Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
আধপেটা খেয়েই বাঁচার লড়াই

গ্যাস-দুর্ঘটনায় নিঃস্ব পরিবার, মেলেনি সাহায্য

২০১৫ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে পরিষেবায় গাফিলতির মামলা দায়ের করেন সন্দীপবাবু। গত সোমবার আদালত ওই মামলায় সংশ্লিষ্ট গ্যাস ডিলার ও বিমা সংস্থাকে ১৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এক আইজীবীর কথায়, ‘‘সন্দীপবাবুরা যেহেতু ওই গ্যাস ডিলারের ক্রেতা ছিলেন।

অপেক্ষা: স্বামীর ছবি নিয়ে শুক্লা মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: স্বামীর ছবি নিয়ে শুক্লা মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৩০
Share: Save:

রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে গ্রাহকের পরিজনেদের মৃত্যুর ঘটনায় ডিলারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। প্রায় তিন বছর আগে খড়্গপুর শহরের এই ঘটনায় পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল সিলিন্ডার সারাতে আসা মেকানিকেরও। তাঁর পরিজনেরা অবশ্য এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। গ্যাস ডিলারের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মেকানিক দেবাশিস মজুমদারের পরিজনেরা। সেই মামলার নিষ্পত্তির দিকেই তাকিয়ে স্বামীর মৃত্যুতে দিশাহারা শুক্লা মজুমদার।

একমাত্র রোজগেরে দেবাশিসবাবুর মৃত্যুর পরে ছেলে সনৎকে নিয়ে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন শুক্লাদেবী। তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গোলবাজারে নিজেদের দোকান ভাড়া দিয়ে মাসে যে দেড় হাজার টাকা পান, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। শুক্লাদেবী বলছেন, “স্বামীর মৃত্যুতে আমরা সবদিক থেকে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। গ্যাস ডিলার প্রথম দেড় বছর মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিল। পরে সেই টাকাও দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’’

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর খড়্গপুরের নিমপুরায় সন্দীপ সিংহের বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন সন্দীপবাবুর বাবা তেজপাল সিংহ, মা অসীমা কৌওর ও ভাই কপিল সিংহ। গুরুতর জখম হয়েছিলেন ছেলে আকৃত সিংহ। খড়্গপুরে ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিলার ‘ঊষা গ্যাস এজেন্সি’-র গ্রাহক ছিলেন সন্দীপবাবুরা। ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর ওই সংস্থা থেকে তাঁর বাড়িতে সিলিন্ডার এসেছিল। ১৩ নভেম্বর ওভেনের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরই দেখা যায়, সিলিন্ডার কাজ করছে না। সন্দীপবাবুরা ডিলারকে সে কথা জানালে দেবাশিসবাবুকে পাঠানো হয়। তিনি মেরামতির কাজ করার সময়ই সিলিন্ডার ফেটে বাড়িতে আগুন ধরে যায়। দ্বগ্ধ হন মেকানিক-সহ ৫জন। পরে হাসপাতালে চারজন মারা যান।

২০১৫ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে পরিষেবায় গাফিলতির মামলা দায়ের করেন সন্দীপবাবু। গত সোমবার আদালত ওই মামলায় সংশ্লিষ্ট গ্যাস ডিলার ও বিমা সংস্থাকে ১৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এক আইজীবীর কথায়, ‘‘সন্দীপবাবুরা যেহেতু ওই গ্যাস ডিলারের ক্রেতা ছিলেন। তাই তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘটনায় মৃত দেবাশিস মজুমদার ওই ডিলারের মেকানিক ছিলেন। তাই তাঁর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি এই আদালতে বিচারযোগ্য নয়।’’

ক্ষতিপূরণের আশায় বছর দেড়েক আগে গ্যাস ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শুক্লাদেবীও। সেই মামলা এখনও চলছে। শুক্লাদেবীর আইনজীবী কিঙ্কর বসু বলছেন, “দেবাশিস মজুমদার যেহেতু ওই ডিলারের কর্মী ছিলেন তাই মামলাটি ‘এমপ্লয়িজ কমপেনসেশন’ আদালতে রুজু করেছি। মামলা চলছে।” ডিলার কেন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছেন না? গ্যাস ডিলার গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “দেবাশিস আমার ভাইয়ের মতো ছিল। ওঁর মৃত্যুর পরে আমি ওঁর স্ত্রীকে মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতাম। কিন্তু ওনার নিজের কাজ খোঁজার কোনও উদ্যোগ নেই। তাই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উনি তো মামলা করেছেন। তাই এখন আইনই শেষ কথা বলবে।”

শুক্লাদেবী বলছেন, ‘‘ছেলের চোখে গবেষক হওয়ার স্বপ্ন। অভাবে ছেলের পড়াশোনা চালাতেই হিমসিম খাচ্ছি। আমিও স্বপ্ন দেখি অভাবের সংসারে আলো জ্বলবে। বাধা কবে কাটবে কে জানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE