একসময় সমুদ্রতীরের বাতিস্তম্ভের আলো পথ দেখাত এগরায় আসা বাণিজ্যতরীকে। বর্তমান এগরা শহরের ২-৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুডিতে মুক্তেশ্বর মন্দিরের পাশে আজও সেই বাতিস্তম্ভের অস্তিত্ব রয়েছে। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই বাতিস্তম্ভ আজ ভগ্নপ্রায়। জনশ্রুতি, আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে সমুদ্রের জল ঢেউ খেলত এগরার কোলে। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের কলরবে তখন মুখরিত হত উপকূলবর্তী এলাকা। সমুদ্রের ধারেই বসত বাজার। এগরা নামের উৎপত্তি অগরাপত্তনম থেকে। অগরাপত্তনমের অর্থও বাজার। জেলার অন্যতম সমৃদ্ধ এই বাজারে তখন জেলার নানা প্রান্ত থেকে লোকও আসত। এগরা থেকে মূলত লবণ, বিভিন্ন শস্য ও মৎস্যের বাণিজ্য হত বলে জানা যায়। কথিত আছে, পরবর্তী কালে বালিতে ভরাট হয়ে সমুদ্র ক্রমশ পিছু হঠে। বদলে যায় এগরার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ধারাও।
এগরা আগে ওড়িশার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রবীণ ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫৬০-১৫৬৪ সালের মধ্যে ওড়িশার গঙ্গো বংশীয় রাজা মুকুন্দদেবের আমলে এগরার সামন্ত রাজা দিব্যসুন্দর করমহাপাত্রের সহযোগিতায় সমুদ্র উপকুলে পুরী মন্দিরের স্থাপত্যের অনুকরণে হট্টনাগর শিবমন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। পশ্চিমমুখী মূল মন্দিরের প্রধান অংশ গর্ভগৃহে ভূমি থেকে ১৭ ফুট নিচে রয়েছে শিবলিঙ্গ। এরপর জগমোহন ও বিষ্ণু মন্দির।
একদা শিবরাত্রি উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বসত জমজমাট মেলার আসর। ইংরেজ ঐতিহাসিক এল এস এস ও মোলি সাহেবও তাঁর গ্রন্থে এই মেলার নাম উল্লেখ করেছেন। এগরা মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে এই মেলা তার জৌলুস হারিয়েছে। বাসিন্দাদের মতে, এগরা মেলাই শহরের সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে। ১৯৮৭ সালে এগরা মেলার সূচনা হয়। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক স্বপনকর মহাপাত্র বলেন, “আগের চেয়ে মন্দিরের কৌলীন্য অনেক কমে গিয়েছে। মন্দিরটির আশু রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।” তবে সরকারি সাহায্যের বিষয়ে তাঁর আক্ষেপ, “সরকার অধিগৃহীত মন্দিরগুলির অবস্থা দেখে এটা বুঝেছি, কোনওমতেই মন্দিরটিকে সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি নই। আমরাই যতটা সম্ভব মন্দিরটির ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করব।”