Advertisement
১০ মে ২০২৪

বাঁধের দিকে তাকালে ‘চোখ তুলে নেওয়ার’ হুমকি ঝাড়খণ্ড-মন্ত্রীর

বাঁধের দিকে তাকালে ‘চোখ তুলে নেওয়ার’ হুমকি দিলেন পড়শি রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী লুইস মারান্ডি। জবাব দিল বাংলার শাসক তৃণমূলও।

মশানজোড় বাঁধে এই সাদা-নীল রং করা নিয়েই হুমকি। নিজস্ব চিত্র

মশানজোড় বাঁধে এই সাদা-নীল রং করা নিয়েই হুমকি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও রাঁচী শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

দুমকার মশানজোড় জলাধারের দেওয়ালে নীল-সাদা রং করা নিয়ে সুর আরও চড়াল বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ড। বাঁধের দিকে তাকালে ‘চোখ তুলে নেওয়ার’ হুমকি দিলেন পড়শি রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী লুইস মারান্ডি। জবাব দিল বাংলার শাসক তৃণমূলও।

এই বাঁধ ঝাড়খণ্ডে থাকলেও কেন্দ্রীয় চুক্তি মেনে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সম্প্রতি ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মশানজোড় জলাধারের দেওয়াল নীল-সাদায় রাঙানোর কাজ শুরু করেছে সিউড়ি সেচ দফতর। দুমকার বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশের আপত্তিতে বুধবার মাঝপথে বন্ধ হয় সেই কাজ। জলাধারে যাওয়ার রাস্তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দু’টি ‘ওয়েলকাম বোর্ড’-এ বিশ্ববাংলার ‘লোগো’য় শুক্রবার ঝাড়খণ্ড সরকার লিখে ‘স্টিকার’ও সেঁটে দেওয়া হয়।

বিতর্ক মেটাতে আলোচনা শুরু হয়েছিল বীরভূম ও দুমকা জেলা প্রশাসনের মধ্যে। এরই মধ্যে রবিবার সকালে দুমকায় জলাধার সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড সেচ দফতরের বাংলোয় বসে সংবাদমাধ্যমের কাছে স্থানীয় বিধায়ক লুইস বলেন, ‘‘এটা ঝাড়খণ্ড। বাইরের কেউ এসে খবরদারি করবে, তা মেনে নেব না। বাঁধের রং লাল-সাদা ছিল, সেটাই থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের জন্যই নীল সাদা রং করা হচ্ছে। বাঁধের দিকে তাকালে চোখ তুলে নেব!’’ এখানেই শেষ নয়, তাঁর মন্তব্য, ‘‘মশানজোড় বাঁধ কার, সেটা বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে। ওই বাঁধের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের ভাবাবেগ জড়িত। কিন্তু বাঁধ থেকে জল, বিদ্যুৎ—কিছুই পায় না ঝাড়খণ্ড।’’

বাংলায় দলের রাজ্য সভাপতি হলেও দিলীপ ঘোষও ঝা়ড়খণ্ড বিজেপির সুরেই বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিমানবন্দরে, রেলের জায়গায় নীল-সাদা রং করে। ঝাড়খণ্ডেও একই কাজ করতে গিয়েছিল। তারা তাদের স্বাভিমানের জায়গা থেকে আপত্তি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তো পাল্টা তির হজম করার শক্তি থাকা উচিত। দুই সরকারের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো উচিত।’’

আরও পড়ুন: বিনাযুদ্ধে পঞ্চায়েতে জয়ীদের কী হবে, নজর আজ কোর্টে

যা জেনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই জলাধারের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের সব কথাই শুনতে হবে, এমন তো লেখা নেই! আর দিলীপবাবু এক দিকে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষকে গলাধাক্কা দিতে চাইছেন, আবার অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের স্বাভিমান রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন! এ ভাবে যে বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করছেন, সেটা বুঝতে পারছেন না।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ময়ূরাক্ষী নদীর জল ধরে চাষের কাজে লাগাতে ১৯৫৫ সালে মশানজোড় জলাধার তৈরি হয়। এ রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র আগেই জানিয়েছিলেন, ওই জলাধারে কী রং করা হবে, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁদের রয়েছে। ঘটনা হল, এই প্রথম ওই বাঁধে নীল-সাদা রং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিউড়ি সেচ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাঁধের রং পুরনো হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যের সব জায়গায় নীল-সাদা হচ্ছে। এখানেও তা-ই করা হচ্ছিল।’’ যদিও ঝাড়খণ্ডের দাবি, পুরনো লাল-সাদা রংই থাকুক। তবে সংঘাত মেটাতে দুমকার জেলাশাসক মুকেশ কুমারের সঙ্গে কথা হয়েছে বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর। ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বীরভূম) কিংশুক মণ্ডল শনিবার দেখাও করেন দুমকার জেলাশাসকের সঙ্গে। সে রাতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘ওয়েলকাম বোর্ড’ থেকে ঝাড়খণ্ডের লোগো সরানো হয়।

তার পরেও কেন হুমকি? লুইস এ দিন সন্ধ্যায় ফোনে দাবি করেন, সকালে কী বলেছেন, তাঁর ঠিক মনে নেই! তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘নীল সাদা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি রং হিসেবে পরিচিত। মশানজোড় বাঁধ ঝাড়খণ্ডের সীমানায়। পশ্চিমবঙ্গ তা দেখভাল করলেও ওই রং জায়গাটির ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে ধন্দ ছড়াতে পারে।’’ তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্য, ‘‘ওই বাঁধ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চুক্তি হয়েছিল তৎকালীন বিহার সরকারের সঙ্গে। ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মন্ত্রীরা সেটা জানেন না। ওঁদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম। কখন কী বলতে হয়ে জানেন না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Massanjore Dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE