প্রতীকী চিত্র।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে ধৃত হাবরার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানোর প্রতিবাদ ও সমালোচনা আরও প্রবল হল।
সোমবার বিভিন্ন সংগঠন থানায় গিয়ে যেমন পুলিশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করেছে, তেমনই স্মারকলিপি, বিক্ষোভ— কিছুই বাদ যায়নি। আলোড়ন পড়েছে স্থানীয় শিক্ষক মহলেও। এর মধ্যে কেউ কেউ স্কুলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ছায়াও দেখছেন। কারণ, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র হাবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক। কিন্তু স্কুলের সভাপতি বলরাম পাল তৃণমূল কর্মী। ঘটনার নেপথ্যে দু’জনের বিবাদের কথাও তুলছেন ওই স্কুলেরই শিক্ষকদের একাংশ।
২৪ অক্টোবর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটিকে স্কুলের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। গত শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ বিরাটির বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার বারাসত আদালতে হাজির করানোর পথে প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানো হয়। পুলিশের এই কাজেই উঠছে প্রশ্ন। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলছে, জঙ্গি বা দাগি অপরাধীদের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে হাতকড়া পরানো হতে পারে। এমন কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বাদে কোনও অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো নিষিদ্ধ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন বিকেলে হাবরা থানার সামনে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’, ‘আক্রান্ত আমরা’ এবং একটি মানবাধিকার সংগঠন বিক্ষোভ দেখায়। এবিটিএ-র প্রতিনিধিরা থানায় গিয়ে প্রতিবাদ জানান। ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে পুলিশ কোনও ঘটনায় অতি সক্রিয়, আবার কোনও ঘটনায় নিক্রিয়। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে।’’ হাবরায় এসে ‘আক্রান্ত আমরা’র তরফে অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষককে হাতকড়া পরানো আইনবিরুদ্ধ।’’
প্রতিবাদ হয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষকমহলেও। তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের বারাসত মহকুমার প্রাক্তন আহ্বায়ক তথা হাবরার প্রফুল্লনগর বিদ্যমন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই শিক্ষক তো খুনি-ডাকাত ছিলেন না। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক মহলকে অপমান করা হল। অমি খুবই মর্মাহত।’’ কিন্তু ওই স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের মতে করছেন, পরিচালন সমিতির সভাপতি বলরামবাবুর সঙ্গে রাজনৈতিক আদর্শগত বিরোধ এবং স্কুলের উন্নয়ন কাজ ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধেরই মাসুল গুনতে হল প্রধান শিক্ষককে। শিক্ষকদের কেউ কেউ জানান, ৩ নভেম্বর স্কুলের ‘রেজুলিউশন বুক’ প্রধান শিক্ষকের থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। ঘটনাটি প্রধান শিক্ষক থানাকে জানাবেন ভেবেছিলেন। পর দিনই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। তিনি গ্রেফতার হন।
বলরামবাবুর দাবি, গোটা ঘটনার পিছনে তিনি বা পরিচালন সমিতির কেউ জড়িত নন। অভিযোগ বা গোলমালের কথা মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে ৩ নভেম্বরের বৈঠকে পরিচালন সমিতির সদস্যদের মত নিয়েই প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ‘রেজোলিউশন বুক’ নিয়ে নেওয়া হয়। অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁকে লিখতে দেওয়া যায় না।’’
এ দিন হাবরায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের দেখা মেলে বাড়িতেই। কিন্তু সে দোতলা থেকে নীচে নেমে কথা বলবে বলে জানিয়েও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়নি। স্কুলে সে ভাল ছাত্র বলে পরিচিত। সে কেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল, তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষকেরা। এ দিন তার বাবা ফোন ধরেননি। রবিবার রাতে ফোনে তাঁর দাবি, কলকাতায় আছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআরের প্রতিলিপি স্কুলের সভাপতির কাছে আছে। কিন্তু সেই প্রতিলিপি কেন সভাপতির কাছে থাকবে, তার উত্তর দেননি। স্কুলের সভাপতি বলরামবাবুর দাবি, ‘‘আমার কাছে এফআইআরের প্রতিলিপি নেই। কেউ বললে মিথ্যা বলেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy