Advertisement
E-Paper

ধুঁকছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, হাল ফেরাতে উদ্যোগ

সাড়ম্বরে তৈরি হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠী। একের পর এক দল তৈরি হয়ে গিয়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্ত ওই পর্যন্তই। সে সব দলের এখন ঠিক কেমন অবস্থা, কতটা কাজ করেন তাঁরা, যে লক্ষ্যে দল গড়া, সেই রোজগারই বা হয় কত দূর। জানেন না অনেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:০৩

সাড়ম্বরে তৈরি হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠী। একের পর এক দল তৈরি হয়ে গিয়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্ত ওই পর্যন্তই। সে সব দলের এখন ঠিক কেমন অবস্থা, কতটা কাজ করেন তাঁরা, যে লক্ষ্যে দল গড়া, সেই রোজগারই বা হয় কত দূর। জানেন না অনেকেই।

একটু খোঁজ খবর নিলেই শোনা যায় অজস্র অভিযোগ। দল তৈরিতে যত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তীকালে নজরদারিতে বা সকলকে ঋণ পাইয়ে দেওয়া দেওয়ার বিষয়ে তেমন উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। উল্টো দিকে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কারও কোনও হেল দোল নেই।

খাতায় কলমে অজস্র দলের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে তারা আর কাজ করছে না। যেমন ধরা যাক ডেবরার চকরাধাবল্লভ গ্রামের অগ্নিবীনা স্বনির্ভর দল তৈরি হয়েছিল ২০০৪ সালে। দলের সদস্য দুলালি মাণ্ডির কথায়, ‘‘প্রথম গ্রেডিংয়ের পর একবার ২৫ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছিলাম। তা দিয়ে ছাগল ব্যবসাও করেছিলাম। পরবর্তীকালে সমন্বয়ের অভাবে আর কিছুই করা যায়নি। এখন শুধু নামে দলটি রয়েছে।”

তবে আছে উল্টো ছবিও। বিনপুরের বেলবনি গ্রামের বীরবাহা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য রিক্তা মাহাতোর কথায়, ‘‘আমাদের দলটি মুক্তিধারায় যুক্ত হওয়ায় ভালোই চলছে। আমরা এখন সব্জি চাষ, এসআরআই পদ্ধতিতে ধান চাষ থেকে শালপাতার থালা তৈরি— সব কিছুই করি। তাতে লাভও হয়।”

আবার বিনপুরেরই অড়মা গ্রামের রাহালারি মিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য আশা মুর্মু বলেন, “আমাদের দল ২০০৯ সালে তৈরি হয়েছিল। ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জৈব সার তৈরি করেছি। প্রথমে বিক্রি করে ততটা লাভ পাইনি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দিকে একটু বেশি নজর দিলে, বিপণনের ক্ষেত্রে একটু সহযোগিতা করলে আমরাও উন্নতি করতে পারব।”

এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে দলগুলিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে নতুন করে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্যের ১৯টি জেলায় অর্থও বরাদ্দ করেছে। সেই অর্থে নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, গ্রেডিং করিয়ে আবর্তনীয় তহবিলে অর্থও দেওয়া হবে।

তা ছাড়া ঋণ শোধের মূল সমস্যার ক্ষেত্রেও ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে সরকার। কাজটি দলগত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ নেওয়ার পর দলের সদস্যরা টাকা ভাগ করে নেন। তারপর ব্যক্তিগত ভাবে কেউ ছাগল পালন, কেউ সিমেন্টের খুঁটি তৈরি কেউ বা সেলাই মেশিন কিনে সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু দলগত ভাবে উন্নত পদ্ধতিতে চাষ, জৈব সার তৈরি বা প্রাণী পালন করলে লাভ বেশি হত।

তারপর অনেক দলের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও তীব্র অনীহা লক্ষ করা যায় বলে অভিযোগ। সে কারণেই অনেক সময় ব্যাঙ্কও ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় না। এ বার উপসঙ্ঘ, সঙ্ঘ ও ফেডারেশনকে সক্রিয় করে এই দুর্বলতা কাটানোর জন্যও পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

রাজ্যের ১৯টি জেলায় প্রায় ৭ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে প্রশিক্ষণ বাবদ। তার মধ্যে ৭২ লক্ষ টাকা পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশিক্ষণ বাবদ। এছাড়াও স্বনির্ভর দলে গুলির উন্নতির জন্য ১৯টি জেলাকে প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পেয়েছে ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা।

জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক নিবেদিতা মণ্ডল বলেন, “আমরা প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে দিয়েছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কোন দলের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা রয়েছে। সমস্যা কাটিয়ে প্রতিটি সক্রিয় করায় আমাদের লক্ষ্য।”

প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় স্বনির্ভর দলের সংখ্যা ২৭৫২৫টি। নতুন করে স্ব-সহায়ক জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৯০টি সঙ্ঘ তৈরি করার কথা। কিন্তু হয়েছে মাত্র ২৫০টি।

কিন্তু সেগুলির বর্তমান পরিস্থিতি কী?

সে বিষয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। স্বনির্ভর দলের বর্তমান অবস্থা জানতে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। সেই তালিকা আসার পরেই ব্লক ভিত্তিক সমীক্ষা চালানো হবে। কোন কোন দলের সমস্যা তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি দুর্বল দলগুলিকে সক্রিয় করার জন্যও পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

medinipur self help group self help group struggle for existence debra self help group binpur self help group
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy