রাধামণি বাজারে রাস্তা অবরোধ চাষিদের। —নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে পথে নামলেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার সকালে তমলুকের রাধামণিতে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে পথ অবরোধ করেন এক হাজারেরও বেশি চাষি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের জেরে ওই দুই রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বাস, পণ্যবাহী লরি-সহ কয়েকশো গাড়ি। তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ নাকাল হন বহু যাত্রী। দিঘাগামী ও দিঘা ফেরত পর্যটকেরাও আটকে পড়েন। শেষে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
যে চাষিরা পথ অবরোধ করেন, তাঁরা সকলেই তমলুক মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা। ‘কৃষক সংগ্রাম কমিটি’র তরফে এ দিনের কর্মসূচিতে সামিল হন তাঁরা। সংগঠনের নেতা বলাই নায়েক জানান, তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীন বিভিন্ন কৃষি সমবায় সমিতি এবং তমলুক সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে বছর কয়েক আগে ঋণ নিয়েছিলেন তমলুক মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের ধান, পান, ফুল চাষিরা। ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষের বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ঘোষণা করেছিলেন, ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনাদায়ী কৃষিঋণ মকুব করে দেওয়া হবে। ফলে, ওই সময়ের মধ্যে ঋণ নিয়েছেন, এমন কৃষকেরা ঋণ মকুবের আশায় ছিলেন। কিন্তু বলাইবাবুর অভিযোগ, ওই দুই সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কৃষকদের ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করেননি। উল্টে বকেয়া ঋণ সুদ-সহ আদায়ের জন্য নোটিস দিয়েছেন। শুধু তাই নয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এর ফলে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। বলাইবাবুর দাবি, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ঋণ মকুবের আর্জি জানালেও সুরাহা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা জাতীয় সড়কে অবরোধ করেছি।”
এ দিন অবরোধে সামিল হওয়া তমলুক ব্লকের পুতপুতিয়া গ্রামের হৃষিকেশ কুইলা, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের পঞ্চানন সিংহ , পাঁশকুড়ার নোরাই গ্রামের মধুসূদন প্রামাণিকরা বলেন, “আমরা ২০০৭ সালের আগে কৃষি ঋণ নিয়েছিলাম। কিছু অংশ শোধও করেছিলাম। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ মকুবের আশায় ছিলাম। কিন্তু সেই তা মকুব করা হয়নি। উল্টে সুদ-সহ ঋণ শোধের জন্য বার বার নোটিস দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই কেন্দ্রের ঘোষণা মতো আমাদের বকেয়া ঋণ মকুব করা হোক।”
তমলুক সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নিকুঞ্জ মান্না বলেন, “নিয়ম মেনেই বকেয়া ঋণ আদায়ে আমরা নোটিস দিয়েছি। তবে আন্দোলনকারী কৃষকদের বক্তব্য শোনা হবে। আগামী ১০ এপ্রিল বোর্ড মিটিংয়ের আগে ওঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে।” নিকুঞ্জবাবু আরও জানান, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণের জেরে ব্যাঙ্কের প্রায় ১০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি বছরে লোকসানের মাত্রা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতেও কৃষকদের দাবি মেনে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে কৃষিঋণের সুদের উপর ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যাম কমলেশ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “নোটিস পাঠিেয়ে জুলুমের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা বরং পাঁশকুড়া ও তমলুকের দুর্গত এলাকার চাষিদের জন্য ঋণ শোধের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দিয়েছি।”
এ দিকে, এ দিন অবরোধের জেরে বহু মানুষের ভোগান্তি হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ধরে অবরোধের জেরে হলদিয়া-মেচাদা জাতীয় সড়ক ও তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে কয়েকশো গাড়ি আটকে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তমলুক থানার ওসি কৃষ্ণেন্দু প্রধান পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকা। প্রশাসনের সঙ্গে অবরোধকারীদের আলোচনার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে দুপুর সাড়ে ১২টা অবরোধ ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy