Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রঙিন পাহাড় ‘হাস দে ছ’

বৃষ্টি মাথায় কনভয় ঢুকেছিল কালিম্পঙে। গত বুধবারের আবহাওয়া দুশ্চিন্তায় রেখেছিল প্রশাসনের আধিকারিক থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরাও। বৃহস্পতিবার সভার দিন সকাল থেকেই রোদ ঝলমলে ছিল কালিম্পং।

কালিম্পঙে লেপচা বোর্ডের অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কালিম্পঙে লেপচা বোর্ডের অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান
কালিম্পং শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

বৃষ্টি মাথায় কনভয় ঢুকেছিল কালিম্পঙে। গত বুধবারের আবহাওয়া দুশ্চিন্তায় রেখেছিল প্রশাসনের আধিকারিক থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরাও। বৃহস্পতিবার সভার দিন সকাল থেকেই রোদ ঝলমলে ছিল কালিম্পং। মেঘ-ছায়া হঠাৎ বদলে গিয়ে ঝকঝকে আবহাওয়া এবং সভার মাঠে মিনিটে অন্তত বার দুয়েক হাততালি। যা দেখে-শুনে এক প্রবীণ পুলিশ কর্মী বলেই ফেললেন, ‘‘পাহাড় হাস দে ছ!’’

কালিম্পঙের মেলার মাঠে এ দিন লেপচা বোর্ডের সভায় ভিড় উপচে পড়েছিল। লেপচাদের অনুষ্ঠান হলেও মঙ্গর, রাই, সার্কি, দামাই-সহ অন্য যে সব সম্প্রদায় ইতিমধ্যে বোর্ড পেয়ে গিয়েছে, তাদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। মাঠে এসেছিলেন বোর্ডের দাবি তোলা অন্য সম্প্রদায়ও। সকলেই এসেছিল নিজেদের চিরাচরিত পোশাকে। তাতেই যেন সেজে ওঠে মেলার মাঠ। কোথাও লালের সঙ্গে বাদামি, কোথাও বা নীল, কোথাও কমলা রঙের পোশাক। সঙ্গে ছিল নানান বাদ্যযন্ত্রও। কেউ এসেছিলেন ধামসা-মাদল নিয়ে, কেউ বা বাঁশি, ঢোলক। সভা শুরুর আগে মাঠের মধ্যে দগান-বাজার সঙ্গে কোমরও দোলাতে দেখা যায় অনেককে। মেলার মাঠে যেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সভা নয়, মেলাই চলছে। যা দেখে এক মোর্চা নেতার কটাক্ষ, ‘‘মেলা করে পাহাড়বাসীকে নাচানো যায়, ভোটে জেতা সম্ভব নয়!’’

মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের ঢের আগে থেকেই সুর চড়াতে শুরু করেছিলেন মোর্চা নেতারা। তোপ দেগেছিলেন খোদ বিমল গুরুঙ্গও। তৃণমূল নেতাদের দাবিস সে সবের প্রভাব অন্তত এ দিনের সভায় পড়েনি। সভামঞ্চ থেকে বিভিন্ন বোর্ডকে প্রকল্প, সুবিধে বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বোর্ডের পরিচালকদের বলেছেন, ‘‘ভাল কাজের বিকল্প নেই। কাজ শেষ করে নতুন প্রকল্পের টাকা চান। যত কাজ করবেন, রাজ্য সরকার তত সাহায্য করবে।’’ তুমুল হাততালি শোনা যায় মেলার মাঠে। এর পরে যখন কোনও বোর্ডের জন্য ঘর, কোনও বোর্ডকে চেক দেওয়ার ঘোষণা করেছেন হাততালির শব্দ বেড়েছে।

এ সবেও মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রশাসনে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কুশপুতুল পোড়ানো হয় কালিম্পং পুরসভার সামনে। দশ-বারো জন যুবক ছিলেন এই কুশপুতুল পোড়ানোয়। অরূপের বিরুদ্ধে স্লোগানও ওঠে। যুবকদের হাতে কোনও পতাকা ছিল না বলে দাবি। তবে অভিযোগ, মোর্চা সমর্থকরাই এই কাজ করেছে। গত রবিবারও কালিম্পঙে এক দল মোর্চা সমর্থক অরূপবাবুর কুশপুতুল পোড়ায়। ঘটনার জেরে কিছুটা ছন্দ পতনও হয়। যদিও তার পরেই পাল্টা আসরে নেমে পড়ে তৃণমূল। কয়েক মিনিটের মাথায় কালিম্পং থানায় অভিযোগ হয়। শহর জুড়ে পাল্টা মিছিল করে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল মিছিল দেখে মোর্চা সমর্থকরা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেনি, দাবি তৃণমূল নেতাদের।

এ দিন মাঠে ছিলেন সুরজ ছেত্রী। সভা থেকেই খাস বোর্ড গঠনের ঘোষণা হয়েছে। সুরজ বলেন, ‘‘আজকে তো উৎসবের দিন। সভা শেষ হোক, মেলার মাঠে আমাদের উৎসব চলবে।’’ সভার পরে কালিম্পঙের বিভিন্ন রাস্তায় নানা রঙের পোশাক পরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের দেখা যায়। গান গাইতে গাইতেও ফেরেন অনেক। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা বলেন, ‘‘যে যতই অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করুক, পাহাড় যে হাসছে তা এ দিনের সভার মেজাজই প্রমাণ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata north bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE