Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিঙ্গুরে জমি ফেরাতে আজ প্রশাসনিক বৈঠক মমতার

তাঁর দাবি ছিল, ৪০০ একর ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সিঙ্গুরের টাটা গোষ্ঠীর হাতে থাকা প্রায় হাজার একর জমিই কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

উচ্ছ্বাস তৃণমূলকর্মীদের। বুধবার সিঙ্গুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

উচ্ছ্বাস তৃণমূলকর্মীদের। বুধবার সিঙ্গুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

তাঁর দাবি ছিল, ৪০০ একর ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সিঙ্গুরের টাটা গোষ্ঠীর হাতে থাকা প্রায় হাজার একর জমিই কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

বুধবার দুপুরে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের খবর পৌঁছতেই নবান্নের চোদ্দো তলায় খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষণ পরে তিনি যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি, তাঁর চোখেমুখেও তখন স্পষ্ট স্বস্তির ছাপ। এবং সেটাকে কোনও ভাবে আড়াল করার চেষ্টা না করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এক ঐতিহাসিক জয়। আদালত যা রায় দিয়েছে, তা আমরা মানব।’’

কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে কোন পথে, কী ভাবে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে— সেটাই এখন সরকারের গুরুদায়িত্ব। তাই রোম যাওয়ার আগে আজ, বৃহস্পতিবারই প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা একটি স্ট্র্যাটেজিক বৈঠক করব।’’

আদালতের নির্দেশ

ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির জন্য পূর্বতন বাম সরকার সিঙ্গুরে ৯৯৭.১১ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল ২০০৬ সালে। দশ বছর পর, বুধবার সেই অধিগ্রহণকেই ‘বেআইনি’ বলে ঘোষণা করে পুরো জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। কী ভাবে তা হবে, তা-ও বলা হয়েছে রায়ে। ‘অধিগ্রহণের পরে যে হেতু জমির চরিত্র বদল হয়েছে, তাই আমরা নির্দেশ দিচ্ছি, রায়ের প্রতিলিপি পাওয়ার দশ সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সার্ভে সেটলমেন্ট বিভাগ লে-আউট প্ল্যান, অন্যান্য নথি, গ্রামের মানচিত্রের সাহায্যে সমীক্ষা করে অধিগৃহীত জমির মৌজা চিহ্নিত করবে, যাতে মালিক/কৃষকদের তাঁদের নির্দিষ্ট জমি ফিরিয়ে দেওয়া যায়। রায় হাতে পাওয়ার বারো সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে’— বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, যাঁরা জমির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, রাজ্য সরকার তা ফিরিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, ওই জমি দশ বছর তাঁরা ভোগ করতে পারেনি। পাশাপাশি, যারা এত দিন ক্ষতিপূরণ নেননি তাঁরাও তা নিতে পারবেন।

নবান্নের কর্তারা বলছেন, আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, তা মানতেই হবে। কিন্তু কাজটা সহজ নয়। জটিলতা অনেক।

মুছে গিয়েছে আল

সাধারণত গ্রামে চাষের জমির সীমানা চিহ্নিত হয় আল দিয়ে। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘অধিগ্রহণের পরে আল-এর সীমানা ভেঙে গিয়েছে। ফলে, যার যে জমি ছিল, সেটা মাপজোক করে খুঁজে বের করা এবং তা ফেরত দেওয়া রীতিমতো কঠিন কাজ। প্রায় অসম্ভবও। এই নিয়ে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতাও দেখা দিতে পারে।’’ তাঁর মতে, ‘‘প্রশাসনিক স্তরের চেয়েও এই বিষয়ে রাজনৈতিক স্তরে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি। না-হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।’’

চরিত্র বদল

কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে দশ বছর আগে। তার পরেই শুরু হয় জমির চরিত্র বদলের কাজ। মাটি, ছাই এবং অন্যান্য সামগ্রী ফেলে পুরো চাষের জমি বেশ খানিকটা
উঁচু করা হয়। প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সিঙ্গুর কারখানার জমির ভিতরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়। রয়েছে লম্বা খাল। এই জমির একটি অংশ জুড়ে রয়েছে প্রস্তাবিত গাড়ি কারখানার ‘শেড’। আবার, এখানেই রয়েছে পুরনো দু’একটি কারখানার কাঠামো। আমলাদের একাংশের মতে, এখন আর ওখানে চাষের জমি প্রায় নেই বললেই চলে। যেটুকু ফাঁকা রয়েছে, তাও জংলা-আগাছায় ভরে গিয়েছে। তাই সেই জমি ফিরে পেলেও চাষ করা গেলে ওই জমি কৃষকের কী কাজে লাগবে, সেখান থেকে কী সুফল পাবেন
কৃষক— সেই প্রশ্ন থাকছে।

ক্ষতিপূরণের টাকা

সিঙ্গুরের প্রায় বেশির ভাগ জমির মালিক ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন। যাঁরা নেননি, তাঁদের টাকা আসবে কোথা থেকে? নবান্নের কর্তারা জানান, যাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি, তাঁদের টাকা জমা ছিল আদালতের কাছে। পরে তা গচ্ছিত রয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসনের কাছে। তাই আদালতের নির্দেশ মতো ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কোষাগারে হাত
দিতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata TMC Singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE