Advertisement
E-Paper

হবু ডাক্তারদের হাত পাকাতে পুতুলই রোগী

শিশুখেলা থেকে পুতুল এ বার সরাসরি উঠে আসছে হবু ডাক্তারদের শিক্ষার টেবিলে। ইঞ্জেকশন হোক বা নবজাতকের জরুরি শুশ্রূষা, রক্ত নেওয়াই হোক বা হৃদ্‌যন্ত্র চালু করার ম্যাসাজ— সব কিছুরই প্রশিক্ষণ চলবে পুতুল-রোগীর উপরে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০০

শৈশবে ডাক্তার-ডাক্তার খেলায় সঙ্গী হিসেবে কাউকে না-পেলে বুকে স্টেথো বসিয়ে পরীক্ষা করতে ভরসা সেই পুতুল। ইঞ্জেকশন দিতেও পুতুলই নির্বিবাদ রোগীর ভূমিকায়।

শিশুখেলা থেকে পুতুল এ বার সরাসরি উঠে আসছে হবু ডাক্তারদের শিক্ষার টেবিলে। ইঞ্জেকশন হোক বা নবজাতকের জরুরি শুশ্রূষা, রক্ত নেওয়াই হোক বা হৃদ্‌যন্ত্র চালু করার ম্যাসাজ— সব কিছুরই প্রশিক্ষণ চলবে পুতুল-রোগীর উপরে।

চিকিৎসা-গাফিলতির ক্রমবর্ধমান অভিযোগ এবং তার পরিণামে হাঙ্গামা এড়াতেই নেওয়া হচ্ছে এই পথ। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর চিকিৎসা করে জুনিয়র ডাক্তার বা ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীদের হাত পাকানোটাই চিরাচরিত মেডিক্যাল প্রশিক্ষণের অঙ্গ। কিন্তু চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্কের অবনতির জেরে এ বার পুতুল-রোগীর উপরেই হাত পাকাতে হবে হবু ডাক্তারদের!

রক্তমাংসের রোগীর চিকিৎসা করে কাজ শিখতে গিয়ে নবীন চিকিৎসকের ভুল হতে পারে। স্বাস্থ্য মহলের বক্তব্য, চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক এত তিক্ততা, অসহিষ্ণুতা আর অবিশ্বাসে ভরে উঠেছে যে, একটু ভুলেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে। হচ্ছেও। অথচ প্রশিক্ষণ জরুরি। মুশকিল আসান করতে ‘ম্যানিকুইন সিম্যুলেটর’ বা পুতুল-যন্ত্রের দ্বারস্থ হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক!

আরও পড়ুন: বাংলা অ্যাকাডেমির পদ ছাড়ছেন শাঁওলি মিত্র

ছেলে, মেয়ে, বাচ্চা, বুড়ো, গর্ভস্থ শিশু— এক্কেবারে মানুষের মতো দেখতে সব পুতুল। ইঞ্জেকশন দেওয়া, ইঞ্জেকশনের সেন্ট্রাল চ্যানেল তৈরি করা, এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব বসানো, হৃদ্‌যন্ত্র চালু করতে বিশেষ ম্যাসাজ দেওয়া, অসুস্থ নবজাতককে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার মতো বিভিন্ন কাজ রক্তমাংসের রোগীর বদলে ওই সব পুতুলের উপরে ডাক্তারি করেই শিখবেন ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীরা। বিদেশে অনেক জায়গায় নব্বইয়ের দশক থেকেই এই ব্যবস্থা চালু আছে। কারণ সেখানে পান থেকে চুন খসলেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা করে রোগীর পরিবার।

• হুবহু মানুষের মতো দেখতে মডেল বা পুতুল।

• হাত-পা-মাথা-ঘাড় নাড়ানো বা ঘোরানো যায়।

• মানবশরীরের মতোই থাকে পেশি, শিরা-ধমনী।

• ভুল ভাবে টিউব ঢোকালে, ফ্লুইড চালালে বা কার্ডিয়াক শক দিলে ধরা পড়ে মনিটরে।

ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে জানায়, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে সারা দেশে ন’টি ‘স্কিল ল্যাব’ গড়ে তোলা হবে। সেখানে থাকবে আধুনিক পুতুল-যন্ত্র। দু’টি স্কিল ল্যাব হবে বাঁকুড়া ও বর্ধমান মেডিক্যালে। বাকি কেন্দ্রগুলি তৈরি হবে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও কর্নাটকে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থ প্রধান জানালেন, পুতুল-যন্ত্রগুলির ভিতরে ভুল নির্ণয়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। পুতুলকে ইঞ্জেকশন দিতে, গলায় টিউব ঢোকাতে বা অন্য কোনও চিকিৎসায় ভুল হলে তৎক্ষণাৎ মনিটরে ভুলের কথা ভেসে উঠবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জানান, ডাক্তারি পড়ুয়ারা শরীর ব্যবচ্ছেদ শেখেন মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করে। কিন্তু শরীরে টিউব ঢোকানো, রক্ত নেওয়া, স্যালাইন দেওয়া, ইন্ট্রা-মাস্কুলার বা ইন্ট্রা ভেনাস ইঞ্জেকশন দেওয়া, রোগীকে ভেন্টিলেটরে ঢোকানোর মতো কাজ তাঁদের শিখে নিতে হয় হাসপাতালে। একাধিক বার সুচ ফোটালে মানুষ-রোগী আপত্তি করতে পারেন, পুতুল করবে না।

অনেক সময়েই হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে থাকেন শুধু জুনিয়র ডাক্তারেরা। গুরুতর কোনও কেস এলে তাঁরাই যাতে নির্ভুল পরিষেবা দিতে পারেন, স্কিল ল্যাবে সেই প্রশিক্ষণই দেওয়া হবে, জানাচ্ছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে নয়া কার্যক্রমের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনিই।

Dolls Medical Students Test Injection
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy