Advertisement
২০ মে ২০২৪

ওষুধেই কি বাড়বাড়ন্ত, প্রশ্ন দশ শিশুকে ঘিরে

বয়স মেরেকেটে সাত মাস। কিন্তু শরীরের গড়ন দেখে মনে হয়, বছর দেড়েকের! ঠাকুরপুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম থেকে উদ্ধার হওয়ায় দশটি শিশুর শরীর-মনে নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখতে পাচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞেরা। তার মধ্যে এই একটি কন্যাসন্তানের শরীরের অস্বাভাবিক বাড় ভাবাচ্ছে তাঁদের।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

বয়স মেরেকেটে সাত মাস। কিন্তু শরীরের গড়ন দেখে মনে হয়, বছর দেড়েকের!

ঠাকুরপুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম থেকে উদ্ধার হওয়ায় দশটি শিশুর শরীর-মনে নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখতে পাচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞেরা। তার মধ্যে এই একটি কন্যাসন্তানের শরীরের অস্বাভাবিক বাড় ভাবাচ্ছে তাঁদের। স্বাস্থ্যের এ হেন বৃদ্ধির জন্য দেহে কোনও ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি তো, খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘আমাদের মনে হচ্ছে, ওই শিশুটির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাটির মুখের গড়নেও কিছুটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে হয় তো সে কারণেই।

ঠাকুরপুকুর হাঁসপুকুরের ‘পূর্বাশা’ মানসিক হোমের তিনতলায় ওই শিশুগুলিকে রেখেছিল বাসন্তী চক্রবর্তী, বিমল অধিকারী ও হোমের মালিক রিনা চট্টোপাধ্যায়। ধরা পড়েছে প্রত্যেকেই। আপাতত জোকা ইএসআই হাসপাতালে রাখা হয়েছে দশটি শিশুকে।

সিআইডি-র এক গোয়েন্দার অনুমান, ‘‘হয় তো ওই শিশুটির জন্য এমন কোনও দম্পতি জোগাড় করা হয়েছিল, যাঁরা একটু স্বাস্থ্যবান বাচ্চা চেয়েছিলেন।’’ গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, শিশুটিকে হয় তো বিদেশে বিক্রির বরাত পাওয়া গিয়েছিল, যারা অপুষ্ট শিশু নিতে চায়নি। সে কারণেই শিশুটির উপরে ওষুধ প্রয়োগ করে দ্রুত তার আকার বৃদ্ধির চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে।

শিশু বিশেষজ্ঞ প্রবাল নিয়োগী বলেন, ‘‘শিশুর স্বাস্থ্য ভাল করতে ওষুধ প্রয়োগ করা হতে পারে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীতও হয় কোনও কোনও ক্ষেত্রে। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে কী ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল, নানা ধরনের পরীক্ষার পরে তা বোঝা সম্ভব।’’ শিশু বিশেষজ্ঞদের কারও কারও মতে, এ ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের প্রয়োগও হয়ে থাকতে পারে।

সিআইডির এক তদন্তকারী জানালেন, যে রাতে পূর্বাশা হোমের তিনতলার ঘরের দরজা খুলে হদিস মিলেছিল বাচ্চাগুলির, দেখা গিয়েছিল, কোনও শিশু মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করছে। কোনওটি নিস্তেজ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু এই বিশেষ শিশুটি অফিসারদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে। তাঁকে কোলে তুলে নেন একজন। তবে কোনও কান্নাকাটি ছিল না। হাসপাতালেও সে চমমনে রয়েছে। নিজেই খেলা করছে।

হাসপাতাল সুপার সমীর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ওই শিশুগুলিকে বিশেষ যত্নে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা হয়েছে। প্রত্যেকেই অপুষ্টির শিকার।’’ আকারে বড় হলেও এই শিশুকন্যাটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞেরা। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়, কেউ জন্মের পরে মায়ের দুধের স্বাদ পায়নি। সে কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় নেই। সুপার জানান, সেই কারণেই শিশুবিভাগে রাখা হয়নি তাদের। সেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, একটি শিশু সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। একজনের থ্যালাসেমিয়া আছে। শিশুগুলি কান্নাকাটি করছে। এত দিন ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া না মেলায় এখন বেশি পরিমাণ দুধ খাচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন।

সিআইডি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, মছলন্দপুরে ‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর কাছে মাঠ থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুর দেহাবশেষ, হাড়গোড় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সোমবার শিশু পাচার-কাণ্ডে ধৃত উত্তর কলকাতার ‘শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম’-এর চিকিৎসক সন্তোষ সামন্তের এক সহযোগী চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই চিকিৎসক সল্টলেকের বাসিন্দা। তিনি সন্তোষের সহযোগী হিসাবে ওই নার্সিংহোমে ২০১২ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। বাসন্তীর একটি নার্সিংহোমের সঙ্গেও শিশু পাচারের যোগ মিলেছে বলে দাবি করেছেন সিআইডি-র এক অফিসার।

শিশুপাচার চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার তোলা হয়েছিল বসিরহাট আদালতে। জেলহাজতে থাকা পার্থকে দু’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় সিআইডি। আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medicine baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE