Advertisement
২৭ মে ২০২৪
হুগলির গ্রামাঞ্চলে ব্যস্ত বাজি-কারিগররা

নির্দেশেও ফেরেনি হুঁশ, বাজি তৈরিতে এক ধারাই

হুগলির নানা প্রান্তে এ বারও বাজি তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। কোন বাজি পরিবেশবান্ধব (গ্রিন), কোনটা নয়, সে সব নিয়ে আপাতত ভাবছেনই না কারিগররা। লুকিয়ে-চুরিয়ে শব্দবাজি তৈরিও চলছে।

ঝুঁকি: বাজির খোলে মশলা পুরছেন এক কারিগর। চণ্ডীতলায়। ছবি: দীপঙ্কর দে

ঝুঁকি: বাজির খোলে মশলা পুরছেন এক কারিগর। চণ্ডীতলায়। ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিকতম নির্দেশই সার!

আসছে কালীপুজো, দিওয়ালি। তাই হুগলির নানা প্রান্তে এ বারও বাজি তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। কোন বাজি পরিবেশবান্ধব (গ্রিন), কোনটা নয়, সে সব নিয়ে আপাতত ভাবছেনই না কারিগররা। লুকিয়ে-চুরিয়ে শব্দবাজি তৈরিও চলছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে এখনও বিশেষ প্রচার নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। যদিও জেলার পুলিশকর্তারা সেই অভিযোগ মানেননি।

হুগলি জেলায় বাজি তৈরির রমরমা রয়েছে চণ্ডীতলা, ডানকুনি, জাঙ্গিপাড়া, বেগমপুর, ধনেখালি, সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর এবং আরামবাগে। বেগমপুর-সহ কিছু জায়গায় নিরাপত্তা-বিধি না-মেনে বাজি তৈরির জেরে আগে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তা সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।

কিছুদিন আগেই দেশের শীর্ষ আদালত বাজির ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। বাজি পোড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কম দূষণ ছড়ায়, শুধুমাত্র সেই সব বাজিই কেনাবেচা করা যাবে বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত ‘পরিবেশবান্ধব’ বা ‘গ্রিন’ বাজির কথাও বলেছে। বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ সে নির্দেশের কথা জানলেও বহু কারিগরই তা জানেন না বলে দাবি করেছেন। সোমবারই পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘আমরা চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং চন্দননগর কমিশনারেটকে জানিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টের বিধি কার্যকর করার জন্য। কারও কোনও হুঁশ নেই। প্রশাসন তো মানুষকে সতর্ক করতে মাইকে প্রচারও করতে পারত। এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ দেখিনি।’’

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘নিয়ম অনুয়ায়ী পুলিশ তল্লাশি চালাবে। আমাদের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। কমিশনারেট এলাকার সমস্ত থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রচারও চালানো হচ্ছে।’’ একই সুরে জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘শব্দবাজি রোখার ক্ষেত্রে যে সব গাইড লাইন আছে তার প্রতিটি পুলিশ দেখবে। ইতিমধ্যেই থানাগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে বাজি বেশি দূষণ ছড়ায় তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’

সোমবারই খানাকুলের নতিবপুরের শাহপাড়ায় হানা দিয়ে ২০০ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করে পুলিশ। কাউকে অবশ্য গ্রেফতার করা যায়নি। বৈধ অনুমতি ছাড়াই ওই এলাকায় বাজি বানানো হয় বংশানুক্রমে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে এখানকার কারিগরদের বিশেষ হেলদোল নেই। পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে তাঁদের দাবি। এক বাজি কারিগরের কথায়, ‘‘আমাদের কারও বাজি তৈরির লাইসেন্সই নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার জন্য নিয়ম-কানুন শিথিল করে প্রশাসনিক অনুমতির দাবি জানাচ্ছি। লাইসেন্সের ব্যবস্থা হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই বাজি তৈরি করব। যেমন চলছি, সে ভাবে চলা ছাড়া উপায় নেই। সংসার চালাতে হবে তো।”

সোমবার কলাছড়া, বেগমপুরের মতো গ্রামে গিয়েও দেখা গিয়েছে, আগের মতোই বাজি বানানো চলছে। কোথাও নিয়মের কোনও পরিবর্তন নেই। কলাছড়ার এক কারিগরের কথায়, ‘‘আগেও যে ভাবে বাজি বানিয়েছি, এখনও সে ভাবেই বানাচ্ছি। কেউ তো কিছু বলেনি।’’ তবে, কাঁচামালের দামবৃদ্ধিতে কিছুটা উদ্বিগ্ন বাজি ব্যবসায়ীরা। ফলে, বরাত কমছে কারিগরদের। এক বাজি কারিগর বলেন, ‘‘এ বার কাঁচামালের দাম বেশি। গতবার মোট দশ হাজার বাজি তৈরি করেছিলাম। এ বার ছ’হাজার বাজি তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে শেষ মুহূর্তে বাজার ভাল হলে আরও তৈরি করব।’’

ইতিমধ্যেই অনেক গ্রামে ছোট ছোট মাচায় বাজি বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে কোনটায় বেশি দূষণ হবে, কোনটায় কম— মাথা ঘামাচ্ছেন না কেউই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firecrackers Manufacturers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE