Advertisement
E-Paper

অবাধে নেপালি আসা ঠেকাতে নজর চুক্তিতে

স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি জানা গিয়েছে দার্জিলিং পুরসভার চার কাউন্সিলার এখনও নেপালের নাগরিক। তাঁরা দার্জিলিংয়ে এসে রেশন কার্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করে ভোটে দাঁড়ালেও নেপালের নাগরিকত্ব ছাড়েননি। সাম্প্রতিক গোলমালের সময় এক কাউন্সিলার নেপালের ইলম জেলার ছড়িয়াল থেকে ১৫০ জনকে দার্জিলিংয়ে নিয়ে এসে গোলমাল পাকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২০

গত তিন দশকে দার্জিলিং-কালিম্পং পাহাড় এবং শিলিগুড়িতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে নেপালি জনসংখ্যা। নেপালিদের সংখ্যা যতই বাড়ছে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের তেজও চড়েছে পাল্লা দিয়ে। এমনটাই মনে করছে নবান্নের একাংশ। গোর্খা আন্দোলনের জেরে সদ্য পাহাড় বন্ধ থেকেছে টানা ১০৪ দিন। এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি এড়াতে রাজ্য এ বার ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল সীমান্ত চুক্তির পুর্নমূল্যায়ন চাওয়ার পরিকল্পনা করছে। ভারত সরকারের কাছে এই মর্মে নবান্ন দাবি জানাতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু কীসের ভিত্তিতে সরকার এই আর্জি জানাবে?

স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি জানা গিয়েছে দার্জিলিং পুরসভার চার কাউন্সিলার এখনও নেপালের নাগরিক। তাঁরা দার্জিলিংয়ে এসে রেশন কার্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করে ভোটে দাঁড়ালেও নেপালের নাগরিকত্ব ছাড়েননি। সাম্প্রতিক গোলমালের সময় এক কাউন্সিলার নেপালের ইলম জেলার ছড়িয়াল থেকে ১৫০ জনকে দার্জিলিংয়ে নিয়ে এসে গোলমাল পাকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র কর্তাদের দাবি, ইলম থেকে আসা সেই বাহিনীই জোড়বাংলো এলাকায় ভাঙচুর, তাণ্ডব চালিয়েছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে মোর্চার ওই মহিলা কাউন্সিলার এখন নেপালে বাপের বাড়ি পালিয়ে গিয়েছেন। আরও তিন কাউন্সিলারও নেপালে নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়,‘‘চার কাউন্সিলারের নাগরিকত্ব নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই তদন্ত শেষ হলেই দিল্লিকে সবিস্তারে তা জানানো হবে।’’

স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, ১৯৫০ সালের চুক্তির সাত নম্বর ধারা অনুযায়ী নেপালের যে কোনও নাগরিক এ দেশে এসে বসবাস, কাজ করতে বা সম্পত্তি কিনতে পারে। তার জন্য কোনও ভিসা নিতে হয় না। অনুমতিও নয়। কিন্তু তা বলে তাদের নাগরিকত্ব বদলানোর কথা নয়। কিন্তু এক বার নেপাল থেকে এ দেশে এসে বসবাস শুরু করলে তারপর নাগরিকত্বও পেয়ে যাচ্ছে তারা।

আরও পড়ুন: মুকুল দরবারে কারা, কড়া নজর

নেপালিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দার্জিলিং-শিলিগুড়ি এলাকায় এসে বসবাস শুরু করছে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, সুখিয়াপোখড়ি এলাকায় নকল স্কুল সার্টিফিকেট বানানোর একটি চক্র এদের মদত করে। এ ছাড়া সরকার জেনেছে, বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও(যারা ভোটার তালিকায় নাম তোলেন)-দের একাংশ প্রথমে স্থানীয় কোনও স্থায়ী নাগরিকের ‘ছেলে-মেয়ে’ হিসাবে ভোটার তালিকায় নেপালি আগন্তুকদের নাম তোলার ব্যবস্থা করেন। পরের বার বাবার নাম ভুল হয়েছে বলে তা বদলে দেন। এ ভাবেই খুব সহজেই ভোটার তালিকাতেও নাম তোলানোর কাজ চলছে। স্বরাষ্ট্র কর্তারা জানাচ্ছেন, ১১ গোর্খা রেজিমেন্টে নেপালিরা যোগ দিতে পারেন। কিন্তু ১০-১৫ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করার পর তারা নেপালে ফিরে না গিয়ে দার্জিলিংয়ের আশপাশেই থেকে যাচ্ছেন। একই ভাবে চা বাগানেও প্রচুর কর্মী আসে নেপাল থেকে।

এক কর্তা জানান, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ের বাসিন্দাদের অনেকেই নেপালে গিয়ে বিয়ে করে আসেন। তাতেও এ রাজ্যে নেপালি জনসংখ্যা বাড়ছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ে স্ত্রী-পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত রাজ্যের চেয়ে ঢের বেশি হওয়ারও এটি একটি কারণ বলে মনে করছেন কর্তারা। সব মিলিয়ে পাহাড়ে ও শিলিগুড়ি চত্বরে গত তিন দশকে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে তা মূলত নেপাল থেকে অনুপ্রবেশের ফল বলেই মনে করছে নবান্ন। সেই কারণে তথ্য-প্রমাণ পেশ করেই ভারত-নেপাল সীমান্ত চুক্তির পুর্নমূল্যায়ন চাইবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। যাতে অন্তত অবাধে নেপালি অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়।

Nabanna Nepali Population Darjeeling Kalimpong Morcha Gorkhaland দার্জিলিং নেপালি গোর্খাল্যান্ড নবান্ন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy