E-Paper

স্কুলছুটও পাচ্ছে অষ্টমের শংসাপত্র! বিতর্ক

স্কুলছুট বহু শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে না-উঠেই অষ্টম শ্রেণি পাশের শংসাপত্র পেয়ে যাওয়ায় সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত চাকরিতে নিয়োগে বিচিত্র সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৪
school.

পোর্টালে পড়ুয়াদের ‘অটো প্রোমোশন’-কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। প্রতীকী ছবি।

পরীক্ষা তো দূরের কথা, কেউ কেউ পঞ্চম শ্রেণির পরে আর স্কুলমুখোই হয়নি। আবার কারও কারও ষষ্ঠ শ্রেণির পরে স্কুলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাংলা শিক্ষা পোর্টালে দেখা যাচ্ছে, এমন অনেক শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছে, উঠে গিয়েছে পরের ক্লাসে। পোর্টালে পড়ুয়াদের এই ‘অটো প্রোমোশন’-কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। এ-হেন স্কুলছুট বহু শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে না-উঠেই অষ্টম শ্রেণি পাশের শংসাপত্র পেয়ে যাওয়ায় সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত চাকরিতে নিয়োগে বিচিত্র সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল নেই। সব পড়ুয়াই উঠে যাবে পরের ক্লাসে। সেই নিয়ম মেনেই বাংলা শিক্ষা পোর্টালে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব পড়ুয়াকেই প্রোমোশন দিয়ে পরের ক্লাসে তোলার সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, সেই নিয়মে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে স্কুলছুট অনেক পড়ুয়াই অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট পেয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাশ করাটা উল্লেখযোগ্য যোগ্যতা-ফলক। ন্যূনতম সেটুকু যোগ্যতা ছাড়াই অনেতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণদের জন্য চিহ্নিত চাকরি পেয়ে গেলে দু’রকম সমস্যা বাড়বে।

প্রথমত, নিয়োগকর্তা প্রবঞ্চিত হবেন। দ্বিতীয়ত, সত্যিই যাঁরা অষ্টম শ্রেণি পাশ করে কাজের চেষ্টায় আছেন, বঞ্চিত হবেন তাঁরা।

মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি জানান, তাঁদের এক পড়ুয়া ষষ্ঠ শ্রেণির পরে আর স্কুলেই আসেনি। দু’বছর পরে দেখা গিয়েছে, বাংলা শিক্ষা পোর্টালে অষ্টম শ্রেণি পাশ বলে তার সার্টিফিকেট এসেছে। যদিও মার্কশিট দেখাচ্ছে অসম্পূর্ণ। চন্দন বলেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পাশ করলে অনেক চাকরিরই আবেদন করা যায়। কোনও সংস্থা যদি মার্কশিট না-দেখে শুধু পাশ-সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে চাকরি দেয়, তা হলে তো ওই পড়ুয়া অষ্টমে না-উঠেই অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরি পেয়ে যাবে।’’

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের প্রশ্ন, ‘‘একবার কেউ প্রাক্‌-প্রাথমিকে ভর্তি হলেই কি সে বাংলা শিক্ষা পোর্টালে অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে? এ তো মারাত্মক ঘটনা।’’

হাওড়ার খাজনাবাহালা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মতে, ‘‘যারা ড্রপ-আউট নয়, স্কুলে আসছে অথচ পরীক্ষায় খুব খারাপ ফল করছে, অনেক সময় আমরা এত দিন তাদের বুঝিয়ে সেই ক্লাসে রেখে দিতাম। অভিভাবকদের বলতাম, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ও পাশ করে গেলেও খারাপ ফল করেছে তো, তাই আর এক বছর ওই শ্রেণিতে পড়ুক। এটুকু বলার স্বাধীনতা আমাদের ছিল। এখন আর সেটা থাকছে না। কারণ, ওই পড়ুয়া যে-ফলই করুক, বাংলা শিক্ষা পোর্টালের সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে পরের ক্লাসে উঠে যাচ্ছে!’’

সম্প্রতি সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ‘বুক ডে’ বা বই দিবস পালন করা হল। পড়ুয়াদের পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে বাংলা শিক্ষা পোর্টাল থেকে পাশ-সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, যারা স্কুলে এল না বা পরীক্ষা দিল না, তারা সবাই কি এই সার্টিফিকেট পেয়ে গেল?

‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের বক্তব্য, যে-সব পড়ুয়া দীর্ঘ কাল স্কুলে আসছে না, তাদের নাম যদি পোর্টাল থেকে ডিলিট করার ব্যবস্থা থাকত, তা হলে এই সমস্যা হত না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Students Schools

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy