—ছবি : সংগৃহীত
করম গাছের ডাল কোথায় গেলে পাওয়া যেতে পারে, খোঁজ করছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বিডিও। পরে জানতে পারেন, অফিস চত্বরেই ওই গাছ রয়েছে। জেনে আশ্বস্ত হন তিনি। ওই বিডিও বলছিলেন, ‘‘সোমবার করম পুজো। সরকারি উদ্যোগে ব্লকেও পুজো হবে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’’ সরকারি উদ্যোগে আগেও দিনটি পালন হয়েছে। এ বার আরও ধুমধাম করে পালিত হবে।
কুড়মি সংগঠনগুলির দাবি মেনে এ বারই প্রথম করম পুজোয় পূর্ণ দিবস ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তারপর এখন সরকারি উদ্যোগে করম পুজোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করল আদিবাসী উন্নয়ন দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের ১৬টি জেলার জন্য সব মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য যেমন বরাদ্দ হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, ঝাড়গ্রামের জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। ১৬টি জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি বরাদ্দ হয়েছে জলপাইগুড়ির জন্য, ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি ব্লক রয়েছে, ৩টি মহকুমা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার সব ব্লক ও মহকুমাতেই সরকারি উদ্যোগে করম পুজো হবে। উৎসব পালিত হবে। দিনটি পালনে জেলার ২১টি ব্লকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। ৩টি মহকুমার জন্যও বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। জেলাস্তরেও দিনটি পালিত হবে। বরাদ্দ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ছুটির দিনেই ব্লকে ব্লকে দিনটি পালিত হবে। জেলার এক বিডিও বলেন, ‘‘রীতি মেনেই করম পুজো করা হবে।’’
কলকাতা বা শহরাঞ্চলে করম পুজোর তেমন প্রচলন নেই। তবে রাজ্যের একটা বড় অংশে করম পুজো পালিত হয় ধুমধাম করে। উৎসব ঘিরে মেলা বসে গ্রামাঞ্চলে। মূলত মানভূম এলাকায়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অংশে এই উৎসব দেখা যায়। জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অংশেও করম পুজোর প্রচল রয়েছে। পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশীতে পালিত হয় এই উৎসব। সেই মতো এ বার পুজো হবে ২৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার। কুড়মিদের অন্যতম প্রধান কৃষি ভিত্তিক গণ উৎসবই হল করম। করম গাছের ডাল ঘিরে এই পুজো মূলত প্রকৃতি বন্দনা। ধান-সহ যাবতী শস্যের উৎপাদ যাতে ভাল হয়, সেই কামনাতেই এই পুজো করা হয়।
ওই দিন পূর্ণ ছুটি ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। করম পুজো উপলক্ষে বন্ধ থাকবে সমস্ত সরকারি স্কুল, কলেজ, অফিস। এর আগে করম পুজো ‘সেকশনাল হলিডে’ ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ‘সেকশনাল হলিডে’ হিসেবে দিনটিকে ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থাৎ, ওই উৎসব যাঁরা পালন করেন, শুধু তাঁদেরই ছুটি থাকত। দিনটিকে সাধারণ ছুটির আওতায় আনার দাবি ছিল কুড়মি সংগঠনগুলির। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে জয়ের পরে দিনটিকে সাধারণ ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে জাতিসত্তার দাবিতে সরব হয়েছিল কুড়মিদের সামাজিক সংগঠনগুলি। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে নির্দল হিসেবে ভোটে প্রার্থীও দেয় তারা। সে ভাবে দাগ কাটতে না পারলেও ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার মতো জেলায় পঞ্চায়েত স্তরে বেশ কয়েকজন কুড়মি প্রার্থী জিতে যান। ভোটের পরেই করম পরবে পূর্ণ দিবস ছুটির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে জানিয়ে দেন, আদিবাসী-কুড়মি ভাগাভাগি তিনি হতে দেবেন না। এ বার লোকসভা ভোটের আগে সরকারি ভাবে করম পরব পালনের নির্দেশ দিয়ে সেই ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা হল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান। অনেক দিন ধরেই সরকারি ভাবে আদিবাসী দিবস পালিত হয়। রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।ফলে, কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির আবহে সরকারি উদ্যোগে করব উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে কুড়মি ও আদিবাসী, দুই আবেগই ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল সরকার। উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলের কুড়মি ও আদিবাসী জনজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন পেয়েছে তৃণমূল।
মন্ত্রী তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কথা রেখেছেন। আমাদের সমাজকে মর্যাদা দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন। করমে সর্বজনীন ছুটি ঘোষণা করেছে আমাদের সরকার। সরকারি উদ্যোগে দিনটি পালন হবে। সমাজের সবাই খুব খুশি।’’ পঞ্চায়েত ভোটে শালবনিতে জেলা পরিষদের পদ্ম প্রার্থী হয়েছিলেন বিমান মাহাতো। বিজেপি নেতা বিমান বলছেন, ‘‘আন্দোলনের চাপে পড়েই পূর্ণ ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy