কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব আনার উদ্দেশ্য মাঠে মারা গেল! মুখ পুড়ল বামেদেরও।
মানস ভুঁইয়া-সহ কংগ্রেসের পাঁচ ও বামেদের এক দলত্যাগী বিধায়ককে প্যাঁচে ফেলতে শুক্রবার যৌথ ভাবে অনাস্থা এনেছিল বাম ও কংগ্রেস। দলত্যাগী ৬ বিধায়কই চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে বিতর্কে অনুপস্থিত থাকলেন! ফলে, কাজে এল না হুইপ! আবার নোট-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ আন্দোলন চেয়ে কিছু দিন আগে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ফোন নিয়ে বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী কটাক্ষ করায় ক্ষুব্ধ মমতা জানিয়ে দিলেন, সৌজন্যবশতও আর কখনও তিনি ইয়েচুরিদের ফোন করবেন না! যার ফলে, দলত্যাগীদের বেকায়দায় ফেলার বিরোধী কৌশলও কাজে এল না। উল্টে, সৌজন্যের রীতিভঙ্গের অভিযোগে বিদ্ধ হতে হল বিরোধীদের।
বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূল— তিন পক্ষেরই একাধিক বিধায়ক এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব শেষমেশ ১৯১-৫০ ভোটে খারিজও হয়ে যায়। কিন্তু বাঁকুড়ার কংগ্রেস বিধায়ক শম্পা দরিপা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করলেও এ দিন বিধানসভায় আসেননি। বাগদার কংগ্রেস বিধায়ক দুলাল বর বিধানসভায় এলেও ভোটদানে অনুপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল শিবিরের এক নেতার দাবি, ‘‘আমাদের দলে যে আরও বিধায়ক যোগ দিচ্ছেন, আজ আব্দুল মান্নান তা-ও বুঝে গেলেন!’’
অনাস্থা-বিতর্কে যোগ দিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মানস ভুঁইয়ার ভয়ে এরা অনাস্থা এনেছে! নিজের বিধায়কদের সামলাতে না পেরে আমাদের উপরে দোষ দিচ্ছে! এটা অগণতান্ত্রিক। নীতিবিরুদ্ধ কাজ।’’ দলত্যাগীদের বিপাকে ফেলা ছাড়া অনাস্থা প্রস্তাবের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলেই মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি। যদিও বিরোধী দলনেতা মান্নানের পাল্টা দাবি, তাঁদের উদ্দেশ্য সফল। কারণ তৃণমূল দাবি করেছিল, বিরোধীদের ঘর ভেঙে তাদের বিধায়ক-সংখ্যা এখন ২১৭। কিন্তু দলত্যাগী বিধায়কদের অনাস্থা প্রস্তাবে পাশে রাখতে পারল না শাসক দল। মান্নানের আরও মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের বক্তব্য শুনে শাসক পক্ষ বিধানসভায় যে ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে আমরা ঠিক কথাই তুলে ধরেছি।’’
বিতর্কের সময়ে কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো, বামেদের সুজনবাবু অভিযোগ করেন, ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে তাদের দল ভাঙছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রলোভন কে কাকে দেখিয়েছে! আপনাদের (বিরোধী বেঞ্চ) যাঁরা আজ চেঁচামেচি করছেন, তাঁদের দু-এক জন তো নিজেরাই বলেছিলেন, আমাদের দলে আসতে চান!’’ সুজনবাবু তাঁদের নাম জানতে চান। মমতা নাম না জানানোয় সুজনবাবু খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘সীতারামকে তো আপনি ফোন করেছিলেন! সেটা বলতে পারলে এঁদের নাম বলতে আপত্তি কী?’’ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক গণ্ডির বাইরে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবেই যে তিনি ইয়েচুরিকে ফোন করেছিলেন, তা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আপনাকেও তো আমি সৌজন্য সূত্রে ফোন করেছিলাম।’’ সুজনবাবু তা স্বীকার করার পরে মমতার বক্তব্য, ‘‘আমি যে ফোন করেছিলাম, এটা মহত্ত্ব। আপনারা বিষয়টা মানেন না। আর কোনও দিন আপনাদের কাউকে ফোন করব না!’’
দু’দলের দুই শীর্ষ নেতার যোগাযোগের ঘটনা সুজনবাবু ‘অযাচিত ভাবে’ কেন বিধানসভায় তুললেন, তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না প্রবীণ বাম নেতারাও। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে ইয়েচুরি এ দিন আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘মমতা ফোন করেছিলেন। আমি যথোচিত বিনয়ের সঙ্গেই আমাদের বক্তব্য জানিয়েছিলাম। বিষয়টা ওখানেই মিটে গিয়েছে।’’ সুজনবাবুর খোঁচার চোটে মমতা আর তাঁদের ফোন করবেন না শুনে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘করবেন কি না, ওঁর ব্যাপার! উনি ওঁর পথে চলেন। আমরা নিজেদের পথে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy