্ষার জন্য চলছে নমুনা সংগ্রহের কাজ। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

বালুরঘাটের মাহিনগরে বিমানবন্দরের মাটি পরীক্ষার জন্য চলছে নমুনা সংগ্রহের কাজ। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

উঠল বাই, তো বিমানবন্দর চাই!
অন্ডাল, কোচবিহারের পরে এ বার চাই বালুরঘাট।
চাই মানে চাই-ই। কোচবিহার, অন্ডাল লাভজনক ভাবে চলতে পারে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করার বালাই নেই। দুর্গাপুর, হলদিয়া, শান্তিনিকেতনে চালু হওয়া হেলিকপ্টার পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা নেই। বালুরঘাটে নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সে জন্য ভাঁড়ে মা ভবানী কোষাগার থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ফেলতেও আপত্তি নেই তাদের।
বালুরঘাটে এক সময় একটা ছোট রানওয়ে ছিল। ছোট ডরনিয়ার বিমান ওঠানামা করত সেখানে। কিন্তু সেই পাট দীর্ঘদিন চুকেছে। ব্যবসার সাধারণ নিয়ম কাজ করে না বলেই। এহেন বালুরঘাটেই নতুন বিমানবন্দর গড়তে চান মুখ্যমন্ত্রী। এ দেশে ইদানীং বেসরকারি উদ্যোগে কিছু বিমানবন্দর তৈরি হলেও সাধারণ ভাবে বিমানবন্দর তৈরি করে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট বিমানবন্দর তৈরির প্রকল্পও নিয়েছে তারা। বালুরঘাটের নাম নেই সেই তালিকায়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বালুরঘাটে বিমানবন্দর তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা আগ্রহ দেখায়নি। তাতে অবশ্য দমে যায়নি রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন, তাই নিজেরাই বালুরঘাটে বিমানবন্দর গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

নবান্ন সূত্র বলছে, মমতার নাছোড় মনোভাবের জন্যই অন্ডাল ও কোচবিহার থেকে উড়ান চালু হয়েছে। মাঝে এই দুই বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হয়েছিল। তা-ও মমতার ইচ্ছা মেনেই। কিন্তু ভর্তুকি দিয়েও তার জন্য যাত্রী পাওয়া যায়নি। তার আগে কোচবিহার থেকে বিমান চালিয়েছে একটি সংস্থা। কিন্তু লোকসান হওয়ায় তারা পাততাড়ি গোটায়। একটা সময় দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে ছিল কোচবিহার বিমানবন্দর। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।

অনেকেই বলছেন, কোচবিহারের আশপাশে তেমন কোনও শিল্প নেই। রাজ্যের শিল্পচিত্রও এমন নয় যে, অদূর ভবিষ্যতে অনেকে সেখানে লগ্নি করতে আসবেন। ফলে এখানকার বিমানবন্দর নিয়ে সংশয়ী অনেকেই। এমনকী, শিল্পাঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হলেও অন্ডালের ভবিষ্যৎ নিয়েও নিশ্চিত নন বিমান শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা।

সুতরাং শিল্প মানচিত্রের বাইরে থাকা বালুরঘাটে বিমানবন্দর গড়লে তার হাল কী হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। রাজ্য অবশ্য এখান থেকে বড় বিমান চালাতে চাইছে না। ১৯ আসনের ছোট্ট বিমান উড়লেই মুখ্যমন্ত্রী খুশি। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘শুধু ১৯ আসনের ছোট্ট বিমান চালানোর জন্য আমরা বিমানবন্দর বানাতে পারি না। নিয়মিত যারা যাত্রী বিমান চালায়, তারা যদি বালুরঘাটে উড়ান চালাতে আগ্রহী হতো, তা হলে আমরা নিশ্চয়ই এখানে বিমানবন্দর বানাতাম।’’

বিমান সংস্থাগুলি উড়ানের আগ্রহ না দেখালেও মমতার আগ্রহ দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার সকালে বালুরঘাটের মাহিনগরের বিমানঘাঁটিটি পরিদর্শনে যান রাজ্য সরকারের নিয়োগ করা ‘রাইটস’ সংস্থার প্রতিনিধিরা। পরে সংস্থার ম্যানেজার সুরজ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘বিমানঘাঁটির রানওয়ের উপরিভাগ একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে তা তৈরি করতে হবে। রানওয়েও বাড়াতে হবে।’’ তিনি জানান, সব কিছু ঠিকঠাক চললে রানওয়ে বানিয়ে বিমানবন্দর চালু করতে মাস আটেক লেগে যাবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, যে পিনাকল এয়ারকে কলকাতা-অন্ডাল-বাগডোগরা-কোচবিহার রুটে উড়ান চালাতে রাজি করানো হয়েছে, তাদেরই বলা হবে বালুরঘাটও ছুঁয়ে যেতে।

কিন্তু এমনিতেই কলকাতা থেকে অন্ডাল ও বাগডোগরা ঘুরে কোচবিহার যেতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। তা নিয়ে কোচবিহারবাসীর একাংশের অসন্তোষের খবর আসতে শুরু করেছে।

কোচবিহার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রাজেন বৈদ যেমন বলেন, ‘‘কোচবিহারের সঙ্গে বাগডোগরা বা অন্ডালের বিমান যোগাযোগের কোনও প্রয়োজন নেই। কলকাতার সঙ্গে সরাসরি উড়ান দরকার আমাদের।’’ কোচবিহার থেকে নিয়মিত কলকাতা যাতায়াত করা ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহর মন্তব্য, “যে ভাবে ঘুরপথে কলকাতা যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে যেন হেঁটে যাওয়াই ভাল। এর মধ্যে সস্তা রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নেই!’’ এর উপর বালুরঘাট যোগ হলে বিমানযাত্রার সময় আরও বাড়বে। ফলে কোচবিহারের বাসিন্দারা উড়ান সম্পর্কে আরও হতাশ হয়ে পড়বেন, এমন আশঙ্কা থাকছেই।

রাজ্যে প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বালুরঘাট থেকে নিয়মিত কত যাত্রী পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু সেখানে উড়ান চালুর জেরে যদি কোচবিহার থেকে যে দু’-চার জন যাত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা-ও কমে যায়, তা হলে ও আম-ছালা দুই-ই যাবে!’’

যদিও তাঁর এই আশঙ্কা মানতে নারাজ নবান্নের আধিকারিকদের অন্য একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, গোড়ার দিকে উড়ানে যাত্রী পেতে অসুবিধা হতেই পারে। নতুন কোনও ট্রেন চালু হলেও প্রথম প্রথম তা ফাঁকাই যায়। তার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্রেন সম্পর্কে প্রচার বাড়ে়, তার সুবিধা মানুষ বুঝতে পারে। ক্রমশ তা লাভজনক হয়ে ওঠে। অন্ডাল ও কোচবিহারের ক্ষেত্রেও তেমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে নতুন চালু হওয়া দুই বিমানবন্দর শেষ পর্যন্ত লাভের মুখ না দেখলে রাজ্য সরকারের কোনও চিন্তা নেই। কারণ, অন্ডাল রয়েছে বেসরকারি হাতে আর কোচবিহারের দায়িত্ব ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বালুরঘাট মুখ থুবড়ে পড়লে ক্ষতি রাজ্যের। ফলে এত সংশয় মাথায় নিয়ে কেন সেখানে বিমানবন্দর চালু করতে কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, চলবে না জেনেও বিধানসভা ভোটের আগে চমক দিতেই তুলে ধরা হচ্ছে বালুরঘাট বিমানবন্দরকে।

mamata determined balurghat airport balurghat mamata balurghat proposed airport abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy