Advertisement
E-Paper

কী চেয়েছি কী পেলাম, ক্ষুব্ধ মারোয়াড়িরা

ভোটের আগে যা ছিল বিরোধীদের টেক্কা দেওয়ার অস্ত্র, ভোটের পরে তা-ই ফিরছে যেন ব্যুমেরাং হয়ে! বিধাননগরে ভোটের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অবাঙালি ব্যবসায়ী মহল তৃণমূলকে জানিয়ে দিল, এই পথেই চললে ২০১৬ সালে ভুগতে হবে! যার জেরে দলের অন্দরেও জোরালো হল গা-জোয়ারির ভোট করানো নিয়ে প্রশ্ন!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৩

ভোটের আগে যা ছিল বিরোধীদের টেক্কা দেওয়ার অস্ত্র, ভোটের পরে তা-ই ফিরছে যেন ব্যুমেরাং হয়ে!

বিধাননগরে ভোটের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অবাঙালি ব্যবসায়ী মহল তৃণমূলকে জানিয়ে দিল, এই পথেই চললে ২০১৬ সালে ভুগতে হবে! যার জেরে দলের অন্দরেও জোরালো হল গা-জোয়ারির ভোট করানো নিয়ে প্রশ্ন!

বিধাননগরে গত বছর লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। অবাঙালি ভোটারদের প্রায় সব অংশই সে বার দাঁড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীর পাশে। পুরভোটে খেলা ঘোরাতে তাই আসরে নেমেছিল তৃণমূল। রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে সঙ্গে নিয়ে সল্টলেকের মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই আসরের মুখ্য উদ্যোক্তা ছিলেন ব্যবসায়ী কমল গাঁধী। বাম আমলে যাঁর পরিচিতি ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ‘স্নেহধন্য’ হিসেবেই। মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ বিধাননগরের উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকেই সমর্থন করছে, ভোটের আগে এই ঘোষণায় বাড়তি স্বস্তি পেয়েছিল শাসক শিবির। কিন্তু ভোটের দিনের কাণ্ডকারখানায় সেই স্বস্তিই ভবিষ্যতের জন্য অস্বস্তি হয়ে ফিরছে তৃণমূলের কাছে! মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের তরফেই তৃণমূলকে রাতারাতি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে! আর ২০১৬-য় সমর্থন প্রত্যাশা না করাই ভাল!

নিজের সম্প্রদায়ের সতীর্থদের চাপে এই মনোভাব জানিয়ে দিতে উদ্যোগী হতে হয়েছে কমলকেই। যিনি রবিবার বলেছেন, ‘‘সব্যসাচী দত্তের হয়ে আমরা প্রচার করেছিলাম। তৃণমূলের সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে, তার জন্যই তাদের সমর্থন করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু শনিবার ভোটের দিন যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য সমর্থন দিইনি! বিধাননগর জুড়ে দিনভর যে ঘটনাক্রম চলেছে, তাতে না আমাদের সমর্থন আছে, না আমরা এ সব পছন্দ করছি!’’ কমলের প্রশ্ন, ‘‘মানুষের ভোটাধিকার থাকবে না?’’ সল্টলেকের অবাঙালি ভোটারদের তরফে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে একের পর এক ফোন এসেছে কমলের কাছে। প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কাদের সমর্থন দিয়েছি? যারা বুথে কাউকে ঘেঁষতেই দিচ্ছে না! তাঁদের মধ্যে কারও কারও বক্তব্য, স্বয়ং সব্যসাচীর ওয়ার্ডে ভোট দিতে বিশেষ বাধা পেতে হয়নি। কিন্তু অন্যত্র যা হয়েছে, অকল্পনীয়!

বস্তুত, বাঙালি ও অবাঙালি নির্বিশেষে বিধাননগরের প্রভাবশালী নাগরিকদের কেউ কেউ তাঁদের মতো করে তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদদের কাছে মনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, বাম আমলেও বিধাননগরে ভোট ঘিরে অনিয়ম হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। কিন্তু দুনিয়ার বহিরাগত জড়ো করে সারা দিন রিগিং এবং সাংবাদিকদের উপরে বেপরোয়া আক্রমণ তাঁরা আগে দেখেননি! এই সূত্রেই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটটা তৃণমূল যেন নিজ দায়িত্বে বুঝে নেয়। এই অভিজ্ঞতার পরে কোনও সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর পক্ষেই আগাম সমর্থন জানানো সম্ভব নয়!

দলের অন্দরের আলোচনায় একই মত ব্যক্ত করেছেন জনাতিনেক বিধায়কও। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট এক বা দু’জনকে দায়িত্ব দিয়ে ভোট করালেই ভাল হতো। বাইরে থেকে বিধায়ক, কাউন্সিলারেরা এসেছেন। কে কত লোক নিয়ে এসেছেন, কে কোথায় কত হাঙ্গামা পাকাচ্ছে, কোনও কিছুরই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়নি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘এতে আমরা হয়তো বিধাননগরে ৪১-০ বা বালিতে ১৬-০ জিতব। কিন্তু ব্যবসায়ী মহল-সহ সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাস চিরতরে হারাব!’’ দলের আর এক নেতার মন্তব্য, ‘‘কাউন্সিলরদের অনেকে বহু টাকা খরচ করে টিকিট পেয়েছিলেন। তাঁরা ভোটারদের উপরে বিশ্বাস রাখার ঝুঁকিই নিতে চাননি! এ ভাবে ভোট হয়?’’ সিপিএম নেতা গৌতম দেব ‘চার হাজার ছেলে নামিয়ে খালে বাইক ফেলে দেওয়া’র হুঁশিয়ারি দিতেই তৃণমূল কেন কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে পুরোপুরি পেশি শক্তিতে চলে গেল, দলে প্রশ্ন আছে তা নিয়েও।

তবে প্রশ্ন থাকাই সার! পাছে বিরোধীদের অভিযোগ মান্যতা পেয়ে যায়, এই আশঙ্কায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ উল্টো গাইছেন! ভোটের দিন বিধাননগরে ঘটা যাবতীয় ঘটনার জন্য তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা এ দিনই সব দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের ঘাড়ে! কমলদের অসন্তোষকে কোনও আমলই না দিয়ে সুব্রতবাবু মন্তব্য করছেন, ‘‘লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য সিপিএম পরিকল্পনা করে অশান্তি করেছে। হেরে গিয়ে তার পর বলছে, ভোট দিতে পারলাম না! বাইরের লোক এনেছে!’’ মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও বুঝে নিয়েছেন, ২০১৫-য় তাঁরা যে অবস্থান নিয়েছেন, ২০১৬-য় হয়তো তা রাখা যাবে না!

marwari community tmc behaviour poll day tmc angry saltlake marwari community
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy