Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Amphan

ট্যাব না-কিনে আমপানে ভাঙা ঘর মেরামতি

এখন প্রশ্ন উঠছে, ওই পড়ুয়ারা ট্যাব কেনার বিল দাখিল করবেন কী ভাবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১ ০৭:২৪
Share: Save:

জোড়া বিপর্যয়। ঘূর্ণিঝড় আমপান আর অতিমারি করোনা। এক বিপর্যয় মোকাবিলার খাতে পাওয়া টাকা অন্য বিপর্যয়ের ক্ষত সারাতে খরচ করতে হয়েছে। ট্যাব কেনার জন্য সরকারের দেওয়া ১০ হাজার টাকা ঘূর্ণিঝড় আমপানে ভাঙা বসতবাড়ি সারাতে বা বাবার জরুরি চিকিৎসায় খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। এখন প্রশ্ন উঠছে, ওই পড়ুয়ারা ট্যাব কেনার বিল দাখিল করবেন কী ভাবে?

আমপান-বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় এলাকার একটি স্কুলের ছাত্রদের বেশ কয়েক জন এ ভাবে ট্যাবের টাকায় ঘর সারাইয়ের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন জানান সেখানকার প্রধান শিক্ষক। আমপানে ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। যাঁদের ঘর ভেঙেছে, সেই টাকায় তাঁদের ঘর তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, আমপানের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। যাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের অনেকে তা পাননি। পেয়েছেন অন্যেরা। ফলে যাঁরা ভাঙা ঘরেই বাস করছিলেন, বাড়ির ছেলে বা মেয়ের নামে আসা ১০ হাজার টাকায় ট্যাব না-কিনে প্রথমে ঘর সারানোর কথাই ভেবেছেন তাঁদের অনেকে।

শুধু ভাঙড় নয়, রাজ্যের অন্য বহু এলাকার অনেক স্কুলের একটি বড় অংশের ছাত্রছাত্রীরা সরকারের দেওয়া টাকায় আদৌ ট্যাব কিনেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, ট্যাবের টাকায় চিকিৎসার জন্য তিনি তাঁর বাবাকে ভেলোরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘‘এটা শুনে, ‘কেন বাবার চিকিৎসা করিয়েছ’ বলে বকা তো সম্ভব ছিল না,’’ বলেন ওই পড়ুয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

করোনায় স্কুল বন্ধ ছিল এগারো মাস। স্মার্টফোন বা ট্যাব কেনার সামর্থ্য না-থাকায় অনেক পড়ুয়ার অনলাইনে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পরীক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা ঢুকে যায়। পরে শিক্ষা দফতর স্কুলগুলিকে জানায়, ট্যাব কেনার আসল বিল স্কুলে জমা দিতে হবে পড়ুয়াদের। কত পড়ুয়া বিল জমা দিলেন, জেলা স্কুল পরিদর্শককে তা জানাতে হবে। সেই বিল চাইতে গিয়েই বেরিয়ে পড়ছে এই সব তথ্য। অভিযোগ, অনেক পড়ুয়া এখনও ট্যাবের বিল স্কুলে জমা দেয়নি। বার বার বিল জমা দিতে বলায় অনেক পড়ুয়া স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন।

ভাঙড়ের হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি দাস জানান, অন্তত ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী এখনও বিল জমা দেননি। ‘‘বিল দিতে বলায় অনেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। ফোন ধরছে না। অনেকে ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করছে, ট্যাবের বিল জমা না-দিলে কি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা যাবে না,’’ বলেন পার্থসারথিবাবু। তিনি জানান, তাঁদের স্কুলের অনেক গরিব পড়ুয়া অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ট্যাবের টাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ভাঙা ঘর সারানো হয়েছে। তা হলে এখন সেই পড়ুয়ারা কী ভাবে বিল দেবে?

বেহালার বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিলা সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের ৯০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ২৮ জন ট্যাবের বিল জমা দিয়েছেন। ‘‘ট্যাবের বিল আসল না নকল, সেই প্রশ্নও উঠছে বহু জায়গায়। উপস্থিতি এত কম যে, যাদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা, তাদের সকলে পরীক্ষায় বসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে,’’ বলেন শর্মিলাদেবী।

কল্যাণীর ঘোষপাড়া সরস্বতী ট্রাস্ট এস্টেট বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ মণ্ডল জানান, তাঁদে ২৫০ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক জনও ট্যাবের বিল জমা দেননি।

অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি জানান, শুধু আমপান-বিধ্বস্ত এলাকা বা বাবা-মায়ের অসুস্থতা নয়, করোনা পর্বে চাকরি খোয়ানো পরিবার, লকডাউনে ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে না-পারা শ্রমিক, বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের বাড়ির পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো ট্যাবের টাকাও অনেক ক্ষেত্রে অন্য খাতে খরচ হয়ে গিয়েছে। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ট্যাবের জন্য দেওয়া টাকা অন্যান্য খাতে খরচ হয়ে যাওয়ার কথা আমরা লিখিত ভাবে শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Amphan Tabs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE