Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঝগড়া বন্ধে আরও কড়া মমতা

গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করতে এর আগেও কাকলি-সব্যসাচীদের সতর্ক করেছিলেন নেত্রী। শনিবার তাঁদের কার্যত চরম হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন— নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি বন্ধ না-করলে এ বার সরিয়েই দেবেন!

কালীঘাটের বৈঠকে।— নিজস্ব চিত্র

কালীঘাটের বৈঠকে।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৭
Share: Save:

গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করতে এর আগেও কাকলি-সব্যসাচীদের সতর্ক করেছিলেন নেত্রী। শনিবার তাঁদের কার্যত চরম হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন— নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি বন্ধ না-করলে এ বার সরিয়েই দেবেন!

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাসের প্রথম শনিবার হিসাবে এ দিন কালীঘাটে দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। সূত্রের মতে, ওই বৈঠকেই গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে সব্যসাচী-কাকলিদের নাম করে বকাবকি করেন দলনেত্রী। বার বার বলা সত্ত্বেও রাজারহাট-বিধাননগর এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ও রেষারেষি কেন থামছে না, তা নিয়ে নাম ধরে ধরে কৈফিয়ত তলব করেন। তার পর বলেন— ‘‘সুজিত, সব্যসাচী, কাকলি, কৃষ্ণা, তাপসদের নিয়ে শিগগির ববি (পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম) বসবে। এর পরেও ঝগড়া বন্ধ না-হলে সরিয়ে দেব।’’

ববি হাকিম অবশ্য অজমেঢ় শরিফে যাওয়ায় এ দিন বৈঠকে ছিলেন না। ছিলেন না বিধাননগরের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বা ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ও। তবে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুদের সতর্ক করার প্রসঙ্গে ওই দু’জনের নামও উঠে আসে।

বস্তুত রাজারহাট-বিধাননগর এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের মূলে রয়েছে সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করে এলাকা দখলের লড়াই। একে অপরকে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিতে চান না। কারণ প্রতি ইঞ্চি জমি সেখানে মূল্যবান। তাই সব্যসাচী, কাকলি ও সুজিতের অনুগামীদের মধ্যে সংঘাত লেগেই রয়েছে। আবার সে কারণে বার বার মুখ পুড়ছে দলের।

তাতেই ক্ষিপ্ত দলনেত্রী। তৃণমূল সূত্রের মতে— মমতার মূল লক্ষ্য এ সবের প্রভাব থেকে মানুষকে সুরাহা দেওয়ার পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি শোধরানো। তাই দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে গোড়া থেকেই সিন্ডিকেট, জুলুম, তোলাবাজি, গুন্ডামি কড়া হাতে দমনের সংকল্প নিয়েছেন তিনি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয় বার শপথ নেওয়ার আগেই বৈঠকে ডেকে সুজিত বসু-সব্যসাচী দত্তদের সতর্ক করেছিলেন মমতা। পরে তৃণমূলের কর্মশালায় হাজার কুড়ি নেতা-কর্মীর সামনে কাকলি, সব্যসাচী, দোলা সেনদের নাম করে সতর্ক করে তাঁদের বেআব্রু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, তাতেও ফল তেমন হয়নি। তবে এ দিনের বৈঠকে দোলা সেন হাজির থাকলেও, সূত্রের খবর— তাঁকে কিছু বলেননি মমতা।

তবে গোষ্ঠী কোন্দল যে উত্তর ২৪ পরগনাতেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। রাজ্য জুড়েই তৃণমূলে কম বেশি গোষ্ঠী বিবাদ রয়েছে। বিশেষত শহুরে এলাকায় এই সমস্যা মাথা ব্যথার বিষয়। কারণ প্রমোটার চক্র, এলাকা দখল, টাকার বখরা নিয়ে শহর এলাকাতেই দলে খেয়োখেয়ি বেশি। সে জন্য বহু এলাকায় ভোটে অন্তর্ঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল সাফল্য পেলেও অর্ধেকের বেশি পুরসভায় পরাস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে এই জমি হারানোটাও ভাবাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে।

সূত্রের মতে, অন্তর্ঘাতের প্রসঙ্গও এ দিন বৈঠকে তোলেন নেত্রী। বলেন, দল-বিরোধী কাজ করলে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগের যথাযথ ভিত্তি রয়েছে, তাদের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিতও এ দিন দেন তিনি।

নেত্রীর হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ও বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে এ দিন প্রশ্ন করা হলে অবশ্য তিনি দাবি করেন, এমন কিছু হয়নি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে কাকলি বলেছেন, দলের কিছু লোকই তাঁর বদনাম করতে চাইছে। তা ছাড়া সুজিত-সব্যসাচীদের সঙ্গে তিনি একই সারিতে পড়েন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE