দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে প্রবেশ করলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদ। ছবিটি ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটি সৌজন্যে প্রাপ্ত।
ছিটমহল হস্তান্তর প্রক্রিয়ার রূপরেখা ঠিক করতে দুই দেশের আধিকারিক পর্যায়ের বৈঠক বসছে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায়। আজ বৃহস্পতিবার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত এলাকার বিওপি’র জিরো পয়েন্টে ওই বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের প্রস্তুতির মধ্যে বুধবার ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কোচবিহার জেলা প্রশাসন।
সরকারি সূত্রের খবর, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ৩১ জুলাইয়ের মধ্য রাত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। ২০১১ সালের দুই দেশের যৌথ জনগণনার তালিকাভুক্ত ও তার পর জন্মগ্রহণকারীরা এদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দুই দেশের যৌথদল ওই ব্যাপারে বাসিন্দাদের মতামত নেবেন। তবে কেউ বাংলাদেশের ভূখন্ডে ফিরতে আগ্রহী হলে নির্দিষ্ট ফর্মে ওই দলের কাছে আবেদন জানাতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের জমি বিক্রি করা যাবে না। ১ অগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জমি বিক্রি করা যাবে। সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে আগ্রহীদের ট্রাভেল পাশ দেবে প্রশাসন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এদিন ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই ব্যাপারে ছিটমহলে প্রচারাভিযান চালান হবে।”
সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ে চুক্তি সই করেছেন দুই দেশের শীর্ষকর্তারা। বাংলাদেশ সরকার তাদের আওতাধীন ১১১টি ছিটমহলের জন্য প্রাথমিক ভাবে ২০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। ৫১টি ছিট মহলের জন্য ভারত সরকার অবশ্য কয়েকগুণ বেশি প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কিন্তু ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি রূপায়িত হলে বাসিন্দারা কে কোন দেশের নাগরিক হিসাবে থাকতে চান, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ওই ব্যাপারে জনগণনার পাশাপাশি বাসিন্দাদের মতামত জানতে চাইছেন দু’দেশের কর্তারা।
প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে ওই মতামত জানতে একটি ফর্ম বিলি করা হবে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, এতে উভয় দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা কে কোন দেশে থাকতে আগ্রহী সেই পছন্দের সুযোগ পাবেন।
সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, লালমণিরহাট ও পঞ্চগড় জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে ওই ব্যাপারে বিশদে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও জমি সংক্রান্ত রেকর্ড, সীমানা নির্ধারণ থেকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া রূপায়ণ করতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারেও দুই দেশের জেলা প্রশাসনের কর্তারা মত বিনিময় করবেন বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে ছিটমহলগুলির নিরাপত্তার পরিকাঠামো তৈরি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দুই দেশের আধিকারিক পর্যায়ের এমন তৎপরতায় খুশি ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বাজেটে ছিটমহলের উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। পুনর্বাসন ও উন্নয়নে আরও ৭৮০০ কোটি টাকা টাকা বরাদ্দ করবে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। ভারত অবশ্য প্রাথমিকভাবে ৩২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকৃত ব্যবহার হলে ওই বরাদ্দ এলাকার উন্নয়নে আপাতত যথেষ্ট। এই নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দুই দেশের আধিকারিক পর্যায়ের প্রথম বৈঠক ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা বেড়েছে। নভেম্বরের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তর, পুনর্বাসন ও নাগরিকত্বের প্রাথমিক কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।”
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কোচবিহারের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ ও দিনহাটার মহকুমা শাসকরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে পদস্থ আমলাদের একটি দলও ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। স্বরাস্ট্র, বিএসএফ, অতিরিক্ত রেজিস্টার জেনারেল (জনগণনা) সহ কেন্দ্র-রাজ্যের আরও কয়েকজন শীর্ষকর্তারও বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের তরফে চার জেলার জেলাশাসকদের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল বৈঠকে যোগ দেবেন। ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটিই ভারত ও বাংলাদেশের আধিকারিক পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। বেলা ১১টা নাগাদ সড়কপথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা চ্যাংরাবান্ধায় ঢুকবেন। বৈঠক সেরে এদিনই তাঁদের ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy